১০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিতের আহ্বান হিন্দু মহাজোটের সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণন: গাজা পুনর্গঠন ও শান্তি আলোচনায় বাস্তব পদক্ষেপ চাইলেন এনক্রিপ্টেড ফোন কলেই ফাঁস ষড়যন্ত্রের খবর

ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বাংলাদেশে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ সিদ্ধান্ত ঘিরে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের মতামত উপেক্ষা করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে। তারা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।


বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ ও পদত্যাগের দাবি

‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীরা বৃহস্পতিবার মতিঝিলে সাবেক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে, যা তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ঘোষণা দেন, বিনিয়োগকারীরা দুই শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবেন।


‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ অগ্রহণযোগ্য’

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো জনমত-নির্ভর ম্যান্ডেট নেই ব্যাংক একীভূত করার জন্য। তার দাবি, এসব সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের। “এভাবে জোরপূর্বক সংস্কারের নামে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করা যাবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ক্ষোভ

সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বারবার জানানো হলেও গভর্নর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো একীভূতকরণ গ্রহণযোগ্য নয়। যদি এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয়, তবে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করা হবে।”


ইসলামি ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের দাবি

বিনিয়োগকারীরা দাবি জানান, একীভূত হওয়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা যেন নতুন সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানে সমমানের শেয়ার পান। এই পাঁচটি ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক(এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।

তারা আরও দাবি করেন, এস আলম গ্রুপের জব্দকৃত সম্পদ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা

এই প্রতিবাদের আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি বা মূলধন শূন্যের নিচে নেমে গেছে।

গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর বলেন, “এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য এখন কার্যত শূন্য; তাই কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।”


ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

একইসঙ্গে চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বোরসা জানায়, নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।

এই স্থগিতাদেশ আসে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করার পর। দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক একই দিনে একটি চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেয় যে ব্যাংকগুলোকে অধ্যাদেশের আওতায় আনা হবে এবং তাদের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করা হবে।

পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ এখন চরমে। তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করেছে এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা তৈরি করছে। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে তাদের অবস্থান কর্মসূচি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।


#ব্যাংক_একীভূতকরণ #বাংলাদেশ_ব্যাংক #বিনিয়োগকারী_আন্দোলন

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা

ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

০৮:৩৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ সিদ্ধান্ত ঘিরে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের মতামত উপেক্ষা করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে। তারা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।


বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ ও পদত্যাগের দাবি

‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীরা বৃহস্পতিবার মতিঝিলে সাবেক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের পদত্যাগ দাবি জানানো হয়।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত তাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে, যা তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ঘোষণা দেন, বিনিয়োগকারীরা দুই শীর্ষ কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবেন।


‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ অগ্রহণযোগ্য’

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো জনমত-নির্ভর ম্যান্ডেট নেই ব্যাংক একীভূত করার জন্য। তার দাবি, এসব সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে নেওয়া হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের। “এভাবে জোরপূর্বক সংস্কারের নামে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করা যাবে না,” মন্তব্য করেন তিনি।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ক্ষোভ

সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বারবার জানানো হলেও গভর্নর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো একীভূতকরণ গ্রহণযোগ্য নয়। যদি এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয়, তবে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করা হবে।”


ইসলামি ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের দাবি

বিনিয়োগকারীরা দাবি জানান, একীভূত হওয়া পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা যেন নতুন সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানে সমমানের শেয়ার পান। এই পাঁচটি ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক(এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।

তারা আরও দাবি করেন, এস আলম গ্রুপের জব্দকৃত সম্পদ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা

এই প্রতিবাদের আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি বা মূলধন শূন্যের নিচে নেমে গেছে।

গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর বলেন, “এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারের মূল্য এখন কার্যত শূন্য; তাই কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।”


ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

একইসঙ্গে চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বোরসা জানায়, নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।

এই স্থগিতাদেশ আসে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ১৫ ধারা অনুযায়ী ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে ‘অকার্যকর’ ঘোষণা করার পর। দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক একই দিনে একটি চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দেয় যে ব্যাংকগুলোকে অধ্যাদেশের আওতায় আনা হবে এবং তাদের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করা হবে।

পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ এখন চরমে। তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করেছে এবং ব্যাংক ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা তৈরি করছে। আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে তাদের অবস্থান কর্মসূচি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।


#ব্যাংক_একীভূতকরণ #বাংলাদেশ_ব্যাংক #বিনিয়োগকারী_আন্দোলন