থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেতকেও বলেন, আসিয়ানের দীর্ঘদিনের ‘হস্তক্ষেপ না করার’ নীতি প্রায়ই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অজুহাত হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র–চীন প্রতিযোগিতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে তিনি জানান, আঞ্চলিক স্থিতির জন্য নীতিতে নমনীয়তা এখন প্রয়োজনীয়।
হস্তক্ষেপ না করার নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময়
সিহাসাক বলেন, আসিয়ান ঐতিহ্যগত নীতির ওপর নির্ভর করলেও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় পরিবর্তন জরুরি। তিনি বলেন, “আমাদের ক্ষিপ্র থাকা দরকার, আমাদের সক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ — আমরা কোনো পক্ষ নই। আমাদের দুই পরাশক্তির কাছেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ থাকতে হবে।”
মিয়ানমার সংকট: থাইল্যান্ডের মধ্যস্থতার আগ্রহ
তিনি জানান, পরিস্থিতি গুরুতর হলে থাইল্যান্ড মিয়ানমার সংকটে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। তার মতে, “মিয়ানমারের সংকট তাদের অভ্যন্তরীণ সীমা ছাড়িয়ে পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলছে, তাই কিছু ক্ষেত্রে ‘হস্তক্ষেপ না করা’ নীতিতে নমনীয়তা দরকার।”
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে আছে; বহু মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজারো শরণার্থী প্রতিবেশী দেশে পালিয়েছে। সিহাসাক বলেন, “আমরা মিয়ানমারকে বিপদে ফেলতে হস্তক্ষেপ করি না — বরং গঠনমূলক সহায়তার মাধ্যমে সংলাপের পথ খুলতে চাই।”

আসিয়ানের নীতি ও সমঝোতা পদ্ধতি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব
সিহাসাক বলেন, আসিয়ান চার্টারে ‘হস্তক্ষেপ না করা’র পাশাপাশি মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো মূল্যবোধ রয়েছে, তাই ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তিনি প্রস্তাব করেন—
● চেয়ারম্যানের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা
● ‘ট্রয়িকা’ কাঠামো (পূর্ববর্তী, বর্তমান ও পরবর্তী চেয়ার) সক্রিয় করা
তার মতে, এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ দ্রুত ও আরও কার্যকর হবে।
থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া উত্তেজনা: শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকার
দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র–সুবিধাভিত্তিক যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া আবারও বিতর্কিত সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বসিয়েছে।
জুলাইয়ে সীমান্ত সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয় এবং থাই সেনারা মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়। সিহাসাক বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য প্রয়োজন—
● সীমান্ত থেকে ভারী অস্ত্র সরানো
● ল্যান্ডমাইন অপসারণের উদ্যোগ জোরদার করা
● সাইবার অপরাধসহ অবৈধ আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রম প্রতিরোধ করা
আসিয়ানের ইতিহাস ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ
১৯৬৭ সালে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড শীতল যুদ্ধের চাপ মোকাবিলায় আসিয়ান গঠন করে। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১১টি; সর্বশেষ যোগ হয়েছে তিমুর লেস্তে।
তবে সমঝোতাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক ক্ষেত্রে দেরি তৈরি করছে—বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগরের আচরণবিধি বা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির মতো ইস্যুতে।

যুক্তরাষ্ট্র–চীন প্রতিযোগিতা: আসিয়ানের সূক্ষ্ম ভারসাম্য
মার্কিন আলোচনার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশ ১৯–২০ শতাংশ আমদানি করের মুখোমুখি হয়েছে। অপরদিকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থ সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্যকরণের প্রাথমিক চুক্তি করেছে।
সিহাসাক বলেন, “চীনের বিনিয়োগ আমাদের দেশে মূল্য সংযোজন করলে তবেই তা গ্রহণযোগ্য। আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট হতে চাই না। চীন বা যুক্তরাষ্ট্র — উভয়ের কাছ থেকেই বিনিয়োগ চাই, তবে তা একমুখী হওয়া উচিত নয়।”
তিনি চীনা পণ্যের ‘ডাম্পিং’ বা থাইল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির রুট হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
আসিয়ানের অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করার প্রয়োজন
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক দেখিয়ে দিয়েছে—অভ্যন্তরীণ বাজার ও উৎপাদন ভিত্তি শক্তিশালী করতে আসিয়ানকে দ্রুত সমন্বিত হতে হবে। সিহাসাক বলেন, “ভবিষ্যতে আরও শুল্ক বা নতুন বাণিজ্য কাঠামো আসতে পারে। তাই বিকল্প পরিকল্পনা জরুরি। আসিয়ানকে আরও সমন্বিত হয়ে একক উৎপাদন বাজারে রূপ নিতে হবে।”
#দক্ষিণ-পূর্ব_এশিয়া | #আসিয়ান | #থাইল্যান্ড | #মিয়ানমার_সংকট | #কম্বোডিয়া | #ভূরাজনীতি | #যুক্তরাষ্ট্র_চীন_সম্পর্ক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















