তৃতীয় প্রান্তিকে ৫% প্রবৃদ্ধি
ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি ২০২৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.০৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, রপ্তানি ও সরকারি ব্যয়ের বৃদ্ধি ভোক্তা ব্যয়ের ধীরগতিকে কিছুটা সামলে দিয়েছে, এ তথ্য প্রকাশ করেছে দেশটির পরিসংখ্যান বিভাগ।
এই প্রবৃদ্ধি ২২ জন অর্থনীতিবিদের পূর্বাভাসের সঙ্গে মিল রেখেছে, যাদের মতে প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৫%। তবে এ হার আগের প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) ৫.১২% থেকে সামান্য কম।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি আগের বছরের তুলনায় ৫.০১% বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভোক্তা ব্যয়ে ধীরগতি
দেশটির মোট অর্থনীতির অর্ধেকেরও বেশি অংশ গঠিত ভোক্তা ব্যয় থেকে, যা তৃতীয় প্রান্তিকে মাত্র ৪.৮৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের ৪.৯৭% বৃদ্ধির চেয়ে কম এবং প্রায় দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতি।
পরিসংখ্যান দপ্তরের উপপ্রধান মোহাম্মদ এদি মাহমুদ জানান, খাদ্য ও পানীয় খাতে ব্যয় কমে যাওয়া, পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খরচ হ্রাসই এই ধীরগতির মূল কারণ।

বিনিয়োগ ও সরকারি ব্যয়ে বৃদ্ধি
বিনিয়োগ ৫.০৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত দেশীয় ব্যবসা থেকে এসেছে, বিদেশি বিনিয়োগের তুলনায়।
সরকারি ব্যয় বেড়েছে ৫.৪৯%, যার মূল কারণ ছিল সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রদান বৃদ্ধি।
এদিকে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯.৯%, যা মাহমুদের মতে মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য রপ্তানিতে আগ্রহী হওয়ায় সম্ভব হয়েছে।
বিশ্লেষকদের সংশয়
যদিও পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফল ইতিবাচক, বিশ্লেষকরা তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ক্যাপিটাল ইকনমিকসের ডেপুটি চিফ জেসন টুভি মন্তব্য করেন, ‘ফল প্রত্যাশামতো হলেও আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রবৃদ্ধি বাস্তবে কিছুটা মন্থর হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে, তাই আমরা আশা করছি ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া আগামী মাসগুলোতে সুদের হার আরও কমাবে।’
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও আশঙ্কা
ব্যাংক দানামনের অর্থনীতিবিদ হোসিয়ানা সিতুমোরাং বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন শক্তিশালী ও পর্যাপ্ত দেশীয় তারল্য থাকায় প্রবৃদ্ধি ৫%-এর কাছাকাছি থাকবে।’ তবে তিনি জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের দাম, জলবায়ুজনিত উৎপাদন ঝুঁকি, এবং বৈশ্বিক বাজারে বিনিয়োগ ব্যয়ের ওঠানামাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
অক্টোবরে ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ২.৭৩%, যেখানে খাদ্য ও স্বর্ণের দামের ওঠানামা মূল্যস্ফীতির মূল কারণ।
কর্মসংস্থানে মন্দাভাব
পাদজাজারান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যাপক তেউকু রেজাস্যাহ সতর্ক করে দেন, ‘বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মী নিয়োগে অনিচ্ছুক, ফলে চাকরির সুযোগ কমে গেছে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার বেকারত্বের হার ২০২৫ সালে ৫% হতে পারে, যা চীনের পর এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রায় ৬০% শ্রমশক্তি অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে, যেখানে আয় কম, চাকরির নিরাপত্তা নেই এবং সরকার কম কর রাজস্ব পায়।
পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী, আগস্টে খোলা বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৫%, যা ফেব্রুয়ারির ৪.৭৬% থেকে বেশি।

সরকারের আশাবাদ
অর্থমন্ত্রী পুরবায়া ইউধি সাদেওয়া জানিয়েছেন, বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্থনীতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা করছেন—প্রায় ৫.৫%-হারে।
তিনি বলেন, নতুন অর্ডারের কারণে উৎপাদন খাত আবারও সম্প্রসারণ পর্যায়ে ফিরবে, যা দেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রাখতে সহায়তা করবে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট
#ইন্দোনেশিয়া #অর্থনীতি #জিডিপি #ভোক্তা_ব্যয় #এশিয়া_বাজার #সারাক্ষণ_রিপোর্ট #অর্থনৈতিক_প্রবৃদ্ধি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















