বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী বর্তমানে পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকার চাইলে ছোট বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্পষ্ট ব্যাখ্যা
বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অধ্যাদেশে বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো বিধান নেই। তবে সরকার চাইলে ছোট বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
বিতর্কিত একীভূতকরণ ও বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উদ্বেগ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মানসুর জানান, সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার এখন কার্যত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। ১০ টাকার মূল্যমানে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য এখন নেতিবাচক হয়ে গেছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা কোনো অর্থ ফেরত পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

আন্তর্জাতিক মানে তৈরি নতুন অধ্যাদেশ
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংক রেজুলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও মতামত দিয়েছে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং যুক্তরাজ্যের এফসিডিও।
অধ্যাদেশে ব্যাংকের আমানতকারী, শেয়ারহোল্ডার এবং অন্যান্য ঋণদাতাদের অধিকার স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
ক্ষতির দায় বহনের নির্দেশনা
অধ্যাদেশের চারটি ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে কোনো তফসিলি ব্যাংককে ‘রেজুলিউশন’ প্রক্রিয়ায় নিয়ে গেলে শেয়ারহোল্ডার, দায়ী ব্যক্তি, অ্যাডিশনাল টিয়ার-এক ও টিয়ার-দুই মূলধনধারীদের (সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডার ব্যতীত) ক্ষতির বোঝা বহন করতে হবে।
তাছাড়া, অধ্যাদেশের ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, যদি শেয়ারহোল্ডাররা ‘লিকুইডেশন’ প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ক্ষতির চেয়েও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে।
ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের প্রক্রিয়া
রেজুলিউশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত একটি স্বতন্ত্র মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার বাস্তব চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থার পরিচালিত অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (এএকিউআর) এবং বিশেষ পরিদর্শনে দেখা গেছে—এই ব্যাংকগুলো বিপুল আর্থিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, এবং তাদের নিট সম্পদের মূল্য নেতিবাচক।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এই পাঁচ ব্যাংকের ক্ষতির দায়ভার শেয়ারহোল্ডারদেরই বহন করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনরায় অবস্থান স্পষ্টকরণ
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনরায় জানায় যে, চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকার ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নিতে পারে।
#বাংলাদেশব্যাংক #ইসলামীব্যাংক #একীভূতকরণ #বিনিয়োগকারী #ব্যাংকরেজুলিউশনঅধ্যাদেশ২০২৫ #অর্থনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















