০৯:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪ রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে ভারত চীন সীমান্তের কাছে নতুন সামরিক ঘাঁটি উদ্বোধন: কৌশলগত সক্ষমতা আরও জোরদার আগে গণভোট, ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবে না জামায়াত উমর নাবির শেষ দিনের রহস্য: তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন সূত্র মালয়েশিয়ার পাম অয়েল এত বেশি কেন ব্যবহার হয়? ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর চরম সতর্কতা—নিরাপত্তা ঘিরে আতঙ্কে নাগরিকরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা

কাগজেই থমকে ভারতের সবুজ হাইড্রোজেন স্বপ্ন

খরচ, অবকাঠামো আর অনিশ্চিত চাহিদার জটে বড় প্রকল্পগুলো

ভারতের জাতীয় সবুজ হাইড্রোজেন মিশন কয়েক বছর আগেও দেশটির জ্বালানি রূপান্তরের “গেম–চেঞ্জার” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণ বলছে, ঘোষিত মোট সক্ষমতার প্রায় ৯৪%–ই এখনো কাগজে–কলমে, বাস্তবে নির্মাণ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্পষ্ট চাহিদার অভাব, অবকাঠামো ঘাটতি, আর এখনো তুলনামূলক বেশি উৎপাদন ব্যয়। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫০ লাখ টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করলেও, এই গতি বজায় থাকলে সে লক্ষ্য ধরা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ–নির্ভর ইলেক্ট্রোলাইজার, রপ্তানি–কেন্দ্রিক আমোনিয়া প্ল্যান্ট, আর সার ও রিফাইনারি শিল্পের সঙ্গে জোট বেঁধে নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। কিন্তু সম্ভাব্য ক্রেতারা এখনো দীর্ঘমেয়াদি কেনাবেচার চুক্তি করতে দ্বিধায়। প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লা থেকে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের তুলনায় সবুজ হাইড্রোজেন এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল, আর তা বহনের জন্য পাইপলাইন, সঞ্চয়াগার ও বন্দর–সুবিধাও গড়ে ওঠেনি। ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হলেও সময়সীমা আর নীতিগত ঝুঁকি নিয়ে রয়ে গেছে বড় সংশয়।

নীতি সহায়তা, আঞ্চলিক হাব আর কয়লার সঙ্গে দ্বৈত বার্তা

দিল্লি বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, কর–ছাড় আর পরীক্ষামূলক প্রকল্পের ঘোষণা দিয়ে বাজারকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্য নিজেদের সবুজ হাইড্রোজেন হাব বানাতে জমি, বিদ্যুৎ–সংযোগ আর দ্রুত অনুমোদনের প্যাকেজ দিচ্ছে। সমুদ্রবন্দরগুলোও ভবিষ্যৎ রপ্তানি–বাজারের কথা মাথায় রেখে সবুজ আমোনিয়া হ্যান্ডলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবু সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে—সার, শিপিং ও ভারী শিল্পের মতো প্রাথমিক ক্রেতা–খাতে সরাসরি সহায়তা না এলে ঘোষিত প্রকল্পের বড় অংশই বাস্তবায়নহীন থেকে যেতে পারে।

এদিকে একই সময়ে ভারতের কয়লা–ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা বাজারে মিশ্র সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। সমর্থকদের যুক্তি, এখনই কিছুটা বেশি দাম মেনে নিয়ে সবুজ হাইড্রোজেনে বিনিয়োগ না করলে ভবিষ্যৎ রপ্তানি–বাজারে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হবে। সমালোচকদের মতে, যখন সৌর, বায়ু ও গ্রিড–উন্নয়নের মতো প্রমাণিত প্রযুক্তি আছে, তখন অনিশ্চিত পথে এত সরকারি অর্থ ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক নয়। শেষ পর্যন্ত আগামী কয়েক বছরেই ঠিক হয়ে যাবে—ভারত সবুজ হাইড্রোজেনে বৈশ্বিক খেলোয়াড় হতে পারবে, নাকি এই ক্ষেত্রের নিয়ম অন্যরা লিখবে, আর দিল্লি শুধু সেই নিয়মের সাথে মানিয়ে চলবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪

কাগজেই থমকে ভারতের সবুজ হাইড্রোজেন স্বপ্ন

০৬:৩৪:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

খরচ, অবকাঠামো আর অনিশ্চিত চাহিদার জটে বড় প্রকল্পগুলো

ভারতের জাতীয় সবুজ হাইড্রোজেন মিশন কয়েক বছর আগেও দেশটির জ্বালানি রূপান্তরের “গেম–চেঞ্জার” হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণ বলছে, ঘোষিত মোট সক্ষমতার প্রায় ৯৪%–ই এখনো কাগজে–কলমে, বাস্তবে নির্মাণ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্পষ্ট চাহিদার অভাব, অবকাঠামো ঘাটতি, আর এখনো তুলনামূলক বেশি উৎপাদন ব্যয়। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫০ লাখ টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করলেও, এই গতি বজায় থাকলে সে লক্ষ্য ধরা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে।

বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ–নির্ভর ইলেক্ট্রোলাইজার, রপ্তানি–কেন্দ্রিক আমোনিয়া প্ল্যান্ট, আর সার ও রিফাইনারি শিল্পের সঙ্গে জোট বেঁধে নানা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। কিন্তু সম্ভাব্য ক্রেতারা এখনো দীর্ঘমেয়াদি কেনাবেচার চুক্তি করতে দ্বিধায়। প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লা থেকে উৎপাদিত হাইড্রোজেনের তুলনায় সবুজ হাইড্রোজেন এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল, আর তা বহনের জন্য পাইপলাইন, সঞ্চয়াগার ও বন্দর–সুবিধাও গড়ে ওঠেনি। ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হলেও সময়সীমা আর নীতিগত ঝুঁকি নিয়ে রয়ে গেছে বড় সংশয়।

নীতি সহায়তা, আঞ্চলিক হাব আর কয়লার সঙ্গে দ্বৈত বার্তা

দিল্লি বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, কর–ছাড় আর পরীক্ষামূলক প্রকল্পের ঘোষণা দিয়ে বাজারকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্য নিজেদের সবুজ হাইড্রোজেন হাব বানাতে জমি, বিদ্যুৎ–সংযোগ আর দ্রুত অনুমোদনের প্যাকেজ দিচ্ছে। সমুদ্রবন্দরগুলোও ভবিষ্যৎ রপ্তানি–বাজারের কথা মাথায় রেখে সবুজ আমোনিয়া হ্যান্ডলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবু সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে—সার, শিপিং ও ভারী শিল্পের মতো প্রাথমিক ক্রেতা–খাতে সরাসরি সহায়তা না এলে ঘোষিত প্রকল্পের বড় অংশই বাস্তবায়নহীন থেকে যেতে পারে।

এদিকে একই সময়ে ভারতের কয়লা–ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা বাজারে মিশ্র সিগন্যাল পাঠাচ্ছে। সমর্থকদের যুক্তি, এখনই কিছুটা বেশি দাম মেনে নিয়ে সবুজ হাইড্রোজেনে বিনিয়োগ না করলে ভবিষ্যৎ রপ্তানি–বাজারে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হবে। সমালোচকদের মতে, যখন সৌর, বায়ু ও গ্রিড–উন্নয়নের মতো প্রমাণিত প্রযুক্তি আছে, তখন অনিশ্চিত পথে এত সরকারি অর্থ ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক নয়। শেষ পর্যন্ত আগামী কয়েক বছরেই ঠিক হয়ে যাবে—ভারত সবুজ হাইড্রোজেনে বৈশ্বিক খেলোয়াড় হতে পারবে, নাকি এই ক্ষেত্রের নিয়ম অন্যরা লিখবে, আর দিল্লি শুধু সেই নিয়মের সাথে মানিয়ে চলবে।