ভারতের আদানি পাওয়ার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না হলে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। হঠাৎ পাওয়া এ সতর্কবার্তায় চাপে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।
চুক্তি ও বিতর্কের পটভূমি
আদানি পাওয়ারের ১,৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার গড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত। এটি মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির উদ্দেশ্যে নির্মিত।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও আদানির মধ্যে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই হয়। তবে চুক্তির শর্ত নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংস্থা বলছে, ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ যথাযথভাবে সুরক্ষিত হয়নি এবং বেশ কিছু সিদ্ধান্ত একতরফা ছিল।
এছাড়াও, আদানির কর-ছাড়, অনুদান এবং বিল নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, চুক্তি নির্ধারিত সময় ও প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে যাচাই না করেই তা কার্যকর করা হয়।

বর্তমান সংকট: বকেয়া ও সরবরাহ বন্ধের হুমকি
আদানি পাওয়ারের দাবি, বাংলাদেশ পিডিবির কাছে প্রায় ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে, যার মধ্যে ২৬২ মিলিয়ন ডলার আদানি কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত বকেয়া হিসেবে দেখিয়েছে।
তাদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, চুক্তির ধারা অনুযায়ী এই বিল পরিশোধ না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার তারা রাখে।
একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, সরবরাহ বন্ধ থাকলেও “ক্যাপাসিটি পেমেন্ট” বা সক্ষমতা সংরক্ষণের অর্থ আদায় করার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ও সরকারী অবস্থান
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, “চিঠি আমরা পেয়েছি। এখন বিষয়টি পরীক্ষা করছি, প্রয়োজনে আলোচনায় বসব।”
এর আগেও আদানি পাওয়ার সরবরাহ কমানোর হুমকি দিয়েছিল। গত বছর নভেম্বর মাসে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়ার কারণে তারা সরবরাহ প্রায় ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছিল।
এদিকে সরকারের এক বিশেষ কমিটি চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়ন করছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি
যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ বা সীমিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের শিল্প খাত ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে পারে।
এ ধরনের সংকট আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও আর্থিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
চুক্তি গোপনভাবে বা অসমভাবে সম্পাদিত হলে ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুৎ নিরাপত্তা ও ভোক্তা খরচ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি অর্থনৈতিক ইস্যু নয়—বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির দিক থেকেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরবর্তী দিনগুলোর দৃষ্টিপাত
১০ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ হবে কি না, সেটিই এখন প্রধান প্রশ্ন।
আদানি কি সত্যিই ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করবে, নাকি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসবে—তা সময়ই বলে দেবে।
সরকার কি বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছে?
যদি বিষয়টি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যায়, তবে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
জনগণ ও শিল্পখাত ইতিমধ্যেই নতুন সংকটের আশঙ্কায় রয়েছে।
#বাংলাদেশ_বিদ্যুৎ #আদানি_পাওয়ার #পিডিবি #জ্বালানি_সংকট #বিদ্যুৎ_চুক্তি #অর্থনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















