০৭:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে ভারত চীন সীমান্তের কাছে নতুন সামরিক ঘাঁটি উদ্বোধন: কৌশলগত সক্ষমতা আরও জোরদার আগে গণভোট, ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবে না জামায়াত উমর নাবির শেষ দিনের রহস্য: তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন সূত্র মালয়েশিয়ার পাম অয়েল এত বেশি কেন ব্যবহার হয়? ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর চরম সতর্কতা—নিরাপত্তা ঘিরে আতঙ্কে নাগরিকরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ায়, দেশে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২৫ পালিত

রাশিয়ার ভয়াবহ রাতে কিয়েভে ড্রোন–মিসাইল হামলা, নিহত অন্তত ৪

কিয়েভ জুড়ে আগুন, ধ্বংসস্তূপ আর আতঙ্ক

ভোরের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করেই সাইরেন বেজে ওঠে কিয়েভজুড়ে; কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশজুড়ে দেখা যায় ড্রোন ও মিসাইলের আলোর রেখা। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে রাজধানীর ওপর এটি ছিল রাশিয়ার অন্যতম বড় সমন্বিত হামলা। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, আবাসিক এলাকায় ধ্বংসস্তূপ ও আগুনে অন্তত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ভেঙে পড়া দেয়াল, উড়ে যাওয়া জানালা ও পুড়ে যাওয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রাতের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বাসিন্দারা, কেউ কেউ বলেছেন—“এখন ঘুমানোর আগে আমরা প্রথমে ঠিক করি, বিস্ফোরণ হলে কোথায় দৌড়াব।”

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সারা ইউক্রেনজুড়ে এই অভিযানে রাশিয়া শতাধিক ড্রোন ও অন্তত ডজনখানেক মিসাইল ব্যবহার করেছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রোন-মিসাইল ভূপাতিত করলেও, সেগুলোর টুকরো পড়ে অনেক ফ্ল্যাটে আগুন ধরে যায়। ধ্বংসস্তূপে ঘরের আসবাব, বই আর বাচ্চাদের খেলনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়; অনেক পরিবারকে ঠান্ডা ভোরে শুধু একটি ব্যাগ আর একটি কোট গায়ে জড়িয়েই বেরিয়ে আসতে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে, গরম খাবার ও মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য।

People hide in a metro station, being used as a bomb shelter, during a Russian drones attack in Kyiv, Ukraine, early Friday, Nov. 14, 2025.

বৃহত্তর যুদ্ধচিত্রে নতুন সংকেত

সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিয়েভের ওপর এই তীব্র হামলা শুধু রাজধানী নয়, পুরো ইউক্রেনের ওপর নতুন চাপের ইঙ্গিত দেয়। সামনের শীতকে সামনে রেখে রাশিয়া আবারও বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোকে টার্গেট করার চেষ্টা করছে কিনা, এ নিয়ে জোরালো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত শীতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় রাশিয়া; এবারও একই কৌশল পুনরাবৃত্তি হলে ঘর গরম রাখা, হাসপাতাল চালু রাখা এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সচল রাখতে ইউক্রেনকে আরও বেশি জেনারেটর ও জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে হবে।

জেলেনস্কি আবারও পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশে জরুরি বার্তায় অধিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক সিস্টেম দ্রুত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের “সন্ত্রাসী হামলা” প্রমাণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না পেয়ে রাশিয়া বেসামরিক জনপদে চাপ বাড়াচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে, যদিও নিজেদের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপে তারা কতদূর যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিয়েভের সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য এখন মূল চিন্তা খুব সাধারণ—পরের রাতে সাইরেন বাজলে পরিবারকে কত দ্রুত নিরাপদ স্থানে নেওয়া যাবে, আর সকাল হলে কীভাবে আবারও জানালা ঢেকে, ঘর গুছিয়ে একটা স্বাভাবিক দিনের ভান করা যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে

রাশিয়ার ভয়াবহ রাতে কিয়েভে ড্রোন–মিসাইল হামলা, নিহত অন্তত ৪

০৫:১৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

কিয়েভ জুড়ে আগুন, ধ্বংসস্তূপ আর আতঙ্ক

ভোরের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করেই সাইরেন বেজে ওঠে কিয়েভজুড়ে; কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশজুড়ে দেখা যায় ড্রোন ও মিসাইলের আলোর রেখা। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে রাজধানীর ওপর এটি ছিল রাশিয়ার অন্যতম বড় সমন্বিত হামলা। কিয়েভের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, আবাসিক এলাকায় ধ্বংসস্তূপ ও আগুনে অন্তত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ভেঙে পড়া দেয়াল, উড়ে যাওয়া জানালা ও পুড়ে যাওয়া গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রাতের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বাসিন্দারা, কেউ কেউ বলেছেন—“এখন ঘুমানোর আগে আমরা প্রথমে ঠিক করি, বিস্ফোরণ হলে কোথায় দৌড়াব।”

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সারা ইউক্রেনজুড়ে এই অভিযানে রাশিয়া শতাধিক ড্রোন ও অন্তত ডজনখানেক মিসাইল ব্যবহার করেছে। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রোন-মিসাইল ভূপাতিত করলেও, সেগুলোর টুকরো পড়ে অনেক ফ্ল্যাটে আগুন ধরে যায়। ধ্বংসস্তূপে ঘরের আসবাব, বই আর বাচ্চাদের খেলনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়; অনেক পরিবারকে ঠান্ডা ভোরে শুধু একটি ব্যাগ আর একটি কোট গায়ে জড়িয়েই বেরিয়ে আসতে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে, গরম খাবার ও মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য।

People hide in a metro station, being used as a bomb shelter, during a Russian drones attack in Kyiv, Ukraine, early Friday, Nov. 14, 2025.

বৃহত্তর যুদ্ধচিত্রে নতুন সংকেত

সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিয়েভের ওপর এই তীব্র হামলা শুধু রাজধানী নয়, পুরো ইউক্রেনের ওপর নতুন চাপের ইঙ্গিত দেয়। সামনের শীতকে সামনে রেখে রাশিয়া আবারও বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানি অবকাঠামোকে টার্গেট করার চেষ্টা করছে কিনা, এ নিয়ে জোরালো আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত শীতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় রাশিয়া; এবারও একই কৌশল পুনরাবৃত্তি হলে ঘর গরম রাখা, হাসপাতাল চালু রাখা এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সচল রাখতে ইউক্রেনকে আরও বেশি জেনারেটর ও জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে হবে।

জেলেনস্কি আবারও পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশে জরুরি বার্তায় অধিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক সিস্টেম দ্রুত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের “সন্ত্রাসী হামলা” প্রমাণ করে যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না পেয়ে রাশিয়া বেসামরিক জনপদে চাপ বাড়াচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো হামলার নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে, যদিও নিজেদের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপে তারা কতদূর যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিয়েভের সাধারণ বাসিন্দাদের জন্য এখন মূল চিন্তা খুব সাধারণ—পরের রাতে সাইরেন বাজলে পরিবারকে কত দ্রুত নিরাপদ স্থানে নেওয়া যাবে, আর সকাল হলে কীভাবে আবারও জানালা ঢেকে, ঘর গুছিয়ে একটা স্বাভাবিক দিনের ভান করা যাবে।