সঙ্গীতের উত্তরাধিকার ও নতুন ধারার বিকাশ
২০২০-এর দশক বিকল্প কান্ট্রি সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল যুগ হিসেবে পরিচিত। এই ধারায় সঙ্গীতের উত্তরাধিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিগ থিফের অ্যাড্রিয়ান লেনকার ও ওয়াক্সাহাচির কেটি ক্রাচফিল্ডের মতো শিল্পীরা লুসিন্ডা উইলিয়ামস, গিলিয়ান ওয়েলচ ও জেফ টুইডির মতো শিল্পীদের প্রভাবিত ধারাকে আধুনিকভাবে পুনর্গঠন করেছেন। তাঁদের গান বিভিন্ন বয়সের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায়—কেউ কৈশোরের দোরগোড়ায়, আবার কেউ স্মৃতির পাতায় জোনি মিচেল শুনে আসা প্রজন্মের। জীবনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রতিটি গান আলাদাভাবে অনুরণিত হয়।
ওয়াক্সাহাচি থেকে স্নোক্যাপস: কেটির সৃজনশীল অভিযাত্রা
কেটি ক্রাচফিল্ডের সঙ্গীতযাত্রা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষভাবে উজ্জ্বল। ২০২০ সালে তাঁর ওয়াক্সাহাচি অ্যালবাম “Saint Cloud” সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়, আর ২০২৪ সালের “Tigers Blood” গ্র্যামিতে সেরা আমেরিকানা অ্যালবামের মনোনয়ন পায়। ওয়াক্সাহাচির প্রতিটি নতুন অ্যালবাম এখন ভক্তদের কাছে এক বিশেষ আয়োজন।
তবে কেটি মাঝে মাঝে নীরব কিন্তু মানসম্মত পার্শ্বপ্রকল্প নিয়েও কাজ করেন। ২০২২ সালে তিনি গায়িকা জেস উইলিয়ামসনের সঙ্গে “Plains” নামে একটি যৌথ প্রকল্প করেন। সর্বশেষ, তিনি তাঁর যমজ বোন অ্যালিসন ক্রাচফিল্ডের সঙ্গে “Snocaps” নামে নতুন ব্যান্ড গঠন করেছেন এবং হঠাৎ করেই এর প্রথম আত্মশিরোনামযুক্ত অ্যালবামটি প্রকাশ করেছেন।

অ্যালিসনের প্রত্যাবর্তন ও স্নোক্যাপসের সঙ্গীতধারা
অ্যালিসন ক্রাচফিল্ড ওয়াক্সাহাচির সঙ্গে কাজ করেছেন, ইন্ডি ব্যান্ড Swearin’–এর সহ-প্রধান ছিলেন এবং নিজস্ব একক কাজও করেছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এম. জে. লেন্ডারম্যান, যিনি “Tigers Blood”–এও বাজিয়েছেন এবং আধুনিক অল্ট-কান্ট্রি জগতে গুরুত্বপূর্ণ এক নাম।
স্নোক্যাপসের সঙ্গীতধারা মূলত ইন্ডি রক, যেখানে ঐতিহ্যবাহী ‘রুটসি’ বাদ্যযন্ত্র যেমন ব্যাঞ্জো, স্লাইড বা স্টিল গিটার অনুপস্থিত। সুরগুলো সহজ, সংযত, এবং মূলত গানের কথায় ও আবেগে জোর দেয়। “Angel Wings” গানটি লুসিন্ডা উইলিয়ামসের কাঁচা বাস্তবধর্মী স্টাইলের ধারাবাহিকতা বহন করে, আর “I Don’t Want To” গানে পাওয়া যায় ওয়াক্সাহাচির প্রারম্ভিক দিনের অন্তর্মুখী ব্যথা, যা এলিয়ট স্মিথের স্বীকারোক্তিমূলক সুরের কথা মনে করিয়ে দেয়।
দুই বোনের ভিন্ন স্বর, এক সুরেলা মিলন
যদিও কেটি ও অ্যালিসন যমজ, তাঁদের সঙ্গীতধারা একে অপরের পরিপূরক হলেও আলাদা। কেটির কণ্ঠ আরও পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী, আর তাঁর গানে রয়েছে সম্পর্কের ভাঙন, আত্মসমালোচনা ও গভীর আত্মদৃষ্টি। “Hide” গানে তিনি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়া এক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি আঁকেন—“আমাদের ভালোবাসা ভাঙা চাবির মতো / হারিয়ে গেছে আমার স্মৃতির দরজার পিছনে।”
অন্যদিকে, “Wasteland” গানে কেটি তাঁর উদ্বেগ, হতাশা ও আত্মসমর্পণের অনুভূতি গানে মিশিয়ে দেন, যেন প্রতিটি পঙ্ক্তিই বেদনার পাশাপাশি মুক্তির আহ্বান বহন করে।
অ্যালিসনের উচ্ছ্বাস ও নবযৌবনের সুর
অ্যালিসনের সঙ্গীতধারা ৮০-এর দশকের স্বাধীন রকের কথা মনে করিয়ে দেয়—যেখানে R.E.M. বা Throwing Muses-এর মতো ব্যান্ড ঝনঝনানো গিটার ও পোস্ট-পাঙ্ক রিদমে নতুন সোনিক জগত গড়ে তুলেছিল। তাঁর সুরে রয়েছে উদ্যম, যৌবনের রোমান্স ও মুহূর্তে বেঁচে থাকার উদ্দীপনা।
অ্যালবামের উদ্বোধনী গান “Coast”–এ তিনি গাইছেন, “আমি গ্যাসে পা রাখি / আবার হঠাৎ ব্রেক কষি / আমি কখনোই শুধু ভেসে যাই না।” “Brand New City”–তে তিনি নতুন শহরে এসে পুরনো অনুভূতি টের পান—“‘You Can’t Hurry Love’ বাজছে স্টেরিওতে / আমরা বন্ধুদের উদ্ধৃতি দিই, যেন তারা কবি।”

তাঁর গানে সরল ভাষায় জীবনের মুহূর্তগুলো ধরা পড়ে, জটিল রূপক নয় বরং বাস্তব বর্ণনায়। “Over Our Heads”–এ তিনি গাইছেন, “৪০ ইস্ট, সাড়ে আটটা / আমার আর কোনো শহর নেই, রাজ্যও নেই”—এক যাযাবর জীবনের প্রতীক।
চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবি
“Snocaps” অ্যালবামজুড়ে পাওয়া যায় গতি ও পরিবর্তনের অনুভূতি। কেটি বা অ্যালিসন—দুজনেরই গানে চরিত্ররা সদা চলমান, হয় গাড়িতে, নয়তো জীবনের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। স্থবিরতা তাঁদের জন্য একপ্রকার কারাবাস।
এই সঙ্গীতে নতুন সম্ভাবনা ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। যদিও Snocaps ব্যান্ডের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তাদের আত্মপ্রকাশ অ্যালবামটি শ্রোতাদের জন্য এক পরিপূর্ণ ও তৃপ্তিকর সঙ্গীতযাত্রা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















