বিশ্বব্যাপী কফি ব্যবসার আগের উচ্ছ্বাস এবার ম্লান হয়ে আসছে। দুর্বল ফসল, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি এবং কফির দাম বৃদ্ধির কারণে পশ্চিমা দেশে কফি খাওয়ার প্রবণতা কমছে। ৪০০ বিলিয়ন ডলারের এই বাজারে বড় ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি কমে যাওয়ায় তারা এখন চীনের মতো নতুন বাজারের দিকে ঝুঁকছে। তবে এই পথ দীর্ঘ, ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চিত।
পশ্চিমা বাজারে কফির উত্থান ও পতন
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে কফির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। স্টারবাকস, নেসলে, জেডিই পিটস, প্রেট এ মঞ্জে এবং কোস্টার মতো ব্র্যান্ডগুলো পশ্চিমা শহরগুলোতে দোকান ও পণ্য বাড়াতে থাকে। ২০১৮ সালে নেসলে স্টারবাকস-পণ্য বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করার জন্য ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। একই বছর জেএবি ফান্ড প্রেট এ মঞ্জেতে বড় বিনিয়োগ করে, আর কোকা-কোলা ৫ বিলিয়নে কোস্টা অধিগ্রহণ করে।
কিন্তু এই বিনিয়োগগুলো থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা আসেনি। ফসলের দাম বাড়ায় কফির দাম বেড়ে গেছে, ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপে থাকা ক্রেতারা কফি কম কিনছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গ্রাউন্ড কফির এক পাউন্ডের দাম এখন ৯ ডলার—২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। গত এক বছরে কফির দাম বেড়েছে ৯%।
ফসল সংকট, আবহাওয়ার প্রভাব ও বাড়তি ব্যয়
চরম আবহাওয়া—খরা, বন্যা, তুষারপাত—ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো প্রধান উৎপাদনকারী দেশের ফসলকে ঝুঁকিতে ফেলছে। অন্যদিকে বারিস্টাদের বেতন, ভাড়া, কর এবং কাঁচামালের ব্যয় মিলিয়ে এক কাপ কফির দামের প্রায় ৯০% খরচ হিসেবেই চলে যায়। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ায় সুইজারল্যান্ড (নেসপ্রেসোর পড উৎপাদন) এবং ব্রাজিলের মতো দেশের পণ্যের খরচ আরও বেড়েছে।
যদিও ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খাদ্যের ওপর শুল্কের প্রভাব কমাতে চান, তবুও কফির সামগ্রিক খরচ কমার সম্ভাবনা আপাতত কম।

বাজারে অস্থিরতা ও কফি জায়ান্টদের সংকট
১০০ বিলিয়ন ডলারের স্টারবাকস এখন ঘন ঘন মুনাফা সতর্কতা দিচ্ছে এবং নতুন সিইও ব্রায়ান নিকলের অধীনে ১% দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিউরিগ ড. পেপারের ১৮ বিলিয়ন ডলারে জেডিই পিটস কিনে নেওয়ার উদ্যোগ দেখাচ্ছে বাজার কীভাবে কম মূল্যায়নের দিকে যাচ্ছে।
এমনকি কোকা-কোলাও কোস্টা বিক্রির পথ খুঁজছে। কোম্পানির সিইও স্পষ্ট বলেছেন—এই বিনিয়োগ প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল দেয়নি। প্রেট এ মঞ্জের মূল্যায়ন কমে যাওয়াও একই সংকেত দিচ্ছে।
উচ্চ ঘনত্বের বাজার: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্রে স্টারবাকস ও ডানকিন’—দুটি ব্র্যান্ড মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০। যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন খাওয়া হয় ৯৮ মিলিয়ন কাপ কফি, এবং দেশের ২০% মানুষ প্রতিদিন কোনো না কোনো কফিশপে যান। ফলে এই বাজারে আর উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখার সুযোগ কম।
নতুন লক্ষ্য: চীন ও লাতিন আমেরিকা
এই পরিস্থিতিতে নেসলে, জেডিই পিটস এবং স্টারবাকস নতুন বাজার খুঁজছে। চীন ও দক্ষিণ আমেরিকায় কফি খাওয়ার প্রবণতা বাড়লেও তা তুলনামূলকভাবে খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। স্টারবাকস লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে নতুন ১৪৫টি দোকান খোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। নেসলের নতুন সিইওও এসব বাজারে নতুন পণ্য আনার কথা জানিয়েছেন।
তবে এসব দেশে বড় চ্যালেঞ্জ আছে। দক্ষিণ আমেরিকায় আয় কম, ফলে লাভের মার্জিনও কম। চীনে স্টারবাকস তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ে গেছে স্থানীয় কমদামি কফি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে। দ্রুত দোকান বাড়ালেও নকল বা নিম্নমূল্যের কফিশপগুলো বাজার দখল করে ফেলে।
পশ্চিমা বাজারের স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে কফি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন দেশই ভরসা। কিন্তু এসব বাজারে লাভ তুলতে হলে দীর্ঘ সময়, বিপুল বিনিয়োগ এবং স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই সামনে বড় কফি ব্র্যান্ডগুলোকে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে তুলনামূলকভাবে দুর্বল এক ‘নতুন ব্রু’-এর জন্য।
#কফি-বাজার #বিশ্বব্যবসা #ব্র্যান্ড-সংকট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















