০৭:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ায়, দেশে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২৫ পালিত অভিযানের আতঙ্কে বদলে যাচ্ছে হিসপ্যানিকদের কেনাকাটার অভ্যাস এরাস ট্যুরের অন্তরালে, টেলর সুইফটের নতুন ডকুসিরিজ ‘দ্য এন্ড অব অ্যান এরা’ পটুয়াখালীতে “জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে” অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ঢাকা–ব্যাংকক–ম্যানিলায় ব্যাগে ব্যাগে পাওয়ার ব্যাংক, শহরবাসীর নতুন ‘লাইফলাইন’ পাকিস্তানে নতুন অধ্যায়: ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারও বাড়ছে: সন্ত্রাসী হামলা ও আফগানিস্তানকে ঘিরে প্রক্সি যুদ্ধ

চীন-জাপান বিরোধ: ভূমিকম্পের মত বিপর্যয়ের সমাধান খুঁজে পেয়েছিল

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, পূর্ব চীন সাগরে চীনা মাছ ধরার একটি নৌকা জাপানি কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর পর, চীন জাপানে রেয়ার আর্থ উপাদানগুলি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, যা জাপানের শিল্পে একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। সেই সময়ে, জাপান তার রেয়ার আর্থের ৯০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করত। এই ঘটনার পর রেয়ার আর্থের দাম দশ গুণ বৃদ্ধি পায়, যা জাপানকে তাদের রেয়ার আর্থের সরবরাহ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে।

চীনের অবরোধ এবং জাপানের প্রতিক্রিয়া:

চীনের সেই অবরোধের পর, জাপান তার রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে ছিল স্টকপাইলিং, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, এবং বিকল্প প্রযুক্তির বিকাশ। ২০১০ সালের পর, জাপান অস্ট্রেলিয়ার লাইনাস রেয়ার আর্থসসহ অন্যান্য রেয়ার আর্থ প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, জাপান তার অটোমোবাইল এবং বায়ু টারবাইন শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ রেয়ার আর্থ উপাদানগুলির স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া, জাপান একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যার মধ্যে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং নতুন উপকরণের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রেয়ার আর্থের উপর চীনের আধিপত্য:

চীন বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থের ৭০ শতাংশ উৎপাদন করে এবং প্রক্রিয়াকৃত প্রায় ৯০ শতাংশ রেয়ার আর্থ সরবরাহ করে। তবে, জাপান চীনের উপর তার নির্ভরতা কমানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে ছিল বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা। বর্তমানে, জাপান তার রেয়ার আর্থের চীনা সরবরাহের উপর নির্ভরতা ৬০ শতাংশের নিচে নামিয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি ৫০ শতাংশের নিচে নামানোর পরিকল্পনা করছে।

জাপানের পাঠ:

চীনা অবরোধের পর, জাপান তার রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য একটি তৎক্ষণাৎ প্রণোদনা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনায় ১০০ বিলিয়ন ইয়েনের একটি অতিরিক্ত বাজেট অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কার্যকরভাবে তাদের রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়িয়েছিল। তবে, এই পদক্ষেপগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যে, চীনের হুমকি চলে যাওয়ার পরও জাপান তার পরিকল্পনাগুলি চালিয়ে গেছে। বর্তমানে, জাপান তার রেয়ার আর্থের ব্যবহার ২০১০ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও কম করেছে, যা এই পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা প্রমাণিত করে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য পাঠ:

এই ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, বিশেষ করে যেসব দেশ চীনের মতো একটি একক দেশের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন দেশের জন্য, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তাদের সরবরাহ চেইনগুলির দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে এবং বিকল্প উৎস তৈরি করে। পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য সহযোগিতার মাধ্যমে সংগ্রহ স্থাপন এবং একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের অবস্থান:

চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ভারতে সীমিত হতে পারে, কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এখনও অপেক্ষাকৃত কম। ২০২৩-২৪ সালে, ভারত ২,২৭০ টন রেয়ার আর্থ উপাদান আমদানি করেছে, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ চীন থেকে এসেছে। তবে, ভারত রেয়ার আর্থ খাতে তার অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছু উন্নত প্রকল্প শুরু করেছে, যেমন অ্যান্ডামান সাগরের তলদেশে সী-বেড ব্লকগুলির খনন এবং বিক্রয়।

চীনের আধিপত্য এবং একক সরবরাহ চেইনের উপর নির্ভরশীলতা বিশ্বের জন্য একটি সংকটের কারণ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, দেশের সরবরাহ চেইনগুলির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্র্যাকটিক্যাল এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


#Tags: #চীন_জাপান_বিরোধ #রেয়ার_আর্থ #চীনের_আধিপত্য #জাপানের_প্রতিক্রিয়া #বিশ্ব_অর্থনীতি #ভারতের_অবস্থা #সরবরাহ_চেইন #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস

চীন-জাপান বিরোধ: ভূমিকম্পের মত বিপর্যয়ের সমাধান খুঁজে পেয়েছিল

০৪:৪৪:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, পূর্ব চীন সাগরে চীনা মাছ ধরার একটি নৌকা জাপানি কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর পর, চীন জাপানে রেয়ার আর্থ উপাদানগুলি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, যা জাপানের শিল্পে একটি বিশাল প্রভাব ফেলে। সেই সময়ে, জাপান তার রেয়ার আর্থের ৯০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করত। এই ঘটনার পর রেয়ার আর্থের দাম দশ গুণ বৃদ্ধি পায়, যা জাপানকে তাদের রেয়ার আর্থের সরবরাহ ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে।

চীনের অবরোধ এবং জাপানের প্রতিক্রিয়া:

চীনের সেই অবরোধের পর, জাপান তার রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া শুরু করে। এর মধ্যে ছিল স্টকপাইলিং, পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, এবং বিকল্প প্রযুক্তির বিকাশ। ২০১০ সালের পর, জাপান অস্ট্রেলিয়ার লাইনাস রেয়ার আর্থসসহ অন্যান্য রেয়ার আর্থ প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করে। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, জাপান তার অটোমোবাইল এবং বায়ু টারবাইন শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ রেয়ার আর্থ উপাদানগুলির স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া, জাপান একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যার মধ্যে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ এবং নতুন উপকরণের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রেয়ার আর্থের উপর চীনের আধিপত্য:

চীন বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থের ৭০ শতাংশ উৎপাদন করে এবং প্রক্রিয়াকৃত প্রায় ৯০ শতাংশ রেয়ার আর্থ সরবরাহ করে। তবে, জাপান চীনের উপর তার নির্ভরতা কমানোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে ছিল বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং দীর্ঘমেয়াদী স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা। বর্তমানে, জাপান তার রেয়ার আর্থের চীনা সরবরাহের উপর নির্ভরতা ৬০ শতাংশের নিচে নামিয়েছে এবং ২০২৫ সালে এটি ৫০ শতাংশের নিচে নামানোর পরিকল্পনা করছে।

জাপানের পাঠ:

চীনা অবরোধের পর, জাপান তার রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য একটি তৎক্ষণাৎ প্রণোদনা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনায় ১০০ বিলিয়ন ইয়েনের একটি অতিরিক্ত বাজেট অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা কার্যকরভাবে তাদের রেয়ার আর্থ সরবরাহ ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়িয়েছিল। তবে, এই পদক্ষেপগুলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যে, চীনের হুমকি চলে যাওয়ার পরও জাপান তার পরিকল্পনাগুলি চালিয়ে গেছে। বর্তমানে, জাপান তার রেয়ার আর্থের ব্যবহার ২০১০ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও কম করেছে, যা এই পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতা প্রমাণিত করে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য পাঠ:

এই ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, বিশেষ করে যেসব দেশ চীনের মতো একটি একক দেশের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন দেশের জন্য, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে তারা তাদের সরবরাহ চেইনগুলির দুর্বলতা বিশ্লেষণ করে এবং বিকল্প উৎস তৈরি করে। পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য সহযোগিতার মাধ্যমে সংগ্রহ স্থাপন এবং একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের অবস্থান:

চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ভারতে সীমিত হতে পারে, কারণ ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এখনও অপেক্ষাকৃত কম। ২০২৩-২৪ সালে, ভারত ২,২৭০ টন রেয়ার আর্থ উপাদান আমদানি করেছে, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ চীন থেকে এসেছে। তবে, ভারত রেয়ার আর্থ খাতে তার অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছু উন্নত প্রকল্প শুরু করেছে, যেমন অ্যান্ডামান সাগরের তলদেশে সী-বেড ব্লকগুলির খনন এবং বিক্রয়।

চীনের আধিপত্য এবং একক সরবরাহ চেইনের উপর নির্ভরশীলতা বিশ্বের জন্য একটি সংকটের কারণ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, দেশের সরবরাহ চেইনগুলির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্র্যাকটিক্যাল এবং দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


#Tags: #চীন_জাপান_বিরোধ #রেয়ার_আর্থ #চীনের_আধিপত্য #জাপানের_প্রতিক্রিয়া #বিশ্ব_অর্থনীতি #ভারতের_অবস্থা #সরবরাহ_চেইন #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি