নারী স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও জীবনের নতুন অধ্যায় নিয়ে দুবাইয়ে বুশনেলের অকপট কথা
নিজের ‘মিস্টার বিগ’ হওয়াই জীবনের সাহসী মোড়
“আমি মিস্টার বিগ-এর সঙ্গে থাকতে চাইনি, আমি নিজেই মিস্টার বিগ হতে চেয়েছিলাম।”
‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’-র স্রষ্টা ক্যান্ডেস বুশনেলের এই বক্তব্য শুধু একটি চরিত্রের গল্প নয়, বরং নারীর স্বাধীনতার এক শক্তিশালী ঘোষণা। দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এই জনপ্রিয় লেখিকা এখনও নিজস্ব পথে চলছেন—ট্রেন্ড বা পুরুষের পেছনে নয়, বরং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতে বিশ্বাসী।
বুশনেল হাসতে হাসতে বলেন, “আমি কখনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করিনি। কারণ, এটি মৌলিক কিছু তৈরি করতে পারে না। মানুষই আসল সৃষ্টিকর্তা।”
দুবাইয়ে নারী নেতৃত্ব ফোরামে ক্যান্ডেস
দুবাইয়ের ‘উই কনভেনশন’-এ অংশ নিতে আসেন ক্যান্ডেস বুশনেল। দুদিনব্যাপী এই নারী নেতৃত্ব সম্মেলনে তিনি ভালোবাসা, সম্পর্ক, আত্মউন্নয়ন এবং নারীর স্বাধীনতা নিয়ে অকপটভাবে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “ভালোবাসা পাওয়া কোনো শহরেই সহজ নয়। তবে যদি কেউ ল্যাম্বরগিনি চালায় আর ম্যানোলো পরে, তাহলে সে বেশ ভালোই করছে! আমি হয়তো একদিন দুবাইয়ে চলে আসব!”

দুবাইয়ের সাহসী ও অনুপ্রেরণামূলক নারী
দুবাই সম্পর্কে বুশনেল বলেন, “আমি এই শহরকে খুব পছন্দ করেছি। এখানে মাত্র তিন দিন আছি, কিন্তু অনেক মেধাবী ও প্রাণবন্ত নারীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। শহরটির শক্তি ও উচ্ছ্বাস, মানুষকে বড় স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করে।”
‘সব পাওয়া’র মানে কী?
বুশনেলের মতে, “জীবনে সবকিছু পাওয়ার বিষয় নয়, বরং এমন একটি জিনিস বেছে নেওয়ার বিষয় যা আপনাকে পরিপূর্ণ করে। সেটা পরিবার হতে পারে, ক্যারিয়ার হতে পারে, কিংবা দুটোই হতে পারে। নিজের জন্য যা সঠিক, সেটাই বেছে নেওয়াই মূল কথা।”
বন্ধুত্ব ও নারীর সংহতি
তিনি বলেন, “বন্ধুত্বই সবকিছু। নিউ ইয়র্কে যেমন, তেমনি দুবাইয়েও বন্ধুত্ব পরিবার হয়ে ওঠে। ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’-র আসল মর্মই ছিল নারীদের পারস্পরিক বন্ধন—একজন আরেকজনের পাশে থাকা।”
‘মিস্টার বিগ’-এর বাস্তবতা ও আত্মনির্ভরতার বার্তা
বুশনেল বলেন, “আমার নিজের জীবনে যখন ‘মিস্টার বিগ’-এর মতো একজন ছিল, তখন বুঝলাম আমি আসলে তার সঙ্গে থাকতে চাই না, আমি নিজেই তার মতো হতে চাই। গত কয়েক বছর ধরে আমি নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিচ্ছি, আমার পরামর্শ হলো—যদি আপনি আপনার ‘মিস্টার বিগ’-কে ভালোবাসেন, তাহলে নিজেই সেই মানুষ হয়ে উঠুন। এর মানে অহংকারী হওয়া নয়, বরং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণে থাকা।”
জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করা কখনো দেরি নয়
“জীবন ধাপে ধাপে এগোয়। আমরা একই গল্পে আটকে থাকতে পারি না,” বলেন বুশনেল।
“নারীরা ৫০ বছর বয়সের পরও, নতুন করে শুরু করতে পারে—সন্তান বড় হয়, জীবন বদলায়, নতুন সুযোগ আসে। মূল বিষয় হলো পরিবর্তনকে গ্রহণ করা।”

সারা জেসিকা পার্কারের প্রতি কৃতজ্ঞতা
বুশনেল বলেন, “সারা জেসিকা পার্কার ‘ক্যারি ব্র্যাডশ’ চরিত্রটিকে দারুণভাবে জীবন্ত করেছেন। তার উষ্ণতা ও বুদ্ধিমত্তা এই চরিত্রকে আজও প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।”
‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’-এর উত্তরাধিকার
বুশনেল বলেন, “আমি আরও অনেক বই ও শো লিখেছি, কিন্তু ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ দিয়েই সব শুরু হয়েছিল। এখন আমি ‘ট্রু টেলস অব সেক্স, সাকসেস, অ্যান্ড সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ নামে একক মঞ্চনাটক করছি, যেখানে আমি আমার জীবনের আসল গল্প বলি।”
তিনি আরও বলেন, “নিউ ইয়র্ক আমার লেখায় প্রায় একটি চরিত্রের মতোই ছিল। কারণ শহরটি নিজেই এক ব্যক্তিত্ব—যেখানে সবাই কিছু অর্জন করতে আসে, ব্যর্থ হতে নয়।”
উত্তরাধিকার ও নারীর নতুন চিন্তাধারা
“আমার সবচেয়ে বড় উত্তরাধিকার হলো, ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ নারীদের তাদের জীবনের দিকে নতুনভাবে তাকাতে শিখিয়েছে। সারা বিশ্বের নারীরা বলেন, এই সিরিজ তাদের ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও আত্মসম্মান সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন।”

প্রেমের নতুন ধারণা ও চূড়ান্ত পরামর্শ
প্রেমভিত্তিক রিয়েলিটি শো ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড’-এর ভক্ত ক্যান্ডেস মজা করে বলেন, “আমি সব সংস্করণই দেখি—ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত। হয়তো একদিন ‘লাভ ইজ ব্লাইন্ড দুবাই’ও দেখা যাবে!”
শেষে তিনি বলেন, “ভয় পেও না, নিজের ‘মিস্টার বিগ’ হয়ে ওঠো। ভালোবাসা, জীবন বা জুতার ক্ষেত্রে—কখনো বেশি কিছু চাওয়ার জন্য ক্ষমা চেও না।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















