০৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
ফাইজার বনাম নোভো: স্থূলতা-বিরোধী ওষুধের বাজারে আধিপত্যের লড়াই আদালতে গিয়ে গড়াল ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে সুপ্রিম কোর্টের বাধা নেই: সরকার জানাল ‘মেনে নিতে হবে’ ইসরায়েলকে সমর্থন অব্যাহত রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অসম্ভব: খামেনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোরে পালান্টিয়ারের রাজস্ব পূর্বাভাস: বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছাড়াল সিএনএন জরিপে ডেমোক্র্যাটদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, ট্রাম্পের অনুমোদন রেটিং সর্বনিম্ন পর্যায়ে গাজার যুদ্ধের বেদনাকে ছবিতে বন্দি করা মোটাজ আজায়িজা, এখন যুক্তরাষ্ট্রে মানবতার আলো খুঁজছেন এলিজাবেথ টেলরের ১৯৬৬ সালের টিভি বিস্ফোরণ: ভালোবাসা, ক্রোধ ও খ্যাতির এক গল্প যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ ওবামাকেয়ার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন: খরচ বাড়ছে, সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে?

সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের দুটি নতুন অঞ্চলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) সোমবার জানিয়েছে, দারফুরের প্রধান শহর এল ফাশার এবং দক্ষিণ করদোফানের কাদুগলি শহরে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা পরিস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বীকৃত এই সংস্থা জানায়, চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সুদান এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।


দীর্ঘ অবরোধে বিচ্ছিন্ন এলাকা, তীব্র খাদ্যসংকট

দারফুরের এল ফাশার শহর গত ১৮ মাস ধরে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) এর অবরোধে রয়েছে। শহরটিতে খাদ্য ও জরুরি সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

গত সপ্তাহে RSF বাহিনী শহরটি দখল করে নেয় এবং তীব্র হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন।

দক্ষিণ করদোফানের কাদুগলি শহরও বহু মাস ধরে অবরুদ্ধ। এখানেও হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে, কারণ RSF তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সুদানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আরও এলাকা দখলের চেষ্টা করছে।


আইপিসি রিপোর্ট: ‘জীবিকা সম্পূর্ণ ধ্বংস’

IPC-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল ফাশার ও কাদুগলিতে “জীবিকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস, অনাহার, মারাত্মক অপুষ্টি ও মৃত্যু” চলছে।

দুর্ভিক্ষ ঘোষণার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো এলাকায় প্রতি ১০,০০০ জনে অন্তত দুজন বা পাঁচ বছরের কম বয়সী চারজনের মৃত্যু হলে, ২০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যাভাব ও অনাহারে ভুগলে, এবং পাঁচ বছরের নিচে ৩০ শতাংশ শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত হলে সেই এলাকাকে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়।


পূর্বের দুর্ভিক্ষ ও নতুন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

এর আগে IPC সুদানের পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে তিনটি ছিল এল ফাশারের আশপাশের শরণার্থী শিবির, যেগুলো RSF দখলের পর ফাঁকা হয়ে গেছে। অন্য দুটি এলাকা ছিল দক্ষিণ ও পশ্চিম করদোফান প্রদেশে, যা এখন RSF-এর নিয়ন্ত্রণে।

নতুন প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে তাওইলা, মেলিত ও তাউইশা শহরগুলোতেও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।


লাখো মানুষের জীবনে বিপর্যয়

আইপিসি জানিয়েছে, শুধুমাত্র দারফুর ও করদোফানেই প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদানের বিভিন্ন প্রদেশে আরও ৬৩ লাখ মানুষ চরম খাদ্যাভাবের মধ্যে রয়েছে।


আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও মানবিক সংকট

বিশ্বব্যাপী এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। IPC স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে — এর আগে ২০২৫ সালের শুরুতে গাজা উপত্যকায়, ২০১১ সালে সোমালিয়ায় এবং ২০১৭ ও ২০২০ সালে দক্ষিণ সুদানে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো দ্রুত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে, তবে চলমান সংঘাতের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে আছে।



#সুদান #দুর্ভিক্ষ #মানবিক_সংকট #IPC #দারফুর #কাদুগলি #জাতিসংঘ #আন্তর্জাতিক_সহায়তা #র‌্যাপিড_সাপোর্ট_ফোর্সেস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
জনপ্রিয় সংবাদ

ফাইজার বনাম নোভো: স্থূলতা-বিরোধী ওষুধের বাজারে আধিপত্যের লড়াই আদালতে গিয়ে গড়াল

সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ

০১:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানের দুটি নতুন অঞ্চলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (IPC) সোমবার জানিয়েছে, দারফুরের প্রধান শহর এল ফাশার এবং দক্ষিণ করদোফানের কাদুগলি শহরে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা পরিস্থিতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বীকৃত এই সংস্থা জানায়, চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সুদান এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।


দীর্ঘ অবরোধে বিচ্ছিন্ন এলাকা, তীব্র খাদ্যসংকট

দারফুরের এল ফাশার শহর গত ১৮ মাস ধরে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) এর অবরোধে রয়েছে। শহরটিতে খাদ্য ও জরুরি সরবরাহ প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

গত সপ্তাহে RSF বাহিনী শহরটি দখল করে নেয় এবং তীব্র হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার কারণে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন।

দক্ষিণ করদোফানের কাদুগলি শহরও বহু মাস ধরে অবরুদ্ধ। এখানেও হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে, কারণ RSF তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী সুদানি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আরও এলাকা দখলের চেষ্টা করছে।


আইপিসি রিপোর্ট: ‘জীবিকা সম্পূর্ণ ধ্বংস’

IPC-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এল ফাশার ও কাদুগলিতে “জীবিকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস, অনাহার, মারাত্মক অপুষ্টি ও মৃত্যু” চলছে।

দুর্ভিক্ষ ঘোষণার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো এলাকায় প্রতি ১০,০০০ জনে অন্তত দুজন বা পাঁচ বছরের কম বয়সী চারজনের মৃত্যু হলে, ২০ শতাংশেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্যাভাব ও অনাহারে ভুগলে, এবং পাঁচ বছরের নিচে ৩০ শতাংশ শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে আক্রান্ত হলে সেই এলাকাকে দুর্ভিক্ষগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়।


পূর্বের দুর্ভিক্ষ ও নতুন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা

এর আগে IPC সুদানের পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে তিনটি ছিল এল ফাশারের আশপাশের শরণার্থী শিবির, যেগুলো RSF দখলের পর ফাঁকা হয়ে গেছে। অন্য দুটি এলাকা ছিল দক্ষিণ ও পশ্চিম করদোফান প্রদেশে, যা এখন RSF-এর নিয়ন্ত্রণে।

নতুন প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে তাওইলা, মেলিত ও তাউইশা শহরগুলোতেও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে।


লাখো মানুষের জীবনে বিপর্যয়

আইপিসি জানিয়েছে, শুধুমাত্র দারফুর ও করদোফানেই প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদানের বিভিন্ন প্রদেশে আরও ৬৩ লাখ মানুষ চরম খাদ্যাভাবের মধ্যে রয়েছে।


আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও মানবিক সংকট

বিশ্বব্যাপী এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। IPC স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে — এর আগে ২০২৫ সালের শুরুতে গাজা উপত্যকায়, ২০১১ সালে সোমালিয়ায় এবং ২০১৭ ও ২০২০ সালে দক্ষিণ সুদানে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো দ্রুত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে, তবে চলমান সংঘাতের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে আছে।



#সুদান #দুর্ভিক্ষ #মানবিক_সংকট #IPC #দারফুর #কাদুগলি #জাতিসংঘ #আন্তর্জাতিক_সহায়তা #র‌্যাপিড_সাপোর্ট_ফোর্সেস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট