ব্লু অরিজিন স্পেসএক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমান অবস্থানে আসতে চায়। নিউ গ্লেন রকেটের প্রথম ধাপের বুস্টার সমুদ্রে সফলভাবে অবতরণ করেছে। এটি রকেটটির দ্বিতীয় ফ্লাইট। মঙ্গল অভিমুখে নাসার দুটি স্যাটেলাইট সফলভাবে পাঠানো হয়েছে।
উৎক্ষেপণ ও বড় সাফল্য
ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ব্লু অরিজিনের বিশাল নিউ গ্লেন রকেট তার প্রথম বাণিজ্যিক মিশনে দুটি নাসা স্যাটেলাইটকে মঙ্গলের পথে পাঠায়। একই সঙ্গে রকেটের পুনঃব্যবহারযোগ্য বুস্টার “জ্যাকলিন” নামের সমুদ্র–ভাসমান প্ল্যাটফর্মে নিরাপদে অবতরণ করে। জানুয়ারির ব্যর্থ প্রথম চেষ্টার পর এ সাফল্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় অর্জন।
রকেটের সাতটি বিই–৪ ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর তা শক্তিশালী ধোঁয়া সৃষ্টি করে আকাশে উঠে যায়। মেঘলা আবহাওয়া ও জিওম্যাগনেটিক ঝড়ের কারণে কয়েকদিন বিলম্বের পরে সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়।
নাসার প্রথম বিজ্ঞান মিশন পেল ব্লু অরিজিন
এ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে নাসার এসকাপেড নামের দুটি স্যাটেলাইট প্রথমবারের মতো ব্লু অরিজিনের রকেটে করে মহাকাশে পৌঁছায়। রকেটের উপরের ধাপ সেগুলোকে ২২ মাসের মঙ্গলযাত্রার উপযুক্ত কক্ষপথে পাঠাতে সফল হয়। ব্লু অরিজিনের প্রধান নির্বাহী ডেভ লিম্প একে পুরোপুরি সফল মিশন বলে উল্লেখ করেন। এলন মাস্কও সামাজিক মাধ্যমে অভিনন্দন জানান।
মঙ্গলমুখী স্যাটেলাইট ব্লু ও গোল্ড
নাসার ব্লু ও গোল্ড নামের স্যাটেলাইট দুটি ২০২৭ সালে মঙ্গলে পৌঁছাবে। এরপর তারা ১১ মাস ধরে মঙ্গলের মহাকাশ আবহাওয়া, সৌর বায়ু ও গ্রহটির দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করবে। এ গবেষণা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল কীভাবে ক্ষয় হয়েছে এবং একসময় জলসমৃদ্ধ গ্রহটি কীভাবে মরুভূমিতে পরিণত হলো, সে সম্পর্কে নতুন ধারণা দেবে।
স্যাটেলাইটগুলো নির্মাণ করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার রকেট ল্যাব এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে।

অতিরিক্ত প্রযুক্তি পরীক্ষা
নিউ গ্লেন রকেট ভায়াস্যাটের একটি পরীক্ষামূলক ডেটা রিলে পেলোডও বহন করে, যা কক্ষপথে সাফল্যের সঙ্গে পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
আগের জানুয়ারির ফ্লাইটে নিউ গ্লেন শুধুমাত্র ব্লু অরিজিনের নিজস্ব পরীক্ষামূলক ব্লু রিং মহাকাশযানের প্রোটোটাইপ বহন করেছিল।
ব্লু অরিজিনের বড় লক্ষ্য ও অগ্রগতি
জেফ বেজোস প্রতিষ্ঠিত ব্লু অরিজিন এতদিন মূলত পর্যটকদের সাবঅরবিটাল ভ্রমণের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু কোম্পানিটি নিউ গ্লেন রকেট তৈরিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা ভবিষ্যতে মানুষ ও মালামাল বহনের প্রধান ভারবাহী রকেট হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
নিউ গ্লেন রকেট জন গ্লেনের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এটি উৎক্ষেপণের সময় স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯–এর দ্বিগুণ শক্তি উৎপন্ন করে এবং ফ্যালকন হেভির সমমানের থ্রাস্ট সরবরাহ করতে পারে। পাশাপাশি এটির কার্গো বহনক্ষমতাও প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাইতে বেশি।
এস্কাপেড মিশনের জন্য নাসা মোট ৫৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং ব্লু অরিজিনকে নিউ গ্লেন ফ্লাইটের জন্য দিয়েছে ১৮ মিলিয়ন ডলার।
স্পেসএক্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
ব্লু অরিজিন অগ্রগতির পথে থাকলেও স্পেসএক্স ইতোমধ্যে দুই বছরে প্রায় ২৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে, যার বড় অংশ তাদের স্টারলিংক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ।
স্পেসএক্স তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য স্টারশিপ রকেট তৈরি করছে, যা চাঁদ, মঙ্গল এবং বিভিন্ন মহাকাশ মিশনে ব্যবহৃত হবে।
অন্যদিকে ব্লু অরিজিন নাসার আর্টেমিস চন্দ্র–মিশনের জন্য মানববাহী ল্যান্ডার তৈরি করছে, মহাকাশ স্টেশন নির্মাণে অংশ নিচ্ছে এবং অন্য কোম্পানির রকেটের জন্য ইঞ্জিন সরবরাহ করছে।
#| ব্লু_অরিজিন # নিউ_গ্লেন #নাসা # মঙ্গল_মিশন #বিজ্ঞান_উৎক্ষেপণ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















