দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে একসময় বিচরণ করা ইউরোপীয় বন্য বিড়াল আবারও ডেভনের বনে ফিরতে পারে। দুই বছরব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে—উপযুক্ত বনভূমি, বাসস্থান ও জনসমর্থন থাকায় এই পুনঃপ্রবর্তন প্রকল্প সফল হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
ডেভনে কেন উপযুক্ত পরিবেশ
বন্য বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম ফেলিস সিলভেস্ট্রিস। মাঝ-ডেভনে প্রজাতিটি গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অনুপস্থিত। গবেষণায় ডেভনের যে বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে: ঘন বনাঞ্চল লুকানোর জায়গা ও বাচ্চা লালন–পালনের জন্য উপযুক্ত। নিম্ন-ঘনত্বের তৃণভূমি ও ঝোপঝাড় শিকার ধরার জন্য সহায়ক। প্রাকৃতিক বাসস্থানগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত, যা টিকে থাকার পরিবেশ তৈরি করবে।
মানুষ, পশুপাখি ও পোষা প্রাণীর নিরাপত্তা
গবেষণা বলছে, বন্য বিড়ালের উপস্থিতি মানুষ, গবাদিপশু বা পোষা প্রাণীর জন্য কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না। বন্য বিড়ালের খাদ্যের ৭৫ শতাংশই ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী—ভোল, ইঁদুর, খরগোশ ইত্যাদি। বাদুড় বা ডর্মাউসের মতো বিপন্ন প্রজাতির ওপর তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব নেই। মুরগি বা অন্যান্য গৃহপালিত পাখি শিয়ালের মতোই একই সতর্কতা নিলে নিরাপদ থাকবে।
স্থানীয় জনসমর্থন
ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের পরিচালিত দুটি জরিপে দেখা যায়, এক হাজার মানুষের মধ্যে ৭১ শতাংশ বন্য বিড়ালের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্য এক জরিপে ১,৪২৫ জনের মধ্যে ৮৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সফল পুনঃপ্রবর্তনের শর্ত
সফলভাবে বন্য বিড়াল ফিরিয়ে আনতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ প্রয়োজন: স্থানীয় মানুষ ও বিড়াল কল্যাণ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়। গৃহপালিত ও বন্য–ফেরাল বিড়ালের নির্বীজন কর্মসূচি—কারণ স্কটল্যান্ডে বন্য বিড়ালের সঙ্গে গৃহপালিত বিড়ালের সংকরায়ণ বড় হুমকি।
কে করছে এই গবেষণা
সাউথ ওয়েস্ট ওয়াইল্ডক্যাট প্রজেক্ট ২০২৩ সালে গঠিত হয়। এর নেতৃত্বে রয়েছে ডেভন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট। অংশীদার হিসেবে আছে ফরেস্ট্রি ইংল্যান্ড এবং রি-ওয়াইল্ডিং বিশেষজ্ঞ ডেরেক গাও কনসালটেন্সি। তারা দুই বছর ধরে বন্য বিড়াল পুনঃপ্রবর্তনের সম্ভাবনা, পরিবেশগত প্রভাব, দীর্ঘমেয়াদি টিকে থাকা এবং মানুষের প্রতিক্রিয়া—সবই পর্যালোচনা করেছে।
স্কটল্যান্ডের অভিজ্ঞতা
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে একমাত্র বন্য বিড়াল জনসংখ্যা টিকে আছে স্কটিশ হাইল্যান্ডসে। ১৯৮৮ সালে সুরক্ষার মর্যাদা পেলেও এখন বন্যে মাত্র প্রায় ১১৫টি বিড়াল বেঁচে আছে। তাই স্কটল্যান্ডে চলমান বন্দী প্রজনন কর্মসূচি থেকে ডেভনের জন্য বিড়াল সংগ্রহ করা হবে। এদের সন্তানরাই পর্যায়ক্রমে মুক্ত প্রকৃতিতে ছাড়া হতে পারে—তাও ২০২৭ সালের আগে নয়।

ইতিহাসের ধারায় বন্য বিড়াল
দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে একসময় বন্য বিড়ালকে বলা হত “উডক্যাট”। ব্যাপক নিধন, মানব চাপ এবং বাসস্থানের ক্ষয়–ক্ষতির কারণে ১৯শ শতকের মাঝামাঝি এক্সমুর এলাকায় তাদের শেষ দেখা মেলে।
প্রকল্পের নেতৃত্বের মন্তব্য
সাউথ ওয়েস্ট ওয়াইল্ডক্যাট প্রজেক্টের প্রধান ক্যাথ জেফস বলেন: “এই অতিমাত্রায় বিপন্ন প্রজাতির প্রত্যাবর্তন আমাদের দেশীয় বন্যপ্রাণ পুনরুদ্ধারের বড় একটি ধাপ হবে। এটি পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেও ভূমিকা রাখবে। তবে প্রথম বন্য বিড়াল ছাড়ার আগে এখনো অনেক কাজ বাকি। স্থানীয়দের সঙ্গে খোলামেলা ও সৎ আলোচনাই হবে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”
গবেষণাটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে—ডেভনে পর্যাপ্ত বনভূমি, সংযুক্ত বাসস্থান ও জনসমর্থন আছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সহযোগিতা পেলে বহু বছর পর আবারও দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের অরণ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে বিলুপ্তপ্রায় ইউরোপীয় বন্য বিড়াল।
#wildcat #Devon #environment #conservation
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















