গোপন নেটওয়ার্কের দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রকাশ
ভারতের রাজধানী দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণ তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি—পুলওয়ামা–ফরিদাবাদ অঞ্চলে সক্রিয় এক স্ব-র্যাডিক্যালাইজড ইসলামিস্ট নেটওয়ার্ক অন্তত তিন বছর ধরে ভারতের ভেতরে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা গোপন জঙ্গি মডিউল শনাক্তে নতুন করে তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে।
আত্মঘাতী জঙ্গির সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য
তদন্তের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভাষ্য—লালকেল্লা হামলার আত্মঘাতী জঙ্গি ড. উমর উন নবীর সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিন তরুণ চিকিৎসক ড. নবী, ড. মুজাম্মিল শাকিল ও ড. আদিল রাথের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন ‘আবু আকাশা’ নামে এক ব্যক্তি।
২০২২ সালে তারা তুরস্কে গিয়ে আরও দুই ইসলামিস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে—তাদের উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানে গিয়ে কথিত ‘মুসলিম নিপীড়ন’-এর নাম করে জিহাদে যুক্ত হওয়া। বর্তমানে গোয়েন্দারা ছদ্মনামে থাকা ব্যক্তিদের প্রকৃত পরিচয় চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
নতুন বিস্ফোরক কৌশলে উদ্বেগ
তদন্তে উঠে এসেছে আরেকটি তথ্য—জঙ্গিরা এমন একটি বিশেষ রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করেছে যা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে IED-এর আগুন ধরার তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
এ কারণেই নওগাঁও থানায় জব্দ করা নমুনা পরীক্ষা করার সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে নয়জন নিহত হন।
পাকিস্তান বা জইশ-ই-মোহাম্মদের সরাসরি সম্পৃক্ততা নিশ্চিত না হলেও এই নতুন কৌশল ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উদ্বিগ্ন করছে।

ঘরোয়া জঙ্গি সেল শনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠছে
গোয়েন্দা সংস্থার মতে—সীমান্তপারের জঙ্গিদের ইলেকট্রনিক ট্রেস পাওয়া গেলেও, দেশীয় স্ব-র্যাডিক্যালাইজড সেলগুলো প্রায় কোনও ডিজিটাল চিহ্ন রেখে যায় না।
সম্প্রতি গুজরাট এটিএস হায়দরাবাদের এক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি পাকিস্তানের নির্দেশে ‘আইএসকেপি’ পরিচয়ে রিসিন তৈরির চেষ্টা করছিলেন।
তবে লালকেল্লা হামলার ক্ষেত্রে এমন কোনও ইন্টারসেপ্ট পাওয়া যায়নি, যা গোয়েন্দাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণদের দ্রুত র্যাডিক্যালাইজেশন
এনআইএসহ বিভিন্ন সংস্থা ষড়যন্ত্রের পুরো নেটওয়ার্ক উদঘাটনে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে বড় আশঙ্কা—সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তরুণ মুসলমানদের লক্ষ্যভিত্তিক প্রোপাগান্ডায় দ্রুত র্যাডিক্যালাইজ করা।
বিশ্বজুড়ে সংঘাতের বিকৃত বা সাজানো ছবি ছড়িয়ে ‘মুসলিম শিকারবোধ’ তৈরি করা হচ্ছে, যা জঙ্গিবাদের জন্য উর্বর ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—র্যাডিক্যালাইজেশন রুখতে দরকার কঠোর তথ্য-যাচাই, ভ্রান্ত প্রচার মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সক্রিয় সামাজিক সংযোগ স্থাপন।
ভারতের নতুন অগ্রাধিকার: ছড়িয়ে থাকা মডিউল ধ্বংস
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন দেশজুড়ে লুকিয়ে থাকা জঙ্গি মডিউল শনাক্ত ও ধ্বংস করাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
কাশ্মীর ভ্যালি দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান-মদদপুষ্ট র্যাডিক্যালাইজেশনের বেশি প্রভাবে থাকায় নজর সেদিকেই বেশি; তবে ভারতের মূল ভূখণ্ডেও স্থানীয় সেল সক্রিয় থাকতে পারে—যা নতুন করে শঙ্কা বাড়িয়েছে।

লালকেল্লা বিস্ফোরণের প্রভাব
এই বিস্ফোরণ ভারতকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—স্ব-র্যাডিক্যালাইজড সেল, উন্নত বিস্ফোরক কৌশল এবং সোশ্যাল মিডিয়া–নির্ভর র্যাডিক্যালাইজেশন ভবিষ্যতে আরও বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
তাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে—দেশজুড়ে জঙ্গি নেটওয়ার্ক নির্মূল করাই জরুরি হয়ে উঠেছে।
#tags খবর | ভারত | সন্ত্রাসবাদ | লালকেল্লা বিস্ফোরণ | নিরাপত্তা | সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















