যানজট কমিয়ে বাঁচাতে চেষ্টায় আদালত
বিষাক্ত ধোঁয়ায় যখন আবারও শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে, ঠিক সেই সময় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সরাসরি হাজিরা না দিয়ে অনলাইনে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের মতে, একটি মামলার শুনানিতে হাজিরা দিতে হাজারো আইনজীবী ও পক্ষ–বিপক্ষকে গাড়ি করে আদালত প্রাঙ্গণে আনতে কোনো যৌক্তিকতা নেই, যখন করোনাকালে গড়া ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা এখনও কার্যকর আছে। গত কয়েকদিন ধরে দিল্লির বাতাসের মান সূচক ‘গুরুতর’ বা সিভিয়ার পর্যায়ে ঘোরাফেরা করছে; সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও ধোঁয়া নিরাপদ সীমার বহু গুণ বেশি। ফলে কখনো স্কুল বন্ধ, কখনো নির্মাণকাজ সীমিত করা—এভাবে যেন প্রতি শীতেই একই দৃশ্য ফিরে আসছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এমন পরিবেশে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদ্রোগের ঝুঁকি হঠাৎ বেড়ে যায়; শিশু ও বয়স্কদের জন্য পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক। সুপ্রিম কোর্ট আগে থেকেই দিল্লি ও আশপাশের রাজ্যগুলোতে দূষণ কমাতে ডিজেল গাড়ি, নির্মাণের ধুলা আর খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ানো নিয়ে একের পর এক নির্দেশনা দিয়েছে। এবার নিজেদের কার্যক্রমেই গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে একটি প্রতীকী বার্তা দিল দেশটির সর্বোচ্চ আদালত—প্রযুক্তি যখন আছে, তখন অপ্রয়োজনে রাস্তায় ভিড় বাড়ানোর মানে নেই। পরিবেশবিদেরা বলছেন, এ ধরনের জরুরি পদক্ষেপ কিছুটা সহায়তা করলেও মূল সমাধান নয়; জলবায়ু ও জ্বালানি নীতিতে বড় পরিবর্তন ছাড়া পরিস্থিতি বদলাবে না।
জলবায়ু সংকট আর জ্বালানি বাস্তবতার সংঘাত
দিল্লির ধোঁয়াটে আকাশ আসলে ভারতের বড় এক দ্বন্দ্বের প্রতীক—তাদের উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আর জলবায়ু–স্বাস্থ্য সুরক্ষার মধ্যে টানাপোড়েন। রাজধানী অঞ্চলে এখনও বড় অংশের বিদ্যুৎ আসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে; জায়গায় জায়গায় ডিজেল জেনারেটর চলে, রাস্তায় পুরোনো ট্রাক ও বাস থেকে বের হয় কালো ধোঁয়া। এর সঙ্গে প্রতিবেশী পাঞ্জাব ও হরিয়ানার ক্ষেত থেকে ধান কাটার পর ফসলের আঁটি পোড়ানোর ধোঁয়া এসে জমা হয় দিল্লির আকাশে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাওয়া বাতাসের ধারা ও দীর্ঘস্থায়ী উচ্চচাপের ফলেও দূষিত কণাগুলো দিন–কে–দিন শহরের গায়েই আটকে থাকে।
সরকার পরিবহন নেটওয়ার্কে মেট্রো ও বৈদ্যুতিক বাস বাড়ানো, সৌরবিদ্যুৎ প্রসার, পুরোনো যানবাহন পর্যায়ক্রমে বাদ দেওয়ার নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গতি দূষণের বর্তমান মাত্রার তুলনায় খুবই ধীর; কোটি মানুষের ফুসফুসে যে ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, তার জন্য কোনো দ্রুত চিকিৎসা নেই। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ নির্দেশ অনেকের কাছে বার্তা দিচ্ছে—রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন কঠিন সিদ্ধান্তে দ্বিধায়, আদালত তখন অন্তত কিছু তাৎক্ষণিক চাপ সৃষ্টি করছে। দিল্লির সাধারণ মানুষের বাস্তবতা অবশ্য আরও প্রাত্যহিক; কেউ বাড়িতে এয়ার পিউরিফায়ার বসাচ্ছেন, কেউ জানালার ফাঁক টেপ দিয়ে বন্ধ করছেন, কেউবা শীতের সময়ে শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যতক্ষণ না মাঠ–ঘাট, কারখানা ও সড়কে দূষণ কমে, ততদিন এই ব্যক্তিগত ছোট ছোট সমাধানই তাদের একমাত্র আশ্রয় হয়ে থাকবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















