আন্দামান সাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ২৭ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী মারা গেছেন এবং আরও বহুজন নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী এই নৌযানটি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক সীমান্তের কাছে ডুবে যায়।
যৌথ উদ্ধার অভিযান জোরদার
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের যৌথ উদ্ধার দল মঙ্গলবার থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত নয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে—এর মধ্যে একটি পাওয়া গেছে থাইল্যান্ডের জলসীমায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উদ্ধার অভিযান চলবে আগামী শনিবার, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
অধিকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী দুই সপ্তাহ আগে একটি বড় নৌযানে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তাদের দু’টি ছোট নৌকায় ভাগ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি নৌকা ডুবে যায়, আর অপর নৌযানে থাকা প্রায় ২৩০ জনের ভাগ্য এখনো অজানা।

এক জীবিতের চোখে মরিয়া পালানোর কাহিনি
উদ্ধার পাওয়া অল্প কয়েকজনের একজন ২৪ বছর বয়সী ইমান শরীফ জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রথমে আট দিন বড় নৌকায় ছিলাম, পরে প্রায় ৭০ জনকে একটি ছোট নৌকায় তুলে দেওয়া হয়। সেই নৌকাটি ঝড়ো সাগরে উল্টে যায়। আমি একটি কাঠের টুকরো আঁকড়ে ধরে ভেসে থেকে অবশেষে এক দ্বীপে পৌঁছাই।”
মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা জানান, ইমানকে উদ্ধার করে আটক করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই ট্র্যাজেডি আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলমান সংকটের ভয়াবহতা—যারা মিয়ানমারে নির্যাতন ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের নাজুক অবস্থার কারণে জীবনবাজি রেখে সাগরপথে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
আন্দামান সাগর বহুদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের জন্য একটি বিপজ্জনক পালানোর পথ হয়ে উঠেছে, যেখানে মানবপাচারকারী চক্র ও অনিশ্চিত আবহাওয়ার মধ্যে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে থাকে। সাম্প্রতিক এই নৌকাডুবি আবারও দেখিয়ে দিল, নিরাপত্তা আর মর্যাদার খোঁজে রোহিঙ্গাদের যাত্রা কতটা মর্মান্তিক হতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















