নতুন শুল্কের বিরুদ্ধে সন্দেহ: ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ
মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিচারকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের প্রশাসন যে বিশাল পরিসরের শুল্ক আরোপের দাবি করেছে, তা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ?
লিবারেল বিচারকরা ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন, কিন্তু কোর্টের কয়েকজন কনজারভেটিভ বিচারকও তাদের সঙ্গে একমত হয়ে যুক্তি খণ্ডন করেছেন। বিচারক নীল গর্সাচ, উদাহরণস্বরূপ, প্রশ্ন তুলেছেন যে, প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের যে ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা কি সীমাহীন হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের, এবং এতে একদিকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে, অন্যদিকে কংগ্রেসের ভূমিকা সংকুচিত হতে পারে। গর্সাচ আরও প্রশ্ন করেন, “কংগ্রেস যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা আর আইন প্রণয়ন করতে চায় না এবং সব কিছু প্রেসিডেন্টের হাতে দিতে চায়, তাহলে এর বিরুদ্ধে কি প্রতিরোধ করা সম্ভব?”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতি: একটি ঐতিহাসিক মামলা
এই মামলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম প্রধান বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথম সুযোগ হতে পারে। কোর্টের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মার্কিন অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ব্যবসা এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপারে আদালতের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

শুল্ক নিয়ে এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হল আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA), যা ১৯৭৭ সালে তৈরি হয় এবং সাধারণত বৈদেশিক দেশগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ট্রাম্প দাবি করেন যে, এই আইন তাকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয়, যদিও এর মধ্যে কোনো সরাসরি শুল্ক আরোপের কথা উল্লেখ নেই।
কংগ্রেসের ক্ষমতা হস্তান্তর: বিচারকদের উদ্বেগ
বিচারকরা বারবার এ প্রশ্ন তুলেছেন, যে ভাষা IEEPA-তে রয়েছে তা কি শুল্ক আরোপের জন্য যথেষ্ট? বিচারক এলেনা কাগানও বলেছিলেন, “কংগ্রেসের শুল্ক আইনগুলোর মধ্যে রাজস্ব-সংগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট, যা এখানে নেই;” বিচারকরা এমনও দাবি করেছেন যে, ট্রাম্পের বিশাল শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কোর্টের “মেজর প্রশ্ন” নীতি লঙ্ঘন করতে পারে, যার মানে হচ্ছে, যদি কোনো নির্বাহী শাখা এমন নীতি বাস্তবায়ন করতে চায় যার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, তবে সেই নীতি স্পষ্টভাবে আইনগত অনুমোদন পাওয়ার প্রয়োজন।
শুল্কের পরিণতি: অর্থনৈতিক প্রভাব
এই মামলার পরিণতি মার্কিন অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি, যদিও জাতীয় শিল্পের পুনরুদ্ধার এবং বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য শক্তি বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ছিল, তাতে অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক দাবি করেছেন যে, এটি মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়েছে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্ধারণের মুহূর্ত: ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
এটি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির জন্য একটি বৃহৎ রাজনৈতিক মুহূর্ত হতে পারে। ট্রাম্প এই মামলা “দেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মামলা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং একে “জীবন বা মৃত্যুর” সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “যদি প্রেসিডেন্ট শুল্ক আরোপের ক্ষমতা না পায়, তাহলে দেশ প্রতিরক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে এবং জাতির ধ্বংস হতে পারে।”
এই মামলা সামনে আসছে এবং এর ফলাফল ট্রাম্পের ক্ষমতার ভবিষ্যত নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে, বিশেষত যখন একই কোর্টে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে যা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিচারকদের মন্তব্য: ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলা শুধু আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কোর্ট যদি ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তবে তা প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতার ক্ষেত্রে এক মৌলিক পরিবর্তন আনবে।
#নতুনশুল্ক #ট্রাম্প #সুপ্রিমকোর্ট #শুল্কনীতি #আইন #রাজনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















