দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১১ জন নিহত হওয়ার পর তদন্তে উঠে এসেছে নতুন তথ্য—ঘটনার আগে দিনের আলো এড়িয়ে হরিয়ানার নুহ জেলায় একটি ভাড়া ঘরে লুকিয়ে ছিলেন অভিযুক্ত গাড়িচালক ডা. মোহাম্মদ উমর উন-নবী। তাঁর গতিবিধি, ডিজিটাল ট্রেইল এবং সহযোগীদের নিয়ে এখন তদন্তে যুক্ত হয়েছে এনআইএ ও জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ।
৩০ অক্টোবর ফারিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে যান উমর। কেউ খেয়ালও করেনি তাঁর চলে যাওয়া। ১০ দিন পর জানা যায়—লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরিত হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটির চালক ছিলেন তিনিই।
তদন্তে উঠে এসেছে—উমর একটি সাদা-কলারের সন্ত্রাস নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন, যেখানে কয়েকজন চিকিৎসকও যুক্ত। বিস্ফোরণের আগের দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন হরিয়ানার নুহ জেলার একটি ভাড়া করা কক্ষে, যা দিল্লি থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে।
উমর কলেজ ছাড়েন তাঁর সহকর্মী ডা. মুযাম্মিল শাকীল গণাই গ্রেপ্তার হওয়ার পর। শ্রীনগরে ভারতবিরোধী পোস্টার উদ্ধার তদন্তে গণাই আটক হলে তল্লাশিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও জব্দ হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে উমরও পালিয়ে যান।
নুহে পালিয়ে লুকিয়ে থাকা
তদন্ত নথি অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর রাতে আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং স্টাফ শোবাহ খান উমরকে নুহ জেলার হিদায়াত কলোনিতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর বোন-শাশুড়ি আফসানা চার কক্ষের বাড়ির একটি রুম ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দেন—মাসিক ২ হাজার এবং ৪ হাজার টাকা জামানত।
আফসানার ১৩ বছরের মেয়ে জানান—“উমর কখনো দিনের বেলা বাইরে যেতেন না। তাঁর কাছে ছিল দুটি স্মার্টফোন। শুধু রাত হলে বের হতেন, রাস্তার খাবার খেতেন। ১১ দিন একই কাপড় পরে ছিলেন।”
মেয়েটি আরও বলে, তিনি কখনো গোসল বা রান্না করতেন না, বাজারেও যেতেন না। ৯ নভেম্বর রাতে হঠাৎ চলে গেলে ঘরে তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়। পরে টিভিতে বিস্ফোরণের খবর দেখে পরিবার আতঙ্কে পড়ে যায়। পুলিশ আফসানা ও তাঁর ভাইকে নিয়ে যায়।
তদন্তকারীদের পর্যবেক্ষণ
সংবাদকর্মীরা গেলে দেখা যায়—১০x১২ ফুটের কক্ষে শুধু একটি খাট রয়েছে। ঘরের সামনে পুলিশ পাহারা দিচ্ছিল।
ডিজিটাল ট্রেইল থেকে দেখা যায়—৩১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত ছয়টি সিসিটিভিতে ধরা পড়ে তাঁর গতিবিধি। রেওয়াসান ও খলিলপুর টোলপ্লাজায় তিনি দু’বার, সোহনার কাছে একবার এবং দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়েতে দু’বার ধরা পড়েন।
উমর যেদিন নুহতে কক্ষ ভাড়া নেন, সেদিনই বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি নুহে নিয়ে যান। আফসানার বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে নুহ-আলওয়ার হাইওয়েতে গাড়িটি রেখে দেন—সম্ভবত নজর এড়াতে।
বিস্ফোরণের আগের ২৪ ঘণ্টা
টোল রেকর্ড অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর রাত ১০:৪৫-এ তিনি হিদায়াত কলোনি ছাড়েন। ১১:৪৪-এ খলিলপুর টোল অতিক্রম করেন। এরপর দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়েতে বিকল একটি ট্রাকের পাশে প্রায় তিন ঘণ্টা ৩০ মিনিট গাড়ি রেখে অপেক্ষা করেন।
১০ নভেম্বর সকাল ৮:১৩-এ তাঁর গাড়ি দিল্লিতে প্রবেশ করে। এরপর অশোক বিহার ও আসফ আলী রোডের একটি মসজিদের কাছে সিসিটিভিতে গাড়িটি ধরা পড়ে।
সন্ধ্যা ৬:৫২-এ লালকেল্লার কাছে সিগন্যালে গাড়িটি থামতেই বিস্ফোরণ ঘটে। উমরসহ কমপক্ষে ১১ জন নিহত হন।
নুহে অভিযান ও আরও গ্রেপ্তার
এনআইএ–র সহযোগিতায় দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল ইতোমধ্যে নুহ এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন এবং সহযোগিতা প্রদানকারী সন্দেহভাজনরা।
প্রতিবেশীদের সন্দেহ ও কর্মকর্তাদের মন্তব্য
হিদায়াত কলোনির বাসিন্দারা আগেই আফসানাকে সতর্ক করেছিলেন। স্থানীয় মোহাম্মদ জাবেদ বলেন—“লোকটি কখনো দিনের বেলা দেখা যেত না। গাড়িটিও দূরে পার্ক করা ছিল। আমাদের মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ঠিক নেই।”
তদন্তকারী এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন—“এটি কোনো হঠকারী কাজ ছিল না। উমর প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছিলেন। বাইরে লুকিয়ে থাকার মতো দেখালেও তিনি বড় পরিকল্পনার অংশ ছিলেন। বিস্ফোরণ না হলে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারত।”
দিল্লি বিস্ফোরণ | নুহ অভিযান | সন্ত্রাস তদন্ত | সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















