০৪:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদ আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১২, আহত ২৭ গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পাকিস্তান ২৭তম সংশোধনী বিল অনুমোদিত, বাড়বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাও বিচার বিভাগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মোহাম্মদপুরে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জামিয়াতে উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান মুদ্রাস্ফীতির সময় টিআইপিএস বন্ডের সীমাবদ্ধতা  আফগান-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা: সীমান্তে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দুবাই মেট্রোর ব্লু লাইন নির্মাণে নতুন ১০টির বেশি সড়ক পরিবর্তন ‘ঠান্ডায় খাও, জ্বরে উপোস’—প্রচলিত ধারণার পেছনের আসল সত্য

ফিলিপাইনে ফাং-ওয়াংয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত লুজন দ্বীপ: এখন প্রবল বৃষ্টি ও পানির মধ্যে

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ফাং-ওয়াংয়ের আঘাত

ফিলিপাইনের পূর্ব উপকূলে রবিবার রাতে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সুপার টাইফুন ফাং-ওয়াং, যার প্রভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঝড়টি লুজন দ্বীপের অরোরা প্রদেশে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ভূমিতে আঘাত করে। এ সময় বাতাসের বেগ ছিল প্রবল, আর টানা ভারী বৃষ্টিপাতে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা।


প্রাণহানি ও ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া

সরকারি তথ্যমতে, ঝড়ের আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মধ্য ফিলিপাইনের ক্যাটবালোগান শহরে এক নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। আরেকজন মারা যান ক্যাটানডুয়ানেস দ্বীপে আকস্মিক বন্যায় ডুবে।
এছাড়া, সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় প্রায় ১২ লাখ মানুষকে আগেভাগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল ডিফেন্স অফিসার রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো।


স্কুল-অফিস বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল

সোমবার থেকে লুজন দ্বীপের সব সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ম্যানিলা সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।


উপকূলজুড়ে বন্যা ও তাণ্ডব

ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চলীয় ক্যাটানডুয়ানেস দ্বীপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে বিশাল ঢেউ রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটে গেছে, আর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এডসন কাসারিনো জানান, “সকাল ৭টার পর থেকে ঢেউয়ের গর্জন শুরু হয়। সাগরের পানি দেয়াল পেরিয়ে আসছিল, মনে হচ্ছিল জমিন কেঁপে উঠছে।”
একই সময়, আলবেই প্রদেশের গুইনোবাতান শহরে বন্যার পানি রাস্তাগুলোকে নদীতে পরিণত করে।


ভয় ও প্রস্তুতি

অরোরা প্রদেশের দিপাকুলাও শহরে সরকারি কর্মচারী অ্যারিস ওরা বলেন, “সবচেয়ে ভয় আমাদের রাতের সময়ের ভূমি-আঘাত নিয়ে। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না—শুধু বাতাসের গর্জন।”
উত্তরের কাগায়ান প্রদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লরেটা সালকিনা জানান, “আমাদের এলাকায় প্রায়ই বন্যা হয়। তাই নির্দেশ পেলেই আমরা ঘর ছেড়ে আসি। ঘর ভেসে গেলে অন্তত জীবন বাঁচবে।”


আবহাওয়াবিদদের সতর্কবার্তা

সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, টাইফুন ফাং-ওয়াং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ২০০ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টি নামাতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়ছে। উষ্ণ সমুদ্রের পানি টাইফুনকে দ্রুত শক্তিশালী করে তোলে, আর উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধারণ করে, ফলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।


আগের দুর্যোগের প্রভাব

এই দুর্যোগটি আসে মাত্র এক সপ্তাহ পর, যখন টাইফুন কালমায়েগি ফিলিপাইনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায়। সেই ঝড়ে অন্তত ২২৪ জন নিহত ও ১০৯ জন নিখোঁজ হয়। কালমায়েগির পরও উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ফাং-ওয়াংয়ের আগমন তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।


ঘর বাঁধার ঐতিহ্য ও মানুষের সংগ্রাম

ক্যাটানডুয়ানেসের মানুষ ঝড়ের আগে নিজেদের ঘর রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন—এটি স্থানীয় এক প্রাচীন প্রথা। প্রাদেশিক উদ্ধার কর্মকর্তা রবার্তো মন্টেরোলা বলেন, “মানুষ ছাদের ওপর বড় রশি বেঁধে মাটিতে পুঁতে রাখে, যেন বাতাসে ছাদ উড়ে না যায়।”


ফাং-ওয়াংয়ের বিশাল ব্যাসার্ধ প্রায় পুরো ফিলিপাইন জুড়ে বিস্তৃত। প্রবল বৃষ্টি ও বাতাসে দেশজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরপর দুটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষত-বিক্ষত ফিলিপাইন আবারও প্রকৃতির নির্মমতার মুখোমুখি।


#ফিলিপাইন #টাইফুন #ফাংওয়াং #প্রাকৃতিকদুর্যোগ #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত

ফিলিপাইনে ফাং-ওয়াংয়ের আঘাতে বিপর্যস্ত লুজন দ্বীপ: এখন প্রবল বৃষ্টি ও পানির মধ্যে

০২:৪৮:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ফাং-ওয়াংয়ের আঘাত

ফিলিপাইনের পূর্ব উপকূলে রবিবার রাতে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সুপার টাইফুন ফাং-ওয়াং, যার প্রভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। দেশটির জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঝড়টি লুজন দ্বীপের অরোরা প্রদেশে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ভূমিতে আঘাত করে। এ সময় বাতাসের বেগ ছিল প্রবল, আর টানা ভারী বৃষ্টিপাতে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা।


প্রাণহানি ও ব্যাপক সরিয়ে নেওয়া

সরকারি তথ্যমতে, ঝড়ের আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মধ্য ফিলিপাইনের ক্যাটবালোগান শহরে এক নারী ঘর থেকে বের হওয়ার সময় গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। আরেকজন মারা যান ক্যাটানডুয়ানেস দ্বীপে আকস্মিক বন্যায় ডুবে।
এছাড়া, সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় প্রায় ১২ লাখ মানুষকে আগেভাগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল ডিফেন্স অফিসার রাফায়েলিতো আলেহান্দ্রো।


স্কুল-অফিস বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল

সোমবার থেকে লুজন দ্বীপের সব সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজধানী ম্যানিলা সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।


উপকূলজুড়ে বন্যা ও তাণ্ডব

ফিলিপাইনের পূর্বাঞ্চলীয় ক্যাটানডুয়ানেস দ্বীপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে বিশাল ঢেউ রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটে গেছে, আর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এডসন কাসারিনো জানান, “সকাল ৭টার পর থেকে ঢেউয়ের গর্জন শুরু হয়। সাগরের পানি দেয়াল পেরিয়ে আসছিল, মনে হচ্ছিল জমিন কেঁপে উঠছে।”
একই সময়, আলবেই প্রদেশের গুইনোবাতান শহরে বন্যার পানি রাস্তাগুলোকে নদীতে পরিণত করে।


ভয় ও প্রস্তুতি

অরোরা প্রদেশের দিপাকুলাও শহরে সরকারি কর্মচারী অ্যারিস ওরা বলেন, “সবচেয়ে ভয় আমাদের রাতের সময়ের ভূমি-আঘাত নিয়ে। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না—শুধু বাতাসের গর্জন।”
উত্তরের কাগায়ান প্রদেশে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লরেটা সালকিনা জানান, “আমাদের এলাকায় প্রায়ই বন্যা হয়। তাই নির্দেশ পেলেই আমরা ঘর ছেড়ে আসি। ঘর ভেসে গেলে অন্তত জীবন বাঁচবে।”


আবহাওয়াবিদদের সতর্কবার্তা

সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, টাইফুন ফাং-ওয়াং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ২০০ মিলিমিটার (৮ ইঞ্চি) বৃষ্টি নামাতে পারে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন ঝড়ের তীব্রতা আরও বাড়ছে। উষ্ণ সমুদ্রের পানি টাইফুনকে দ্রুত শক্তিশালী করে তোলে, আর উষ্ণ বায়ুমণ্ডল বেশি আর্দ্রতা ধারণ করে, ফলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।


আগের দুর্যোগের প্রভাব

এই দুর্যোগটি আসে মাত্র এক সপ্তাহ পর, যখন টাইফুন কালমায়েগি ফিলিপাইনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায়। সেই ঝড়ে অন্তত ২২৪ জন নিহত ও ১০৯ জন নিখোঁজ হয়। কালমায়েগির পরও উদ্ধারকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ফাং-ওয়াংয়ের আগমন তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য করেছে।


ঘর বাঁধার ঐতিহ্য ও মানুষের সংগ্রাম

ক্যাটানডুয়ানেসের মানুষ ঝড়ের আগে নিজেদের ঘর রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন—এটি স্থানীয় এক প্রাচীন প্রথা। প্রাদেশিক উদ্ধার কর্মকর্তা রবার্তো মন্টেরোলা বলেন, “মানুষ ছাদের ওপর বড় রশি বেঁধে মাটিতে পুঁতে রাখে, যেন বাতাসে ছাদ উড়ে না যায়।”


ফাং-ওয়াংয়ের বিশাল ব্যাসার্ধ প্রায় পুরো ফিলিপাইন জুড়ে বিস্তৃত। প্রবল বৃষ্টি ও বাতাসে দেশজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরপর দুটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষত-বিক্ষত ফিলিপাইন আবারও প্রকৃতির নির্মমতার মুখোমুখি।


#ফিলিপাইন #টাইফুন #ফাংওয়াং #প্রাকৃতিকদুর্যোগ #সারাক্ষণরিপোর্ট