ডেমোক্র্যাটদের দীর্ঘতম শাটডাউন থেকেও প্রাপ্তি সামান্য
ডেমোক্র্যাট পার্টিতে আনন্দ আর হতাশা প্রায়ই পাশাপাশি চলে। ৪ নভেম্বর নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার অফ-ইয়ার নির্বাচনে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করে তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বড় বার্তা দিতে সক্ষম হয়। এতে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে কিছুটা গতি তৈরি হয়। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেই আশাবাদ মিলিয়ে যেতে থাকে। সাতজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর এবং একজন স্বাধীন সিনেটর দল থেকে ভিন্ন অবস্থান নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে যুক্ত হন এবং দেশজুড়ে চলা দীর্ঘতম শাটডাউন শেষ করার স্বল্পমেয়াদি বিলের পক্ষে ভোট দেন।
শাটডাউন নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের প্রাপ্তি
৪০ দিনের অচলাবস্থার পরও ডেমোক্র্যাটদের প্রাপ্তি খুবই কম। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও সিনেট—উভয় কক্ষেই পাস হওয়া এবং ১২ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাক্ষরিত বিলটি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার চালু রাখবে। এতে শাটডাউনের সময় ছাঁটাই হওয়া সরকারি কর্মীদের পুনরায় কাজে ফেরানো এবং তাদের সব বকেয়া বেতন দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
তবে ডেমোক্র্যাটদের প্রধান দাবি—বছর শেষে শেষ হওয়া স্বাস্থ্যসেবা কর-ছাড় বাড়ানো—এই চুক্তিতে যোগ করা হয়নি। রিপাবলিকান সিনেট নেতা জন থুন কর-ছাড় বাড়ানোর বিষয়ে আগামী মাসে ভোট আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও, হাউসের বিরোধিতার কারণে সেই ভোট সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

বারবার শাটডাউন—এক অদ্ভুত বাস্তবতা
পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোর মধ্যে কেবল আমেরিকাতেই সরকার প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮০–এর দশকে শাটডাউন বেশি হলেও সেগুলো সাধারণত এক-দুই দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শাটডাউন আরও দীর্ঘ ও ক্ষতিকর হয়েছে। কেন দুই দলই এই ঝুঁকিপূর্ণ “গেম অব চিকেন” চালিয়ে যায়—সেটা মনোবিজ্ঞানীরাই ভালো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
এবার ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা দলকে চাপ দিচ্ছিলেন কিছু একটা করার জন্য। শাটডাউনই ছিল তাদের প্রতিক্রিয়া। কিন্তু শাটডাউন যত দীর্ঘ হলো, ততই আটজন ডেমোক্র্যাট সিনেটরের অবস্থান বদলে যায়। বিমানবন্দরে নিরাপত্তাজনিত কারণে ফ্লাইট কমে গিয়ে বড় ধরনের বিলম্ব তৈরি হয় এবং সামনে থ্যাঙ্কসগিভিং থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ‘ফুড স্ট্যাম্প’-এর তহবিল বন্ধ করার চেষ্টা করেন, যা ৪ কোটির বেশি মানুষকে সহায়তা দেয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা বেতন পেলেও ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন রাজ্য, শহর ও জেলাগুলোর বরাদ্দ—যা বিলিয়ন ডলার—কেটে দেওয়া হয়। এই আর্থিক চাপ ডেমোক্র্যাটদের কৌশল আরও দুর্বল করে দেয়।
‘ট্রাম্পকে প্রতিরোধ’—কৌশলে ব্যর্থতা
“ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কাজ দেয়নি। বরং তাকে আরও শক্তিশালী করেছে,” বলেন মেইনের স্বাধীন সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং, যিনি আলোচনার নেতৃত্ব দেন।
বেশিরভাগ জরিপে দেখা গেছে, জনগণ রিপাবলিকানদেরই বেশি দোষ দিচ্ছে। ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকানদের খারাপ ফলের কারণ শাটডাউন। তবুও রিপাবলিকানরা জানত, সময় যত যাবে—ততই কিছু মাঝারি ডেমোক্র্যাটকে তারা নিজেদের পক্ষে আনতে পারবে। যাঁরা দলত্যাগ করেছেন, তাঁদের রাজনৈতিক ঝুঁকিও কম—কারণ কেউই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী নন এবং দু’জন অবসর নিচ্ছেন।

দলের ভেতরেই ক্ষোভ ও বিভাজন
দলীয় কর্মীরা ডেমোক্র্যাট নেতাদের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্টকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে—যদিও কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই তাদের আসন সংখ্যা কম। তাদের ক্ষোভ অনেকটা ১০ বছর আগের রিপাবলিকানদের ‘টি পার্টি’ আন্দোলনের মতো ছিল। কেউ কেউ সিনেট ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমারের পদত্যাগও দাবি করেন, যদিও তিনি চুক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস সদস্য রো খানা বলেন, “সিনেটর শুমার কার্যকরী নন, তাঁকে প্রতিস্থাপন করা উচিত।” ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম পরিস্থিতিকে “লজ্জাজনক” বলে মন্তব্য করেন।
তবু আপাতত শুমার তাঁর দলের বেশিরভাগ সদস্যের সমর্থন ধরে রেখেছেন। কিন্তু আবারও প্রমাণিত হলো—প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার আগেই ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের মধ্যেই লড়াই করতে হয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















