শিশু-কনটেন্টে বিজ্ঞাপন নিয়মের কড়াকড়ি
ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দেখা একক ভিডিও—শিশুদের গান “বেবি শার্ক ড্যান্স”—অনলাইন সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বহু আগেই। তবু গানটি তৈরি ও জনপ্রিয় করা প্রতিষ্ঠান পিংকফঙ প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক সাফল্য পাচ্ছে না বলে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মূল কারণ, শিশুদের অনলাইন গোপনীয়তা রক্ষায় বিভিন্ন দেশের নিয়ম কঠোর হওয়ার পর থেকে ইউটিউবে শিশু-কনটেন্টের বিজ্ঞাপন ও ডেটা সংগ্রহে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে বিলিয়ন ভিউ থাকা সত্ত্বেও প্রতি ভিউ থেকে আয়ের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
পিংকফঙের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এমন এক পরিবেশে কাজ করছে, যেখানে শিশুদের জন্য তৈরি ভিডিওতে লক্ষ্যনির্ভর বা পার্সোনালাইজড বিজ্ঞাপন প্রায় বন্ধ। কনটেন্ট “মেড ফর কিডস” হিসেবে চিহ্নিত হলে মন্তব্য বিভাগ বন্ধ থাকে, ট্র্যাকিং সীমিত থাকে এবং বিজ্ঞাপন ফরম্যাটও সাধারণত কম দামী। ফলে আগে যেসব উচ্চমূল্যের বিজ্ঞাপন তাদের আয়ের বড় অংশ জোগাত, সেগুলো এখন আর ব্যবহার করা যায় না। নির্দিষ্ট খেলনা বা শিশু-প্রডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখানো কঠিন হওয়ায় ব্র্যান্ডগুলোর আগ্রহও কমে গেছে।

ব্র্যান্ড, মার্চেন্ডাইজ আর বিনিয়োগের নতুন সমীকরণ
এ অবস্থায় “বেবি শার্ক” নির্মাতারা ইউটিউবের বাইরে আয়ের পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েছে। চরিত্রগুলোর ওপর ভিত্তি করে টিভি সিরিজ, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে অ্যানিমেটেড শো, লাইভ কনসার্ট, শিশুদের খেলনা, স্টেশনারি, পোশাক—সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্র্যান্ড গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন দেশে লাইসেন্স চুক্তি করে স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট তৈরিও এই কৌশলের অংশ। একই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগ টানতে কোম্পানি শেয়ার বিক্রি বা অংশীদারিত্বের মতো বিকল্পও বিবেচনা করছে, যাতে পরবর্তী ধাপের সম্প্রসারণে অর্থের জোগান নিশ্চিত থাকে।
প্রতিবেদনটি দেখায়, অনলাইন সৃজনশীল কাজ থেকে জীবন-জীবিকা চালানোর বাস্তবতা এখন আগের চেয়ে অনেক জটিল। একসময় ইউটিউবের বিজ্ঞাপন আয়ই ছিল প্রধান ভরসা; এখন শিশু-কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য সেটি সহায়ক হলেও একমাত্র ভরসা নয়। অনেকেই নিজস্ব সাবস্ক্রিপশন অ্যাপ চালু করছেন, কেউ শিক্ষা-বিষয়ক প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট বিক্রি করছেন, কেউ আবার বই, অডিও স্টোরি ও লাইভ শোয়ের মাধ্যমে আয়ের নতুন স্রোত তৈরি করছেন। শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, “বেবি শার্ক”–এর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করছে যে শুধু ভিউ সংখ্যা দেখে সফলতা বিচার করা গেলে ভুল হবে।
অভিভাবকদের আচরণও এই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। অনেক পরিবার এখন শিশুদের জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস বা কিউরেটেড অ্যাপ পছন্দ করছেন, যেখানে তারা কনটেন্টের ধরন সম্পর্কে বেশি নিশ্চিন্ত থাকেন। ফলে খোলা প্ল্যাটফর্মে নিরবচ্ছিন্ন অটোপ্লে বা বাচ্চাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইউটিউবে রেখে দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। একই সময়ে নীতিনির্ধারকেরা শিশুদের লক্ষ্য করে বিপণন কতটা সীমিত করা উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন—যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে নির্মাতাদের আয়ের ওপর।
পিংকফঙ ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে এখন দ্বিমুখী চাপ—একদিকে অভিভাবক ও সমাজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেওয়ার প্রত্যাশা, অন্যদিকে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত আয়ের প্রয়োজন। অতিরিক্ত মার্চেন্ডাইজ বা ব্র্যান্ডিং করলে “শৈশবের বাণিজ্যিকীকরণ”–এর অভিযোগ শোনা যায়, আবার আয়ের বিকল্প উৎস না থাকলে মানসম্মত কনটেন্টের খরচ তুলতে গিয়ে অনেকেই হিমশিম খান। “বেবি শার্ক” উদাহরণটি দেখিয়ে দেয়, একটি গান বা চরিত্র বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুললেও তা থেকে আয় করা অনেক সময় নীতিমালা ও প্ল্যাটফর্মের নিয়মের সীমার মধ্যেই আটকে থাকে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















