নতুন বোর্ড ও নির্বাহী পরিচালকের হাতে দায়িত্ব
বাণিজ্যিক সোশ্যাল মিডিয়ার বিকল্প হিসেবে পরিচিত ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম মাষ্টডন বড় ধরনের সাংগঠনিক পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, আর মাষ্টডন ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ নন-প্রফিট কাঠামোতে রূপ নিচ্ছে। এর মাধ্যমে নতুন এক বোর্ড অব ডিরেক্টরস এবং নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ করা হবে, যারা নীতিনির্ধারণ ও দৈনন্দিন পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন। রখকো পরামর্শক হিসেবে যুক্ত থাকবেন, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর একক ক্ষমতাধর থাকবেন না—এটাই এই কাঠামো পরিবর্তনের অন্যতম লক্ষ্য।
টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বোর্ডে থাকছেন টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিজ স্টোনসহ ওপেন ইন্টারনেট ও নাগরিক অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন মুখ্য ব্যক্তি। নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ফেলিক্স হ্লাটকি; পাশাপাশি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, কমিউনিকেশনস হেড এবং স্ট্র্যাটেজি ও প্রোডাক্ট অ্যাডভাইজরসহ ছোট কিন্তু পূর্ণকালীন একটি দল গড়ে তোলা হয়েছে। মাষ্টডনের পূর্ণকালীন কর্মীর সংখ্যা আপাতত প্রায় এক ডজনের মতো, যা বিশ্বজুড়ে লাখো ব্যবহারকারীর প্ল্যাটফর্মের জন্য তুলনামূলকভাবে ছোট।
বার্নআউট, বিকেন্দ্রীকরণ ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
রখকো নিজেই স্বীকার করছেন, দীর্ঘদিনের ক্লান্তি বা বার্নআউটও এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ। প্রায় এক দশক ধরে তিনি একাই মাষ্টডনের মূল ডেভেলপার, নীতিনির্ধারক ও মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছেন। টুইটার তথা এক্স-এ একের পর এক বিতর্ক শুরু হলে যে ঢেউয়ে নতুন ব্যবহারকারীরা মাষ্টডনে চলে আসেন, তার চাপও শেষ পর্যন্ত পড়েছে রখকোর ওপর। তুলনামূলক কম বেতন পেয়েও অবিরাম কাজ করার ক্ষতিপূরণ হিসেবে এবার তিনি এককালীন অর্থপ্রাপ্তি পাচ্ছেন, যা তাঁর ব্যক্তিগত আর্থিক নিরাপত্তা কিছুটা নিশ্চিত করবে।

নন-প্রফিট কাঠামোতে যাওয়ার ফলে মাষ্টডনের সামনে নতুন ধরনের অর্থায়নের পথ খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। শেয়ার বিক্রি বা বড় বিজ্ঞাপনদাতার কাছে নির্ভরশীল না হয়ে প্ল্যাটফর্মটি এখন বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, গবেষণা তহবিল ও সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবে। ইতিমধ্যে স্ট্যাক এক্সচেঞ্জ ও ক্রেইগসলিস্টের প্রতিষ্ঠাতাসহ প্রযুক্তি ও সামাজিক উদ্যোগের পরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান নিশ্চিত হয়েছে। নেতৃত্বের ভাষ্য, লক্ষ্য হচ্ছে লাভ সর্বাধিক না করে প্ল্যাটফর্মের স্বাধীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা।
মাষ্টডনের প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আগের মতোই বিকেন্দ্রীভূত থাকবে। ছোট ছোট সার্ভার বা “ইনস্ট্যান্স”–এ ভাগ হয়ে থাকা এই নেটওয়ার্কে প্রতিটি সার্ভার নিজস্ব নিয়ম ও মডারেশনে চলে, আবার ওপেন প্রোটোকলের মাধ্যমে অন্য সার্ভারের সঙ্গে বার্তা আদান–প্রদান করে। সমর্থকদের দাবি, এই কাঠামো কোনো একক মালিকের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত থেকে প্ল্যাটফর্মকে সুরক্ষিত রাখে এবং ব্যবহারকারীদের বেশি স্বাধীনতা দেয়। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য এই জটিলতা বোঝা কঠিন, আর নীতিমালা ভিন্ন হওয়ায় কনটেন্ট মডারেশনও অসমান হয়ে পড়ে।
এখন বড় প্রশ্ন—ব্লুস্কাই, থ্রেডসসহ অন্যান্য বিকল্প সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের ভিড়ে মাষ্টডন কীভাবে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করবে। নতুন বোর্ডকে ঠিক করতে হবে, তারা কি ধীরে ধীরে মূলধারার দিকে এগোবে, নাকি শক্তিশালী হলেও তুলনামূলক ছোট এক কমিউনিটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই থাকবে। একই সঙ্গে ওপেন সোর্স ও বিজ্ঞাপনবিমুখ নীতির মধ্যে থেকে কী ধরনের আয়মডেল সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে, সেটিও বড় চ্যালেঞ্জ।
রখকোর ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিবর্তন তাঁর জীবনে একধরনের সীমারেখা টেনে দেবে। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠাতাদেরও সতর্ক করছেন—কোনো প্রকল্পকে নিজের পরিচয়ের সঙ্গে অতিরিক্তভাবে বেঁধে রাখলে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এখন দেখা বাকি, নতুন নন-প্রফিট কাঠামো মাষ্টডনকে সত্যিই কি “বিলিয়নিয়ার-প্রুফ” সোশ্যাল নেটওয়ার্ক হিসেবে টিকিয়ে রাখতে পারে, নাকি বাজারের প্রতিযোগিতা তাকে আবারো কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















