অস্ট্রেলিয়ান মিউজিকের বৈচিত্র্য এক মঞ্চে
অস্ট্রেলিয়ার সংগীতজগতের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত আসর এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ শুরু হয়েছে সিডনির হর্ডেন প্যাভিলিয়নে। শিল্পী, প্রযোজক থেকে শুরু করে লেবেল নির্বাহী—সবাই জড়ো হয়েছেন এই উৎসবে, আর মঞ্চের ভেতরের প্রতিটা মুহূর্ত নিয়ে সরাসরি আপডেট দিচ্ছে রোলিং স্টোন অস্ট্রেলিয়া। এ বছর সবচেয়ে বেশি, আটটি মনোনয়ন পেয়েছেন ইলেকট্রনিক প্রযোজক নিনাজারাচি, তার প্রথম অ্যালবাম আই লাভ মাই কম্পিউটার নিয়ে। ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন ডান্স মিউজিক তারকা ডম ডোলা এবং ট্রিও ব্যান্ড আরইউএফইউএস ডু সোল; তিনজনের উপস্থিতিই দেখাচ্ছে—অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার পপ আলোচনায় এখন নাচের বিট ও ইলেকট্রনিক সাউন্ড কতটা কেন্দ্রে চলে এসেছে।
অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার বিভাগে তালিকাটা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে দেশটির বৈচিত্র্যময় সংগীতমানচিত্র। নিনাজারাচির পাশাপাশি আছেন আমিল অ্যান্ড দ্য স্নিফার্স, মিসি হিগিন্স, আরইউএফইউএস ডু সোল এবং থেলমা প্লাম—পাঙ্ক রক থেকে সিঙ্গার-সংরাইটার, ডান্স থেকে ইন্ডি-পপ, এক সঙ্গে একই বিভাগে লড়ছেন। বেস্ট সলো আর্টিস্ট ক্যাটাগরিতে আইকনিক নাম কাইলি মিনোগ, পল কেলি ও মিসি হিগিন্সের পাশাপাশি জেনারেশন বদলের প্রতিনিধি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন মলর্যাট, ডম ডোলা ও দ্য কিড লারয়। পুরোনো ও নতুনের এই মিশ্রণই তৈরি করেছে এমন এক প্রত্যাশা, যেখানে একই রাতে নস্টালজিক মুহূর্তের সঙ্গে দেখা মিলতে পারে একাধিক ব্রেকথ্রু জয়ের।
জেনারভিত্তিক বিভাগে বিস্তৃত উপস্থিতি
শুধু বড় ক্যাটাগরি নয়, এআরআইএ অ্যাওয়ার্ডে স্বীকৃতি পাচ্ছে বিভিন্ন ধারার সংগীত। বেস্ট হিপ হপ / র্যাপ রিলিজ বিভাগে রয়েছেন হিলটপ হুডস, ওয়ানফোর ও মিস কানিন্না; আর বেস্ট পপ রিলিজে মনোনীত হয়েছেন জি ফ্লিপ, কিটা আলেক্সান্ডার ও মলর্যাটসহ আরও অনেকে। ডান্স ও ইলেকট্রনিক রিলিজ বিভাগে কনফিডেন্স ম্যান, ফিশার, সনি ফোডেরা প্রমুখের পাশাপাশি নিনাজারাচির অ্যালবামও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে—যা প্রমাণ করে ক্লাবমুখী এই সাউন্ডগুলো এখন অস্ট্রেলিয়ার চার্ট ও ফেস্টিভ্যাল লাইনআপেরও কেন্দ্রবিন্দু।
ব্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে বেস্ট গ্রুপ বিভাগে তালিকা আরও বৈচিত্র্যময়—পাঙ্কধারার আমিল অ্যান্ড দ্য স্নিফার্সের পাশাপাশি আছেন ফোকবিচ ট্রিও, ইন্ডি-রক ব্যান্ড রয়েল ওটিস এবং হিলটপ হুডসের মতো দীর্ঘদিনের প্রিয় নাম। মাইকেল গুডিনস্কির নামে দেওয়া ব্রেকথ্রু আর্টিস্ট পুরস্কারে মিয়া রে, ইয়াং ফ্রাঙ্কো ও গাট হেলথের মতো নতুনদের মনোনয়ন আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে তাদের ক্যারিয়ার। অনেকের জন্যই এই পুরস্কার আন্তর্জাতিক বুকিং, বড় উৎসবে পারফরম্যান্স ও নতুন রিলিজের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
গ্লোবাল মঞ্চে যাওয়ার সোপান
এ বছরের অনুষ্ঠান এমন এক সময় হচ্ছে, যখন অস্ট্রেলিয়ান শিল্পীরা ক্রমেই বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করছেন। দ্য কিড লারয় আন্তর্জাতিক দর্শক দ্রুতই বাড়াচ্ছেন, কাইলি মিনোগ এখনও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পপ কালচারে গুরুত্বপূর্ণ নাম, আর ডম ডোলার মতো প্রযোজকেরা বড় বড় উৎসবের হেডলাইনার তালিকায় নিয়মিত। বিপরীতে, স্থানীয় উৎসব ও ভেন্যুগুলো বাড়তি খরচ ও পাল্টে যাওয়া দর্শক অভ্যাসের চাপে টিকে থাকার লড়াই করছে। ফলে জাতীয় স্বীকৃতি ও মিডিয়া কাভারেজ অনেকের কাছে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আয়োজকেরা এ বছর বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নও সামনে এনেছেন—কোন জেনারে কত নারী বা আদিবাসী শিল্পী জায়গা পাচ্ছেন, নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা কতটা সমান সুযোগ পাচ্ছেন, সেসব নিয়ে আলোচনা চলছে অনুষ্ঠান ঘিরে। একই সঙ্গে টিকটকের মতো সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হওয়া গান আর ঐতিহ্যগত রেডিও-টিভি প্রমোশনের মধ্যে ব্যবধান কীভাবে পেরোনো যায়, তাও শিল্পী ও লেবেলদের বড় প্রশ্ন।
গৃহে বসে টিভি কিংবা স্ট্রিমিংয়ে অনুষ্ঠান দেখছেন যারা, তারা খুঁজছেন চমকপ্রদ পারফরম্যান্স, অপ্রত্যাশিত যৌথ পরিবেশনা আর প্রিয় শিল্পীদের স্বীকৃতি পাওয়ার মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত জয় যেই পাক, ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড অস্ট্রেলিয়ান সংগীতের বর্তমান অবস্থাকে এক ছবিতে ধরবে—এবং ইঙ্গিত দেবে, এখান থেকে তারা সামনে কোন পথে হাঁটতে চায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















