০২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত এক পথচারী গাজীপুরে আবার গ্রামীণ ব্যাংকে হামলা — এক সপ্তাহে ৫ জেলার ৬টি শাখায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ফ্লোরিডায় শিক্ষায় র‍্যাডিক্যাল পরীক্ষা কাশিয়ানীতে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা মধ্যরাতে নোয়াখালীতে টায়ার জ্বালিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহে কভার্ড ভ্যানে আগুন ভারতের উন্নয়নের দুই উদীয়মান রাজ্য দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সন্ত্রাসী অস্থিরতা দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতি: বাস্তববাদে নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের উত্থান

টাইগ্রেকে কেন্দ্র করে আফ্রিকায় নতুন সংঘাতের আশঙ্কা

ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় টাইগ্রে অঞ্চল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দগদগে ক্ষত বহন করছে। পশ্চিমা ও আফ্রিকান মধ্যস্থতায় ২০২২ সালে হওয়া শান্তিচুক্তি তিন বছরের মাথায় ভেঙে পড়তে বসেছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনা আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে আবারও সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে, যা পুরো আফ্রিকার শিং অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।


টাইগ্রেতে চুক্তিভঙ্গ ও নতুন উত্তেজনা
৭ নভেম্বর টিপিএলএফ অভিযোগ করে যে প্রধানমন্ত্রী আবিয় আহমেদের সরকার শান্তিচুক্তি মানছে না এবং টাইগ্রে অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এর আগে আফারে টাইগ্রেয়ান বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সরকার–সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
অভিযোগের জবাবে আবিয় সরকার টাইগ্রে অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
২৮ অক্টোবর পার্লামেন্টে আবিয় আহমেদ বলেন, তার সরকার যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুদ্ধ লাগলে “কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।” সেনাপ্রধানও হুঁশিয়ারি দেন—টিপিএলএফকে “সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না করলে” শান্তি সম্ভব নয়।
মেকেলেতে ব্যাংকে মানুষের ভিড়, বাজারে মজুতদারি—সবই আবারও যুদ্ধের আগাম সংকেত।


সংঘাত আরও বিপজ্জনক হওয়ার তিনটি কারণ

১. টিপিএলএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দল
মার্চে টিপিএলএফের এক শক্তিশালী অংশ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে সামরিক জেনারেলকে বসায়। এতে ক্ষুব্ধ বহু টাইগ্রেয়ান সেনা আফারে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় টিপিএলএফ-বিরোধী মিলিশিয়া গঠন করে। দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে।

২. ইথিওপিয়া–ইরিত্রিয়া সম্পর্কের ভাঙন
২০২০ সালের যুদ্ধে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়ার সঙ্গে লড়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে আবিয় টিপিএলএফের সঙ্গে সমঝোতার দিকে ঝুঁকলে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
ইথিওপিয়ার সমুদ্রপথ পাওয়ার জোরালো দাবি ও ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আবিয়ের প্রশ্ন তোলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়।
২১ অক্টোবর সীমান্তবর্তী বুড়ে এলাকায় ইথিওপিয়ার সেনাদের পরিদর্শন এবং নতুন ড্রোনঘাঁটির উপস্থিতি সম্ভাব্য যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়।

৩. সুদানের গৃহযুদ্ধের জটিল প্রভাব
সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এখন টাইগ্রেয়ান ও ইরিত্রিয়ার বড় মিত্র। ইরিত্রিয়া তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সুদানি বিমান আসমারায় দেখা গেছে। হাজারো টাইগ্রেয়ান যোদ্ধা সুদানের পক্ষে লড়ছে।
যদি ইথিওপিয়া–ইরিত্রিয়া যুদ্ধ শুরু হয়, এসএএফ নিশ্চিতভাবেই তাদের পাশে দাঁড়াবে।


আঞ্চলিক জোটের অস্থিরতা
টাইগ্রে এখন ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মাঝখানে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র।
টিপিএলএফ আবিয় সরকারকে বড় হুমকি মনে করে পুরনো শত্রু ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। সীমান্তে দুই পক্ষের যোদ্ধাদের চলাচল, বাজারে ইরিত্রিয়ান মুদ্রা—সবই অস্বাভাবিক সমীকরণ তৈরি করছে।


আমহারা অঞ্চল ও ফানো মিলিশিয়ার অবস্থান
গত যুদ্ধে ইথিওপিয়ার পাশে থাকা আমহারা মিলিশিয়া ফানো এখন আবিয়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে।
সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ব আমহারায় সরকারকে হটিয়ে দেয়। বহু বিশ্লেষকের মতে, এতে ইরিত্রিয়া ও টিপিএলএফের সহায়তাও ছিল।
সুদানে টাইগ্রে, আমহারা, ইরিত্রিয়া ও ওরোমিয়ার বিদ্রোহীদের যৌথ বৈঠক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।


বহিরাগত শক্তির প্রভাব
ইথিওপিয়ার প্রধান মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
তারা আবিয়কে থামাবে নাকি উল্টো উৎসাহ দেবে—তা স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে মিশর নীলনদের মেগা–ড্যাম ইস্যুতে ইথিওপিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে রয়েছে এবং ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। আবিয়ের বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্র পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে।


পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি
পশ্চিমা কূটনীতিকরা এখনও দুই পক্ষকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—গোপনে প্রক্সি যুদ্ধ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
মাত্র একটি ছোট উসকানিই পুরো অঞ্চলকে নতুন, ভয়াবহ ও বহু–দেশীয় যুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে।


#আফ্রিকা | #টাইগ্রে_সংঘাত | #ইথিওপিয়া | #ইরিত্রিয়া | #সুদান | #আঞ্চলিক_রাজনীতি | #আন্তর্জাতিক_সংকট | #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত এক পথচারী

টাইগ্রেকে কেন্দ্র করে আফ্রিকায় নতুন সংঘাতের আশঙ্কা

১১:৪৫:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় টাইগ্রে অঞ্চল ২০২০ থেকে ২০২২ সালের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দগদগে ক্ষত বহন করছে। পশ্চিমা ও আফ্রিকান মধ্যস্থতায় ২০২২ সালে হওয়া শান্তিচুক্তি তিন বছরের মাথায় ভেঙে পড়তে বসেছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনা আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে আবারও সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে, যা পুরো আফ্রিকার শিং অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।


টাইগ্রেতে চুক্তিভঙ্গ ও নতুন উত্তেজনা
৭ নভেম্বর টিপিএলএফ অভিযোগ করে যে প্রধানমন্ত্রী আবিয় আহমেদের সরকার শান্তিচুক্তি মানছে না এবং টাইগ্রে অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এর আগে আফারে টাইগ্রেয়ান বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সরকার–সমর্থিত মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
অভিযোগের জবাবে আবিয় সরকার টাইগ্রে অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
২৮ অক্টোবর পার্লামেন্টে আবিয় আহমেদ বলেন, তার সরকার যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুদ্ধ লাগলে “কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।” সেনাপ্রধানও হুঁশিয়ারি দেন—টিপিএলএফকে “সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না করলে” শান্তি সম্ভব নয়।
মেকেলেতে ব্যাংকে মানুষের ভিড়, বাজারে মজুতদারি—সবই আবারও যুদ্ধের আগাম সংকেত।


সংঘাত আরও বিপজ্জনক হওয়ার তিনটি কারণ

১. টিপিএলএফের অভ্যন্তরীণ কোন্দল
মার্চে টিপিএলএফের এক শক্তিশালী অংশ অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে সামরিক জেনারেলকে বসায়। এতে ক্ষুব্ধ বহু টাইগ্রেয়ান সেনা আফারে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় টিপিএলএফ-বিরোধী মিলিশিয়া গঠন করে। দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে।

২. ইথিওপিয়া–ইরিত্রিয়া সম্পর্কের ভাঙন
২০২০ সালের যুদ্ধে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়ার সঙ্গে লড়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে আবিয় টিপিএলএফের সঙ্গে সমঝোতার দিকে ঝুঁকলে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরে।
ইথিওপিয়ার সমুদ্রপথ পাওয়ার জোরালো দাবি ও ইরিত্রিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আবিয়ের প্রশ্ন তোলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যায়।
২১ অক্টোবর সীমান্তবর্তী বুড়ে এলাকায় ইথিওপিয়ার সেনাদের পরিদর্শন এবং নতুন ড্রোনঘাঁটির উপস্থিতি সম্ভাব্য যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়।

৩. সুদানের গৃহযুদ্ধের জটিল প্রভাব
সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এখন টাইগ্রেয়ান ও ইরিত্রিয়ার বড় মিত্র। ইরিত্রিয়া তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সুদানি বিমান আসমারায় দেখা গেছে। হাজারো টাইগ্রেয়ান যোদ্ধা সুদানের পক্ষে লড়ছে।
যদি ইথিওপিয়া–ইরিত্রিয়া যুদ্ধ শুরু হয়, এসএএফ নিশ্চিতভাবেই তাদের পাশে দাঁড়াবে।


আঞ্চলিক জোটের অস্থিরতা
টাইগ্রে এখন ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মাঝখানে সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র।
টিপিএলএফ আবিয় সরকারকে বড় হুমকি মনে করে পুরনো শত্রু ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। সীমান্তে দুই পক্ষের যোদ্ধাদের চলাচল, বাজারে ইরিত্রিয়ান মুদ্রা—সবই অস্বাভাবিক সমীকরণ তৈরি করছে।


আমহারা অঞ্চল ও ফানো মিলিশিয়ার অবস্থান
গত যুদ্ধে ইথিওপিয়ার পাশে থাকা আমহারা মিলিশিয়া ফানো এখন আবিয়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে।
সেপ্টেম্বরে তারা পূর্ব আমহারায় সরকারকে হটিয়ে দেয়। বহু বিশ্লেষকের মতে, এতে ইরিত্রিয়া ও টিপিএলএফের সহায়তাও ছিল।
সুদানে টাইগ্রে, আমহারা, ইরিত্রিয়া ও ওরোমিয়ার বিদ্রোহীদের যৌথ বৈঠক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।


বহিরাগত শক্তির প্রভাব
ইথিওপিয়ার প্রধান মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
তারা আবিয়কে থামাবে নাকি উল্টো উৎসাহ দেবে—তা স্পষ্ট নয়।
অন্যদিকে মিশর নীলনদের মেগা–ড্যাম ইস্যুতে ইথিওপিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে রয়েছে এবং ইরিত্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। আবিয়ের বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অস্ত্র পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে।


পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি
পশ্চিমা কূটনীতিকরা এখনও দুই পক্ষকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো—গোপনে প্রক্সি যুদ্ধ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
মাত্র একটি ছোট উসকানিই পুরো অঞ্চলকে নতুন, ভয়াবহ ও বহু–দেশীয় যুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে।


#আফ্রিকা | #টাইগ্রে_সংঘাত | #ইথিওপিয়া | #ইরিত্রিয়া | #সুদান | #আঞ্চলিক_রাজনীতি | #আন্তর্জাতিক_সংকট | #সারাক্ষণ_রিপোর্ট