আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিরাপত্তার নতুন সমীকরণ
চীন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নকে ঘিরে এমন আড়ম্বরপূর্ণ স্বাগত আয়োজন করেছে, যা শুধু প্রোটোকল নয়, আঞ্চলিক বার্তাও। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুদেশের সম্পর্ককে “বিশেষ আত্মীয়তার” তুলনা করে বলেছেন, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও মানুষে–মানুষে যাতায়াতই এই বন্ধনের ভিত্তি। বেইজিং স্পষ্ট করেছে, বৈশ্বিক উত্তেজনা আর ধীরগতির অর্থনীতির মাঝেও মূল ভূখণ্ড দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়ে গেছে, আর থাইল্যান্ডকে তারা সেই বৃত্তের কেন্দ্রে দেখতে চায়।
আলোচনায় উঠে এসেছে থাই–চীন উচ্চগতির রেল প্রকল্পের জট, পর্যটন পুনরুদ্ধার, এবং মেকং অববাহিকায় পানি ও পরিবেশ–নিরাপত্তা সহযোগিতা। চীন অবকাঠামো বিনিয়োগে নতুন গতি ফিরিয়ে আনতে মরিয়া, আর ব্যাংকক চায় আরও বেশি পর্যটক, বাড়তি রপ্তানি আর বৈদ্যুতিক যান ও ডিজিটাল খাতে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন। পর্দার আড়ালে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কথা বলেছেন সমুদ্র–বিবাদ, মিয়ানমার সংকট, এবং সরবরাহ শৃঙ্খল কতটা ঝুঁকিতে আছে তা নিয়েও।
অর্থনীতি, কূটনীতি ও থাইল্যান্ডের ভারসাম্য নীতি
থাইল্যান্ড মার্কিন জোটের অংশ হয়েও বাস্তবে অনেকটা “মাঝপথের” কৌশল নিয়েছে, যা চীনের জন্য আকর্ষণীয়। তাই বেইজিং এই সফরে কঠোর নিরাপত্তা ভাষার বদলে সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা ও রাজতান্ত্রিক যোগাযোগকে সামনে এনেছে, যেন চাপ ছাড়াই ব্যাংকককে নিজের দিকে টেনে রাখা যায়। যৌথ বিবৃতিতে আসিয়ান কেন্দ্রীয়তার কথা বারবার এসেছে, যা ইঙ্গিত দেয়—দু’পক্ষই চায় না নতুন নিরাপত্তা জোটের ভিড়ে আসিয়ানকে পাশ কাটিয়ে কোনো বার্তা যাক।
ব্যাংকক তার কৃষিপণ্য ও খাদ্য রপ্তানিতে বাড়তি সুযোগ চেয়েছে, একই সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। চীন সেই প্রেক্ষিতে থাইল্যান্ডে ইভি কারখানা, ব্যাটারি, ডাটা সেন্টারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। আলোচনায় সীমান্ত–পার অপরাধ, বিশেষ করে অনলাইন স্ক্যাম–সেন্টার আর মানবপাচার নিয়েও উদ্বেগ উঠে এসেছে, যা মিয়ানমার–লাওস হলেও প্রভাব ফেলছে থাই সমাজ ও পর্যটন খাতে। থাই নীতিনির্ধারকদের জন্য লক্ষ্য একটাই—ওয়াশিংটন আর বেইজিং, দুই দিকেই দরজা খোলা রাখা; আর চীনের জন্য এই সফর দেখানোর সুযোগ, তারা এখনও অঞ্চলে “বিশ্বস্ত অংশীদার” হতে চায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















