যুক্তরাজ্যের নতুন এক গবেষণা জানায়, যৌনসম্পর্কে জড়িত ১৮ বছরের কম বয়সী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ-তরুণী শ্বাসরোধ বা শ্বাসরোধের চেষ্টা করার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই আচরণকে অনেক তরুণ এখন স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করছে, যা বিশেষজ্ঞদের গভীর উদ্বেগের কারণ।
গবেষণার মূল তথ্য
ইনস্টিটিউট ফর অ্যাড্রেসিং স্ট্র্যাঙ্গুলেশন (IFAS) পরিচালিত সমীক্ষা অনুযায়ী বলা হয়েছে যে ১৬ ও ১৭ বছর বয়সী যৌনসম্পর্কে জড়িত কিশোর-কিশোরীদের ৪৩ শতাংশ শ্বাসরোধের অভিজ্ঞতা পেয়েছে। ৩৫ বছরের নিচের অর্ধেকের বেশি মানুষ এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভুলভাবে মনে করে যে ‘নিরাপদ’ উপায়ে শ্বাসরোধ করা সম্ভব। যারা শ্বাসরোধের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ১ শতাংশ জানিয়েছে যে তারা স্পষ্টভাবে এতে সম্মতি দেয়নি।
সম্মতির প্রশ্ন
গবেষণা দেখায়, শ্বাসরোধকারী ব্যক্তিরা নিজের আচরণকে অধিকতর ‘সম্মতিপূর্ণ’ মনে করে, যা ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলে না। IFAS-এর গবেষণা ব্যবস্থাপক ও রিপোর্টের লেখক হ্যারিয়েট স্মেইলস বলেন যে এই তথ্য তরুণদের সিদ্ধান্ত, প্রভাব এবং যৌনসম্পর্কে শ্বাসরোধ নিয়ে তাদের উপলব্ধির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে।

অভিজ্ঞতা ও শারীরিক ঝুঁকি
যাদের শ্বাসরোধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ ভয় পেয়েছে। ২১ শতাংশ মাথা ঘোরা, অচেতন হয়ে পড়ে সহ বিপজ্জনক উপসর্গের সম্মুখীন হয়েছে। পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে শিকার হওয়ার হার কাছাকাছি হলেও শ্বাসরোধ করার প্রবণতা পুরুষদের মধ্যে অনেক বেশি। যারা অন্যকে শ্বাসরোধ করেছে তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ জানায় যে তারা এটি ৫০ বারেরও বেশি করেছে।
অনলাইন পর্নোগ্রাফির প্রভাব
বছরের শেষেই যুক্তরাজ্যে শ্বাসরোধ ও শ্বাসরুদ্ধ করার দৃশ্যযুক্ত পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোকে এমন কন্টেন্ট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশ পর্নোগ্রাফিক ভিডিওকেই শ্বাসরোধ সম্পর্কিত তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতামত
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন বলেন, পর্নোগ্রাফিতে শ্বাসরোধের দৃশ্য তুলনামূলক নতুন হলেও তা অত্যন্ত সহিংস। বেল্ট, প্লাস্টিক ব্যাগ এবং দুই হাতে গলা চেপে ধরা—এ ধরনের নির্মম দৃশ্য সেখানে দেখা যায়। তিনি শ্বাসরোধের ঝুঁকি নিয়ে জাতীয় প্রচারণার দাবি জানিয়েছেন।
শারীরিক ও মানসিক প্রভাব
সমীক্ষায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতি ৫০ জনে একজন অচেতন হয়ে পড়েছে। একই সংখ্যক ব্যক্তি প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেনি। প্রতি ১০০ জনে একজন মলত্যাগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ বুঝতেই পারেনি যে এসব উপসর্গ বিপজ্জনক, তাই তারা চিকিৎসা নেননি।

বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যের সতর্কতা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার শ্বাসরোধের অভিজ্ঞতা নারীদের মস্তিষ্কে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারে—যেমন কোষ ক্ষতি, মস্তিষ্কের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়া। IFAS-এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর প্রফেসর ক্যাথ হোয়াইট বলেন, অল্প সময়ের শ্বাসরোধও জীবনভর চলা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, অনেকেই বিষয়টিকে “আরও বেশি আনন্দ” বা “উত্তেজনা” হিসেবে দেখে, কিন্তু বাস্তবে এসব অনুভূতি অক্সিজেন-স্বল্পতার ফল, যা মস্তিষ্কের কোষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাঁর ভাষায়, শ্বাসরোধ—বিশেষত বারবার শ্বাসরোধ—নার্ভ ক্ষতি, মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। কয়েক সেকেন্ডের সিদ্ধান্ত সারা জীবনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















