০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২১) ট্রাম্পের শান্তির মিথ: শক্তির প্রদর্শন, সংযমের নয় ওশেনিয়ায় নতুন রেকর্ড: টোয়াইসের ট্যুরে কেপপের ছাদ আরও উঁচু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫০) মিষ্টি না অতিমিষ্টি? মার্কিন শরতের এই জনপ্রিয় পানীয় ইউরোপে বিভাজন সৃষ্টি করেছে প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৯) দিল্লিতে তিন বছরে সবচেয়ে শীতল ও বৃষ্টিপূর্ণ অক্টোবর, দূষণের ঘন কুয়াশায় শীতের শুরুতেই চিন্তা অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প ইনসাইড আউট ২’: ইতিহাসের শীর্ষে পিক্সার, ফিরে পেল আস্থা ‘দ্য লাইন অব বিউটি’–তে আশির দশকের রাজনীতি, সমকামী সংস্কৃতি ও শ্রেণি-অহমিকার মুখোমুখি লন্ডন মঞ্চ

অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প

ভূমিকায় স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স যেভাবে অশুভ শক্তির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা দর্শকদের গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছিল। কিন্তু পর্দায় ফুটে ওঠা সেই ভয়ানক চরিত্রের বাইরেও ছিল তার নিজের জীবনের এক গভীর অন্ধকার—নিজের অতীত ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুদ্ধ। ওয়েলসের এক নিঃসঙ্গ শৈশব, নির্যাতন ও অবহেলার স্মৃতি, আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে অ্যালকোহলের ভয়াবহ বন্ধন—সব মিলিয়ে তিনি এক দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পেরিয়ে এসেছেন।


স্মৃতিকথা: জীবনের বিজয়গাথা

এই কঠিন জীবনের অভিজ্ঞতাই এখন হপকিন্সের আত্মজীবনী “উই ডিড ওকে, কিড”-এর মূল প্রেরণা। বইটির শিরোনাম যেন তার ৮৭ বছরের জীবনের সারাংশ—একটি জীবনের রায়, যেখানে বেদনা, পরাজয় আর আত্মজয়ের মিশেলে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন শান্তির পথে।

নিউজউইকের সঙ্গে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হপকিন্স খোলামেলাভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো মুহূর্তটির কথা।


১৭ বছরের এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা

হপকিন্স জানান, তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের বাবা—একজন বেকারির কর্মীর কাছ থেকে এমন একটি কথার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা তাকে বদলে দেয়। তিনি বলেন, “আমার বাবা একদিন বললেন, ‘তোর কিছু হবে না। সম্পূর্ণ নিরাশাজনক।’ আমি তখন এক পা পিছিয়ে বলেছিলাম, ‘একদিন আমি তোমাকে দেখাব।’ তখন তিনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, ‘আমি আশা করি, তুমি পারবে।’ সেই মুহূর্তেই যেন আমার ভিতর কিছু বদলে গেল। আমি তখন পর্যন্ত নিজেকে বোকা ভাবার খেলা খেলছিলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে বুঝলাম, আমার রাগ, ক্ষোভ, আর দমন করা আবেগগুলো আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।”


ক্রোধ থেকে শক্তিতে রূপান্তর

শৈশবের নিঃসঙ্গতা ও বারবার অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া সেই ক্রোধই পরবর্তীতে তার সৃষ্টিশীল শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “আমি সেই রাগকে থামাইনি, বরং তা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছি। সেই রাগই আমাকে সামনে ঠেলে দিয়েছে।”

In his new memoir We Did OK, Kid, Sir Anthony Hopkins looks back on his long journey from a difficult childhood to becoming a legendary actor with honesty and calm reflection. “I

এই আত্মনিয়ন্ত্রণই হপকিন্সকে একদিকে গড়েছে শক্ত মানসিকতার মানুষ হিসেবে, অন্যদিকে পরিণত করেছে এক অসাধারণ অভিনেতা, সুরকার ও চিত্রশিল্পীতে।


অ্যালকোহলের সঙ্গে যুদ্ধ ও মুক্তি

তবে জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে অ্যালকোহলের সঙ্গে তার লড়াই ছিল এক ভয়ানক অধ্যায়। এই নেশা ধীরে ধীরে তার প্রতিভাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জীবনের প্রতি নতুন উপলব্ধির মাধ্যমে তিনি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান। এখন তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমি আমার ভেতরের অন্ধকারকে চিনেছি, তাই আজ আলোকে ভালোবাসতে শিখেছি।”


এক পরিপূর্ণ জীবনের বার্তা

স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স আজও কাজ করছেন, সৃষ্টি করছেন, সুর দিচ্ছেন, এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার জীবনের গল্প কেবল এক অভিনেতার নয়—এটি এক সংগ্রামী আত্মার জয়গাথা।
তার নতুন বই “উই ডিড ওকে, কিড” যেন আমাদেরও মনে করিয়ে দেয়—সব হারিয়েও আবার শুরু করা যায়, যদি নিজের ভেতরের আলোকে জাগিয়ে তোলা যায়।

দীর্ঘ অন্ধকারের পর হপকিন্স খুঁজে পেয়েছেন নিজের প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস। তার জীবনের বার্তা একটাই—“জেগে ওঠো এবং বাঁচো।”
এই প্রজ্ঞাই তাকে আজ এক অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষে পরিণত করেছে, যিনি নিজের অতীতের ক্ষতকে রূপান্তরিত করেছেন শিল্পে, সুরে ও শান্ত জীবনে।


#অ্যান্থনি_হপকিন্স #জীবনের_গল্প #আত্মজীবনী #অনুপ্রেরণা #সিনেমা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২১)

অন্ধকার থেকে আলোয়: স্যার অ্যান্থনি হপকিন্সের আত্মজয়ের গল্প

০১:০০:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

ভূমিকায় স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স যেভাবে অশুভ শক্তির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা দর্শকদের গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছিল। কিন্তু পর্দায় ফুটে ওঠা সেই ভয়ানক চরিত্রের বাইরেও ছিল তার নিজের জীবনের এক গভীর অন্ধকার—নিজের অতীত ও অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুদ্ধ। ওয়েলসের এক নিঃসঙ্গ শৈশব, নির্যাতন ও অবহেলার স্মৃতি, আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে অ্যালকোহলের ভয়াবহ বন্ধন—সব মিলিয়ে তিনি এক দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পেরিয়ে এসেছেন।


স্মৃতিকথা: জীবনের বিজয়গাথা

এই কঠিন জীবনের অভিজ্ঞতাই এখন হপকিন্সের আত্মজীবনী “উই ডিড ওকে, কিড”-এর মূল প্রেরণা। বইটির শিরোনাম যেন তার ৮৭ বছরের জীবনের সারাংশ—একটি জীবনের রায়, যেখানে বেদনা, পরাজয় আর আত্মজয়ের মিশেলে তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন শান্তির পথে।

নিউজউইকের সঙ্গে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে হপকিন্স খোলামেলাভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানো মুহূর্তটির কথা।


১৭ বছরের এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা

হপকিন্স জানান, তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের বাবা—একজন বেকারির কর্মীর কাছ থেকে এমন একটি কথার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা তাকে বদলে দেয়। তিনি বলেন, “আমার বাবা একদিন বললেন, ‘তোর কিছু হবে না। সম্পূর্ণ নিরাশাজনক।’ আমি তখন এক পা পিছিয়ে বলেছিলাম, ‘একদিন আমি তোমাকে দেখাব।’ তখন তিনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, ‘আমি আশা করি, তুমি পারবে।’ সেই মুহূর্তেই যেন আমার ভিতর কিছু বদলে গেল। আমি তখন পর্যন্ত নিজেকে বোকা ভাবার খেলা খেলছিলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে বুঝলাম, আমার রাগ, ক্ষোভ, আর দমন করা আবেগগুলো আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না।”


ক্রোধ থেকে শক্তিতে রূপান্তর

শৈশবের নিঃসঙ্গতা ও বারবার অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া সেই ক্রোধই পরবর্তীতে তার সৃষ্টিশীল শক্তির উৎস হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, “আমি সেই রাগকে থামাইনি, বরং তা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছি। সেই রাগই আমাকে সামনে ঠেলে দিয়েছে।”

In his new memoir We Did OK, Kid, Sir Anthony Hopkins looks back on his long journey from a difficult childhood to becoming a legendary actor with honesty and calm reflection. “I

এই আত্মনিয়ন্ত্রণই হপকিন্সকে একদিকে গড়েছে শক্ত মানসিকতার মানুষ হিসেবে, অন্যদিকে পরিণত করেছে এক অসাধারণ অভিনেতা, সুরকার ও চিত্রশিল্পীতে।


অ্যালকোহলের সঙ্গে যুদ্ধ ও মুক্তি

তবে জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে অ্যালকোহলের সঙ্গে তার লড়াই ছিল এক ভয়ানক অধ্যায়। এই নেশা ধীরে ধীরে তার প্রতিভাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছিল। কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণ ও জীবনের প্রতি নতুন উপলব্ধির মাধ্যমে তিনি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পান। এখন তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমি আমার ভেতরের অন্ধকারকে চিনেছি, তাই আজ আলোকে ভালোবাসতে শিখেছি।”


এক পরিপূর্ণ জীবনের বার্তা

স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স আজও কাজ করছেন, সৃষ্টি করছেন, সুর দিচ্ছেন, এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার জীবনের গল্প কেবল এক অভিনেতার নয়—এটি এক সংগ্রামী আত্মার জয়গাথা।
তার নতুন বই “উই ডিড ওকে, কিড” যেন আমাদেরও মনে করিয়ে দেয়—সব হারিয়েও আবার শুরু করা যায়, যদি নিজের ভেতরের আলোকে জাগিয়ে তোলা যায়।

দীর্ঘ অন্ধকারের পর হপকিন্স খুঁজে পেয়েছেন নিজের প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস। তার জীবনের বার্তা একটাই—“জেগে ওঠো এবং বাঁচো।”
এই প্রজ্ঞাই তাকে আজ এক অনুপ্রেরণাদায়ী মানুষে পরিণত করেছে, যিনি নিজের অতীতের ক্ষতকে রূপান্তরিত করেছেন শিল্পে, সুরে ও শান্ত জীবনে।


#অ্যান্থনি_হপকিন্স #জীবনের_গল্প #আত্মজীবনী #অনুপ্রেরণা #সিনেমা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট