ফিডে কৃত্রিম কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নতুন পরীক্ষা
টিকটক তাদের জনপ্রিয় ‘ফর ইউ’ ফিডে এআই-নির্ভর ভিডিও কমিয়ে আনার সুযোগ দিতে নতুন এক সেটিং পরীক্ষা করছে। ইঙ্গ্যাজেটের প্রতিবেদন ভিত্তিক খবরে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীরা চাইলে এআই দ্বারা তৈরি বা পরিবর্তিত কনটেন্টের উপস্থিতি ‘টোন ডাউন’ করতে পারবেন, অর্থাৎ এগুলো পুরোপুরি বন্ধ না করে অনুপাতে কমিয়ে দিতে পারবেন। এই পরিবর্তন এমন সময়ে আসছে, যখন ডিপফেক ও কৃত্রিম ভিডিও ঘিরে বিভ্রান্তি এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানোর আশঙ্কা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
টিকটক আগে থেকেই নিয়ম করেছে, বাস্তব মানুষের চেহারা বা ঘটনা বদলে দেয় এমন এআই ব্যবহৃত হলে ক্রিয়েটরকে সেটা উল্লেখ করতে হবে। নতুন পরীক্ষামূলক ফিচার মূলত দর্শকের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছে—তারা চাইলে অ্যালগরিদমকে জানাতে পারবেন, এআই-নির্ভর ভিডিও কম দেখতে চান। প্ল্যাটফর্মের অ্যালগরিদম এরপর সেই সিগন্যাল অনুযায়ী সুপারিশের ওজন বদলাবে, যাতে মানব-চিত্রিত ক্লিপ ও সাধারণ ভিডিও তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।
নীতিমালায় স্বচ্ছতা ও এআই লেবেলিং জোরদার
টিকটক তাদের সহায়ক পাতায় এআই-জেনারেটেড কনটেন্টের সংজ্ঞা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছে। বাস্তব ফুটেজের সামান্য রঙ ঠিক করা বা নয়েজ কমানোর মতো টুকরো এডিট এর বাইরে গিয়ে যখন কোনো ভিডিওতে কারও চেহারা, কণ্ঠ বা আচরণ বদলে দেওয়া হয়, তখন তা এআই-জেনারেটেড হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। সেই ধরনের কনটেন্টে স্পষ্টভাবে লেবেল বসানোর পাশাপাশি নতুন করে দর্শক-পক্ষের নিয়ন্ত্রণ যোগ করা মানে হচ্ছে, কোম্পানি রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের প্রেক্ষিতে স্বচ্ছতার দিকে আরও এক ধাপ এগোচ্ছে।

এছাড়া টিকটক জানাচ্ছে, শুধু দৃশ্যমান ট্যাগ নয়, ভিডিও ফাইলের ভেতরেও ‘অদৃশ্য’ টেকনিক্যাল মার্কার ব্যবহার করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ সিস্টেম সহজে বুঝতে পারে কোন কনটেন্ট এআই দ্বারা তৈরি। অন্য প্ল্যাটফর্ম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও যে ধরনের ওয়াটারমার্কিং বা মেটাডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহার করছে, টিকটক তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে চাচ্ছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের পদক্ষেপ
নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে—এমন এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন খসড়া হচ্ছে অনেক দেশে। সেই প্রেক্ষাপটে টিকটকসহ বড় প্ল্যাটফর্মগুলোকে বলা হচ্ছে, বিভ্রান্তিকর ডিপফেক বন্ধ করতে, অন্তত পরিষ্কারভাবে সেগুলো লেবেল করতে এবং ব্যবহারকারীদের হাতে বেশি নিয়ন্ত্রণ দিতে। মেটা, ইউটিউবের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইতোমধ্যে এআই-কনটেন্ট নিয়ে কিছু নীতি আপডেট করেছে; কেউ ফিডে ক্রমানুসারী অপশন দিয়েছে, কেউ বাস্তবসম্মত এআই ছবিতে বাধ্যতামূলক ট্যাগ চালু করেছে। টিকটকের ‘এআই টোন ডাউন’ অপশন সেই ধারারই আরেকটি সংস্করণ, যেখানে অ্যালগরিদম অক্ষুণ্ণ রেখে তার ভারসাম্য ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী সামঞ্জস্য করা হবে।
ক্রিয়েটর ও দর্শক—দুই পক্ষের জন্যই নতুন সমীকরণ
এই পরিবর্তন কনটেন্ট নির্মাতাদের সামনে নতুন কৌশলগত প্রশ্ন তুলতে পারে। যারা এখন পর্যন্ত এআই ফিল্টার, ভার্চুয়াল অবতার বা অ্যানিমেটেড ইফেক্টের ওপর বেশি নির্ভর করতেন, তারা হয়তো দেখবেন নির্দিষ্ট কিছু দর্শকের ফিডে তাদের ভিডিও কম প্রদর্শিত হচ্ছে। ফলে কেউ কেউ হয়তো আলাদা সংস্করণ বানাবেন, যেখানে এআই-ইফেক্ট সীমিত রাখবেন, আবার কেউ নিজেদের কনটেন্টে কীভাবে এআই ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে আরও খোলামেলা হওয়া প্রয়োজন বুঝতে পারেন।
অন্যদিকে সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য এই পরীক্ষামূলক ফিচার ইঙ্গিত দিচ্ছে, টিকটক বুঝেছে—সবাই এআই-নির্ভর ভিডিওতে মুগ্ধ নন। কেউ শুধুই নাচ, কমেডি বা দৈনন্দিন জীবনের ছোট মুহূর্ত দেখতে চান, যেখানে কৃত্রিমতা কম। তাদের জন্য সহজ একটি স্লাইডার বা বোতাম দিয়ে ফিডের ভারসাম্য বদলানোর সুযোগ তৈরি করা মানে প্ল্যাটফর্মটি চেষ্টা করছে মানুষকে অ্যাপে ধরে রাখতে, কিন্তু তাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে। ফিচারটি শেষ পর্যন্ত সবার জন্য চালু হলে, সেটিই হয়তো দেখাবে—প্রকৃতপক্ষে মানুষ কতটা এআই কনটেন্ট কমাতে চায়, আর কৌতূহলের টানে কতটা এগুলো দেখতেই থাকবে।
Sarakhon Report 


















