কামডেন — মেইনের সমুদ্রতীরের শান্ত, পোস্টকার্ড সদৃশ শহর। চারপাশে পুরনো বাড়ি, অ্যান্টিক দোকান, লবস্টার রোলের গন্ধ। কিন্তু এই নিস্তব্ধতার মাঝেই চলছে এক অদ্ভুত অপরাধের গল্প—যা আগাথা ক্রিস্টির পুরো একটি উপন্যাস হয়ে উঠতে পারত।
গোপনে গাছ হত্যার নাটক
কামডেনে আমেলিয়া বন্ড নামের এক মহিলা রাতের আঁধারে প্রতিবেশীর বাগানে ঢুকছেন। তাঁর হাতে কোনো ছুরি – কাঁচি নয় — পকেট ভরা বিষ। লক্ষ্য লিসা গোরম্যানের সম্পত্তির ৭০-ফুট উঁচু বহু পুরনো ওক গাছ, যা বন্ডের বাড়ির জানালা দিয়ে সমুদ্রের দৃশ্য ঢেকে দিচ্ছিল।
তিনি ব্যবহার করেছিলেন টেবিউথিউরন — হাইওয়ে ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ব্যবহৃত শক্তিশালী ঝোপঝাড় ধ্বংসকারী রাসায়নিক।
কয়েক মাস পর গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে বন্ড নিজেই গোরম্যানকে বলেন — গাছগুলো ‘ভালো দেখাচ্ছে না’। এমনকি খরচ ভাগাভাগি করে গাছ কাটার প্রস্তাবও দেন। সন্দেহ জাগতেই গোরম্যান গাছের নমুনা পরীক্ষায় পাঠান। এরপর শুরু হয় আইনজীবী, গণমাধ্যম ও জনরোষের ঝড়।
পূর্ব উপকূলে গাছ হত্যার বাড়তি ঘটনা
এটিই প্রথম নয়। ম্যাসাচুসেটসের ন্যানটাকেটে জোনাথন জ্যাকবির বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবেশীর ১৬টি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগে মামলা হয়। এরপর তিনি নিজের বাড়ি ১ কোটি ডলারে বিক্রির তালিকায় তোলেন — বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল ‘নতুন সমুদ্র দৃশ্য’।
এমন ঘটনা এত বেড়েছে যে রেডিটে r/treelaw নামে একটি ফোরাম তৈরি হয়েছে — যেখানে মানুষ গাছ হত্যার ঘটনা শেয়ার করে এবং প্রতিকার খোঁজে।

কামডেনের বাসিন্দাদের মতে এটি “অমার্জনীয় অপরাধ” — অনেকে বন্ড দম্পতিকে “খারাপ মানুষ” বলে মন্তব্য করেছেন।
অর্থনীতিবিদদের চোখে — এটি এক ‘বুদ্ধিমানের অপরাধ’
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর গ্যারি বেকার তাঁর ‘rational crime’ তত্ত্বে বলেন — মানুষ অপরাধ করে তখনই, যখন অপরাধের সম্ভাব্য লাভ শাস্তি ও ধরা পড়ার ঝুঁকির তুলনায় বেশি মনে হয়।
ধনীদের গাছ হত্যা এই সমীকরণের নিখুঁত উদাহরণ — কারণ এটি পরিকল্পিত এবং লাভ সুস্পষ্ট: সমুদ্র দৃশ্য বাড়লে বাড়ির মূল্য হঠাৎ বেড়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: গোরম্যানের গাছ শুকিয়ে যাওয়ার পর বন্ডের বাড়ির দৃশ্য ‘good’ থেকে ‘very good’ হয়। এতে বাড়ির দামে প্রায় পাঁচ লাখ ডলার বৃদ্ধি পায় — যে জমির আগের দাম ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার।
আইন কী বলে: শতাব্দী পুরনো বিধান
আমেরিকায় গাছ কাটা অপরাধ বহু পুরনো আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ১৬৯৮ সালেই ম্যাসাচুসেটসে প্রথম আইন হয় — ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ কাটলে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গাছের মূল্য নির্ধারণ করেন আর্বোরিস্টরা। আর্বোরিস্ট মার্টি শ’ বলেন, বড় গাছের দাম ১ লাখ থেকে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
৭০-ফুট ওক গাছ কেনা, রোপণ, টিকে থাকা নিশ্চিত করা — সবই প্রায় অসম্ভব।
অবশেষে বন্ড গোরম্যানকে ১৬ লাখ ডলারে সমঝোতা করতে বাধ্য হন।

কেন আইনও কখনো অপরাধ ঠেকাতে পারে না
তিনগুণ ক্ষতিপূরণের বিধান থাকা সত্ত্বেও বন্ড অপরাধ করেছেন — কারণ তাঁর ধারণা ছিল ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।
যদি ধরা পড়ার ঝুঁকি ২৫% – ও ধরা হয়, তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে এই অপরাধ তাঁর কাছে লাভজনকই মনে হয়েছে।
ন্যানটাকেটে পুলিশ আরও কঠোর হয় — জ্যাকবির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলে, যেখানে তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। পরে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
গাছ কাটার ক্ষতি ব্যক্তিগত নয় — সামাজিকও
আর্বোরিস্ট মার্টি শ’ বলেন — মানুষ গাছের প্রকৃত মূল্য ভাষায় বোঝাতে পারে না, কিন্তু গভীরভাবে অনুভব করে।
একটি গাছ কাটলে তার যে সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি হয়, তা অর্থে মাপা কঠিন।
তাই কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি — যদিও জেল শাস্তি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে সবসময় যৌক্তিক নাও হতে পারে।
# পরিবেশ # অপরাধ_অর্থনীতি #যুক্তরাষ্ট্র _সংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















