০৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
এলিজাবেথ টেলরের ১৯৬৬ সালের টিভি বিস্ফোরণ: ভালোবাসা, ক্রোধ ও খ্যাতির এক গল্প যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ধর্মীয় নেতাদের প্রতিবাদের জোয়ার — মানবাধিকারের পক্ষে নতুন নৈতিক জাগরণ ওবামাকেয়ার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন: খরচ বাড়ছে, সতর্কতার সঙ্গে বেছে নেওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনা : ভারত কি অবশেষে তাকে ‘আনলক’ করছে? গাজায় সহিংসতা ও মানবিক সংকটের মাঝে ইসরায়েলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সুদানে দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ বিস্তার আরও দুই অঞ্চলে – বিপর্যয়ের মুখে লাখো মানুষ আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২০ জন নিহত, ক্ষতিগ্রস্ত ঐতিহাসিক নীল মসজিদ মানবতার পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী আহ্বান ৯০ বছরের পুরানো জ্যাজ রেকর্ডের রাজত্ব ভিডিও গেমস এবং যুব সমাজ: আধুনিক প্রযুক্তি ও খেলাধুলার প্রভাব

কে-পপ শিল্পে চুক্তির ক্ষমতার প্রমাণ — নিউজিনস ও এক্সও সদস্যদের মামলায় রায় ব্যবস্থাপনার পক্ষে

কে-পপে আইনি দ্বন্দ্বে নতুন আলোচনার জন্ম

কে-পপের বিশ্বব্যাপী প্রভাব যত বাড়ছে, আইডল তারকাদের একচেটিয়া চুক্তি নিয়ে বিতর্ক ততই গভীর হচ্ছে। সম্প্রতি এক্সওর তিন সদস্য চেন, বায়খিউন ও জিউমিন (যারা একত্রে সিবিএক্স নামে পরিচিত) এবং গার্ল গ্রুপ নিউজিনস— উভয় দলই তাদের ব্যবস্থাপনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিগত বিরোধে হেরে গেছে। এই ঘটনাগুলো আবারও সামনে এনেছে প্রশ্ন—কোরিয়ার তারকা তৈরির ব্যবস্থাটি আসলে কতটা ন্যায্য ও শিল্পীদের অধিকারের পক্ষে।


এক্সও-সিবিএক্স বনাম এসএম এন্টারটেইনমেন্ট

এক্সও সদস্যদের নতুন এজেন্সি ইনবি ১০০-এ যোগদানের পর এসএম এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ডিসেম্বর মাসে এক্সওর পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা থেকে সিবিএক্সকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

বিতর্কের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুনে, যখন সিবিএক্স চুক্তি নবায়নের মাত্র পাঁচ মাস পর এসএমকে জানায় যে তারা ‘লাভের অস্বচ্ছ হিসাবের কারণে’ চুক্তি বাতিল করতে চায়। এসএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে।

পরবর্তীতে আপসচুক্তিতে নির্ধারিত হয়, সিবিএক্স সদস্যরা এক্সও নামের অধীনে এসএমের সঙ্গে থাকলেও এককভাবে কাজ করতে পারবে এবং এর বিনিময়ে তাদের একক আয়ের ১০ শতাংশ এসএমকে দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে এই সমঝোতাও ভেঙে যায়। সিবিএক্স অভিযোগ করে যে এসএম একটি মৌখিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং অর্থ আটকে রেখেছে। তারা এরপর সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিযোগিতা কমিশনে একাধিক অভিযোগ দাখিল করলেও সবগুলো মামলায় রায় আসে এসএমের পক্ষে।

শেষে সিবিএক্স পূর্বের চুক্তি মানতে রাজি হলেও এসএম “বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব” দেখিয়ে তাদের এক্সওর কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়। এতে জনমতও মূলত এসএমের পক্ষে যায়।


নিউজিনস বনাম অ্যাডর

গার্ল গ্রুপ নিউজিনস, যারা এক বছর ধরে অ্যাডর (হাইব লেবেলস-এর সহযোগী সংস্থা)-এর সঙ্গে বিরোধে ছিল, তারাও প্রথম রাউন্ডে হেরে যায়। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মিনজি, হ্যানি, ড্যানিয়েল, হেয়ারিন ও হেয়িন সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয় যে তারা চুক্তি শেষ করছে, কারণ সংস্থার সাবেক সিইও মিন হি জিনকে বরখাস্তের পর “বিশ্বাসের ভাঙন” ঘটেছে।

তারা অভিযোগ করে যে প্রশিক্ষণকালের ছবি ও ভিডিও ফাঁস করা, হাইবের জনসংযোগ দলের অপমানজনক মন্তব্য এবং হাইবের আরেক লেবেল বেলিফট ল্যাব তাদের স্টাইল নকল করার চেষ্টা— এসব ঘটনার মাধ্যমে কোম্পানি সম্পর্ক নষ্ট করেছে।

কিন্তু আদালত রায় দেয় যে এসব অভিযোগ চুক্তি বাতিলের বৈধ কারণ নয়। রায়ে বলা হয়, “শিল্পীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন হতে পারে”, তবে সাফল্যের পর ব্যবস্থাপনা বা সৃজনশীল বিষয়ে মতভেদকে “চুক্তিভিত্তিক জবরদস্তি” বলা যায় না।

আদালত সতর্ক করে দেয় যে, এমন মামলা ভবিষ্যতে পুরো শিল্পে নতুন নজির স্থাপন করতে পারে, যা প্রতিযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে ‘তারকা দখল’ ইস্যুতে জটিলতা তৈরি করবে।


বিনোদন শিল্পে চুক্তির ভারসাম্য নিয়ে নতুন বাস্তবতা

দশকের পর দশক ধরে কোরিয়ার বিনোদন শিল্পে চুক্তিগুলো সংস্থার পক্ষে ঝুঁকে ছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ভিন্ন।

একজন বিনোদন কোম্পানির নির্বাহী গোপনীয়তার শর্তে বলেন, “একসময় শিল্পীরা সংস্থার প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগের কারণে দুর্বল অবস্থানে থাকত। কিন্তু কে-পপ বিশ্বব্যাপী বিস্তারের পর তারা এখন আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। চুক্তিগুলো এখন অনেক বেশি আলোচনা ও ভারসাম্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।”

তিনি আরও বলেন, “এগুলো যেহেতু আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায়, তাই একতরফা ভঙ্গ মানেই মামলা। এখন আর এটা শুধু ‘বড় কোম্পানি বনাম শিল্পী’ নয়— উভয় পক্ষেরই আইনি দায়িত্ব আছে চুক্তি মানার।”

তার মতে, কে-পপ এখন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, তাই এসব বিরোধে আদালতের চূড়ান্ত রায়ই সবার জন্য মেনে নেওয়ার একমাত্র পথ।


এক্সও-সিবিএক্স ও নিউজিনসের মামলাগুলো প্রমাণ করছে যে কে-পপের উজ্জ্বলতার পেছনে রয়েছে কঠিন চুক্তি, যার মাধ্যমে শিল্পীরা যেমন সুযোগ পায়, তেমনি হারাতেও পারে তাদের স্বাধীনতা। আদালতের রায় শিল্পে ভারসাম্য রক্ষার নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে— যেখানে আইডল, কোম্পানি এবং ভক্ত—সবাই বুঝছে, কে-পপ এখন শুধু সঙ্গীত নয়, বরং আইনি ও পেশাগত পরিপক্বতার প্রতীক।

জনপ্রিয় সংবাদ

এলিজাবেথ টেলরের ১৯৬৬ সালের টিভি বিস্ফোরণ: ভালোবাসা, ক্রোধ ও খ্যাতির এক গল্প

কে-পপ শিল্পে চুক্তির ক্ষমতার প্রমাণ — নিউজিনস ও এক্সও সদস্যদের মামলায় রায় ব্যবস্থাপনার পক্ষে

০১:০৭:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

কে-পপে আইনি দ্বন্দ্বে নতুন আলোচনার জন্ম

কে-পপের বিশ্বব্যাপী প্রভাব যত বাড়ছে, আইডল তারকাদের একচেটিয়া চুক্তি নিয়ে বিতর্ক ততই গভীর হচ্ছে। সম্প্রতি এক্সওর তিন সদস্য চেন, বায়খিউন ও জিউমিন (যারা একত্রে সিবিএক্স নামে পরিচিত) এবং গার্ল গ্রুপ নিউজিনস— উভয় দলই তাদের ব্যবস্থাপনা সংস্থার সঙ্গে চুক্তিগত বিরোধে হেরে গেছে। এই ঘটনাগুলো আবারও সামনে এনেছে প্রশ্ন—কোরিয়ার তারকা তৈরির ব্যবস্থাটি আসলে কতটা ন্যায্য ও শিল্পীদের অধিকারের পক্ষে।


এক্সও-সিবিএক্স বনাম এসএম এন্টারটেইনমেন্ট

এক্সও সদস্যদের নতুন এজেন্সি ইনবি ১০০-এ যোগদানের পর এসএম এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ডিসেম্বর মাসে এক্সওর পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা থেকে সিবিএক্সকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়।

বিতর্কের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুনে, যখন সিবিএক্স চুক্তি নবায়নের মাত্র পাঁচ মাস পর এসএমকে জানায় যে তারা ‘লাভের অস্বচ্ছ হিসাবের কারণে’ চুক্তি বাতিল করতে চায়। এসএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে।

পরবর্তীতে আপসচুক্তিতে নির্ধারিত হয়, সিবিএক্স সদস্যরা এক্সও নামের অধীনে এসএমের সঙ্গে থাকলেও এককভাবে কাজ করতে পারবে এবং এর বিনিময়ে তাদের একক আয়ের ১০ শতাংশ এসএমকে দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে এই সমঝোতাও ভেঙে যায়। সিবিএক্স অভিযোগ করে যে এসএম একটি মৌখিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং অর্থ আটকে রেখেছে। তারা এরপর সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিযোগিতা কমিশনে একাধিক অভিযোগ দাখিল করলেও সবগুলো মামলায় রায় আসে এসএমের পক্ষে।

শেষে সিবিএক্স পূর্বের চুক্তি মানতে রাজি হলেও এসএম “বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব” দেখিয়ে তাদের এক্সওর কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়। এতে জনমতও মূলত এসএমের পক্ষে যায়।


নিউজিনস বনাম অ্যাডর

গার্ল গ্রুপ নিউজিনস, যারা এক বছর ধরে অ্যাডর (হাইব লেবেলস-এর সহযোগী সংস্থা)-এর সঙ্গে বিরোধে ছিল, তারাও প্রথম রাউন্ডে হেরে যায়। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মিনজি, হ্যানি, ড্যানিয়েল, হেয়ারিন ও হেয়িন সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয় যে তারা চুক্তি শেষ করছে, কারণ সংস্থার সাবেক সিইও মিন হি জিনকে বরখাস্তের পর “বিশ্বাসের ভাঙন” ঘটেছে।

তারা অভিযোগ করে যে প্রশিক্ষণকালের ছবি ও ভিডিও ফাঁস করা, হাইবের জনসংযোগ দলের অপমানজনক মন্তব্য এবং হাইবের আরেক লেবেল বেলিফট ল্যাব তাদের স্টাইল নকল করার চেষ্টা— এসব ঘটনার মাধ্যমে কোম্পানি সম্পর্ক নষ্ট করেছে।

কিন্তু আদালত রায় দেয় যে এসব অভিযোগ চুক্তি বাতিলের বৈধ কারণ নয়। রায়ে বলা হয়, “শিল্পীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন হতে পারে”, তবে সাফল্যের পর ব্যবস্থাপনা বা সৃজনশীল বিষয়ে মতভেদকে “চুক্তিভিত্তিক জবরদস্তি” বলা যায় না।

আদালত সতর্ক করে দেয় যে, এমন মামলা ভবিষ্যতে পুরো শিল্পে নতুন নজির স্থাপন করতে পারে, যা প্রতিযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে ‘তারকা দখল’ ইস্যুতে জটিলতা তৈরি করবে।


বিনোদন শিল্পে চুক্তির ভারসাম্য নিয়ে নতুন বাস্তবতা

দশকের পর দশক ধরে কোরিয়ার বিনোদন শিল্পে চুক্তিগুলো সংস্থার পক্ষে ঝুঁকে ছিল। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ভিন্ন।

একজন বিনোদন কোম্পানির নির্বাহী গোপনীয়তার শর্তে বলেন, “একসময় শিল্পীরা সংস্থার প্রশিক্ষণ ও বিনিয়োগের কারণে দুর্বল অবস্থানে থাকত। কিন্তু কে-পপ বিশ্বব্যাপী বিস্তারের পর তারা এখন আরও শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। চুক্তিগুলো এখন অনেক বেশি আলোচনা ও ভারসাম্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।”

তিনি আরও বলেন, “এগুলো যেহেতু আইনি বাধ্যবাধকতার আওতায়, তাই একতরফা ভঙ্গ মানেই মামলা। এখন আর এটা শুধু ‘বড় কোম্পানি বনাম শিল্পী’ নয়— উভয় পক্ষেরই আইনি দায়িত্ব আছে চুক্তি মানার।”

তার মতে, কে-পপ এখন বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, তাই এসব বিরোধে আদালতের চূড়ান্ত রায়ই সবার জন্য মেনে নেওয়ার একমাত্র পথ।


এক্সও-সিবিএক্স ও নিউজিনসের মামলাগুলো প্রমাণ করছে যে কে-পপের উজ্জ্বলতার পেছনে রয়েছে কঠিন চুক্তি, যার মাধ্যমে শিল্পীরা যেমন সুযোগ পায়, তেমনি হারাতেও পারে তাদের স্বাধীনতা। আদালতের রায় শিল্পে ভারসাম্য রক্ষার নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে— যেখানে আইডল, কোম্পানি এবং ভক্ত—সবাই বুঝছে, কে-পপ এখন শুধু সঙ্গীত নয়, বরং আইনি ও পেশাগত পরিপক্বতার প্রতীক।