০৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪ রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে ভারত চীন সীমান্তের কাছে নতুন সামরিক ঘাঁটি উদ্বোধন: কৌশলগত সক্ষমতা আরও জোরদার আগে গণভোট, ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবে না জামায়াত উমর নাবির শেষ দিনের রহস্য: তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন সূত্র মালয়েশিয়ার পাম অয়েল এত বেশি কেন ব্যবহার হয়? ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর চরম সতর্কতা—নিরাপত্তা ঘিরে আতঙ্কে নাগরিকরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা

বিশ্বজুড়ে পাখি–ফ্লুতে সীল–সমুদ্র সিংহের ভয়াবহ মৃত্যু, দুশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

পাখি থেকে সাগর স্তন্যপায়ীতে ভাইরাসের লাফ

বহু বছর ধরে পাখি–ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে সতর্ক ছিলেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু এবার তাদের দুশ্চিন্তা নতুন মাত্রা পেয়েছে—কারণ ভাইরাসটি এখন মারাত্মকভাবে আঘাত হানছে সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় সাউদার্ন এলিফ্যান্ট সীল কলোনিগুলোর একটিতে প্রজনন মৌসুমে অংশ নেওয়া স্ত্রী প্রাণীর প্রায় অর্ধেকই সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবে মারা গেছে। যেখানে একসময় গাদাগাদি ভিড়ে ভরা থাকত শিশুসহ সীলের ডেরা, সেখানে এখন স্তব্ধতা আর সারি সারি মৃতদেহ; অনেক জায়গায় তীব্র গন্ধের কারণে গবেষকদেরও কাজ করতে হচ্ছে মাস্ক পরেই।

বিশেষজ্ঞেরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে পরিযায়ী জলচর পাখি ও পোলট্রি খামারে ঘুরে বেড়ানো এই ভাইরাস এখন বারবার সীল, সমুদ্র সিংহসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীতে ধরা পড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমিত পাখির সঙ্গে সংস্পর্শে এসে বা ভাইরাসযুক্ত পানির মাধ্যমে এসব প্রাণী প্রথমে সংক্রমিত হচ্ছে, এরপর ঘনবসতিপূর্ণ প্রজনন ডেরায় এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষকেরা আক্রান্ত এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করে জেনেটিক বিশ্লেষণ চালাচ্ছেন, দেখতে চাইছেন—মানবদেহে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার মতো কোনো মিউটেশন ঘটছে কি না। আপাতত জনস্বাস্থ্যের জন্য সামগ্রিক ঝুঁকি কম বলে জানালেও, পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার কথা বলছে স্বাস্থ্য–সংস্থাগুলো।

পরিবেশব্যবস্থায় ধাক্কা আর নজরদারির ঘাটতি

শুধু প্রাণহানিই নয়, এই মহামারী সামুদ্রিক পরিবেশব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা এনে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। শিকার শৃঙ্খলে ওপরের দিকে থাকা সীল ও সমুদ্র সিংহ মাছ, স্কুইডসহ নানা প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; তাদের হঠাৎ কমে গেলে খাদ্যরাশিতে অস্বাভাবিক ওঠানামা দেখা দিতে পারে। কোথাও মাছের প্রজাতি বাড়তি চাপের মুখে পড়তে পারে, আবার কোথাও শিকারি কমে গেলে কিছু প্রজাতি বেপরোয়া বাড়তেও পারে—দুই ক্ষেত্রেই ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক উপকূলীয় জনপদে বন্যপ্রাণী দেখার পর্যটন বড় আয়ের উৎস; ভ্রমণকারীরা যখন প্রাণবন্ত কলোনির বদলে ফাঁকা সৈকত আর প্রাণীর লাশ দেখতে পান, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক প্রভাবও পড়ে স্থানীয়দের ওপর।

দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রাণীর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও খাদ্যসম্পর্ক থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল। ঐতিহ্যবাহী শিকার–নিয়ম, আচার–অনুষ্ঠান ও গল্পের কেন্দ্রে থাকা প্রাণীগুলো হঠাৎ বড় সংখ্যায় হারিয়ে গেলে সেই সমাজগুলোর স্মৃতি ও পরিচয়েও ধাক্কা লাগে। অন্যদিকে, এই সংকট আবার তুলে ধরেছে সমুদ্রে রোগ নজরদারির দুর্বলতা; দূরবর্তী দ্বীপ, বরফাচ্ছন্ন উপকূল ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ করাও ব্যয়সাপেক্ষ ও কঠিন। সংরক্ষণবাদীরা তাই সরকারগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছেন—অর্থ ব্যয় করে হলেও বন্য পাখি ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে, কারণ প্রাথমিক সতর্কতা অনেক প্রাণ বাঁচাতে পারে, ভবিষ্যতে হয়তো মানুষও। গবেষকেরা এটিকে জলবায়ু–পরিবর্তনের যুগে আগাম সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন; উষ্ণ সমুদ্র আর বদলে যাওয়া পরিযায়ী পথ বিভিন্ন প্রজাতিকে নতুনভাবে মুখোমুখি করছে, ফলাফল কী হতে পারে, তার এক ঝলক দেখা যাচ্ছে এখনই।

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪

বিশ্বজুড়ে পাখি–ফ্লুতে সীল–সমুদ্র সিংহের ভয়াবহ মৃত্যু, দুশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

০৫:৪৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

পাখি থেকে সাগর স্তন্যপায়ীতে ভাইরাসের লাফ

বহু বছর ধরে পাখি–ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে সতর্ক ছিলেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু এবার তাদের দুশ্চিন্তা নতুন মাত্রা পেয়েছে—কারণ ভাইরাসটি এখন মারাত্মকভাবে আঘাত হানছে সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর। নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে বড় সাউদার্ন এলিফ্যান্ট সীল কলোনিগুলোর একটিতে প্রজনন মৌসুমে অংশ নেওয়া স্ত্রী প্রাণীর প্রায় অর্ধেকই সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবে মারা গেছে। যেখানে একসময় গাদাগাদি ভিড়ে ভরা থাকত শিশুসহ সীলের ডেরা, সেখানে এখন স্তব্ধতা আর সারি সারি মৃতদেহ; অনেক জায়গায় তীব্র গন্ধের কারণে গবেষকদেরও কাজ করতে হচ্ছে মাস্ক পরেই।

বিশেষজ্ঞেরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে পরিযায়ী জলচর পাখি ও পোলট্রি খামারে ঘুরে বেড়ানো এই ভাইরাস এখন বারবার সীল, সমুদ্র সিংহসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীতে ধরা পড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমিত পাখির সঙ্গে সংস্পর্শে এসে বা ভাইরাসযুক্ত পানির মাধ্যমে এসব প্রাণী প্রথমে সংক্রমিত হচ্ছে, এরপর ঘনবসতিপূর্ণ প্রজনন ডেরায় এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষকেরা আক্রান্ত এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করে জেনেটিক বিশ্লেষণ চালাচ্ছেন, দেখতে চাইছেন—মানবদেহে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার মতো কোনো মিউটেশন ঘটছে কি না। আপাতত জনস্বাস্থ্যের জন্য সামগ্রিক ঝুঁকি কম বলে জানালেও, পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার কথা বলছে স্বাস্থ্য–সংস্থাগুলো।

পরিবেশব্যবস্থায় ধাক্কা আর নজরদারির ঘাটতি

শুধু প্রাণহানিই নয়, এই মহামারী সামুদ্রিক পরিবেশব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা এনে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। শিকার শৃঙ্খলে ওপরের দিকে থাকা সীল ও সমুদ্র সিংহ মাছ, স্কুইডসহ নানা প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; তাদের হঠাৎ কমে গেলে খাদ্যরাশিতে অস্বাভাবিক ওঠানামা দেখা দিতে পারে। কোথাও মাছের প্রজাতি বাড়তি চাপের মুখে পড়তে পারে, আবার কোথাও শিকারি কমে গেলে কিছু প্রজাতি বেপরোয়া বাড়তেও পারে—দুই ক্ষেত্রেই ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক উপকূলীয় জনপদে বন্যপ্রাণী দেখার পর্যটন বড় আয়ের উৎস; ভ্রমণকারীরা যখন প্রাণবন্ত কলোনির বদলে ফাঁকা সৈকত আর প্রাণীর লাশ দেখতে পান, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক প্রভাবও পড়ে স্থানীয়দের ওপর।

দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রাণীর সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও খাদ্যসম্পর্ক থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল। ঐতিহ্যবাহী শিকার–নিয়ম, আচার–অনুষ্ঠান ও গল্পের কেন্দ্রে থাকা প্রাণীগুলো হঠাৎ বড় সংখ্যায় হারিয়ে গেলে সেই সমাজগুলোর স্মৃতি ও পরিচয়েও ধাক্কা লাগে। অন্যদিকে, এই সংকট আবার তুলে ধরেছে সমুদ্রে রোগ নজরদারির দুর্বলতা; দূরবর্তী দ্বীপ, বরফাচ্ছন্ন উপকূল ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ করাও ব্যয়সাপেক্ষ ও কঠিন। সংরক্ষণবাদীরা তাই সরকারগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছেন—অর্থ ব্যয় করে হলেও বন্য পাখি ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ বাড়াতে হবে, কারণ প্রাথমিক সতর্কতা অনেক প্রাণ বাঁচাতে পারে, ভবিষ্যতে হয়তো মানুষও। গবেষকেরা এটিকে জলবায়ু–পরিবর্তনের যুগে আগাম সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন; উষ্ণ সমুদ্র আর বদলে যাওয়া পরিযায়ী পথ বিভিন্ন প্রজাতিকে নতুনভাবে মুখোমুখি করছে, ফলাফল কী হতে পারে, তার এক ঝলক দেখা যাচ্ছে এখনই।