ড্যানিয়েল লোপাটিন: স্যাম্পল-নির্ভর সঙ্গীতের নতুন ভাষা
ইলেকট্রনিক সঙ্গীতশিল্পী ড্যানিয়েল লোপাটিন—যিনি Oneohtrix Point Never নামেই বেশি পরিচিত—তার নতুন অ্যালবাম ‘Tranquilizer’-এ স্যাম্পল ব্যবহারকে আরও পরিণত, সূক্ষ্ম ও শিল্পিত রূপ দিয়েছেন। আগের অ্যালবামগুলোর পরীক্ষামূলক ধারাকে ধরে রেখে তিনি এবারও তুলে ধরেছেন ভাঙা স্মৃতির মতো সাউন্ড, ভুলে যাওয়া রেকর্ডিং আর ৯০–এর দশকের স্যাম্পল সিডিতে লুকানো শব্দের অদ্ভুত জগত।
প্রভাব ও যাত্রা: পপ থেকে চলচ্চিত্র
গত দেড় দশকে লোপাটিন নীরবে পপ, পরীক্ষামূলক সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্র—সব ক্ষেত্রেই অনন্য ছাপ ফেলেছেন। বিশেষত ২০২০ সাল থেকে দ্য উইকেন্ডের রেট্রো–ফিউচারিস্টিক সাউন্ড গঠনে তিনি অন্যতম কারিগর।
চলচ্চিত্রেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য। ‘Uncut Gems’-এর তীব্র সাউন্ডট্র্যাক কিংবা নির্মাতা জশ স্যাফদির নতুন ছবি ‘Marty Supreme’-এ তার সঙ্গীত—উভয় ক্ষেত্রেই লোপাটিনের স্বকীয়তা স্পষ্ট।
Oneohtrix Point Never নামে তার ব্যক্তিগত কাজ ইলেকট্রনিক আন্ডারগ্রাউন্ডে একটি আলাদা ধারা তৈরি করেছে। পুরোনো সিন্থ, অদ্ভুত ড্রোন, টারকোভস্কি-অনুপ্রাণিত ঘন পরিবেশ এবং বিজ্ঞাপনের বিচ্ছিন্ন সাউন্ড—সব মিলিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন আধুনিক সোনিক স্মৃতির সংগ্রহশালা।
‘Tranquilizer’: পুরোনো ধাঁচে নতুন নির্মাণ
Warp Records থেকে প্রকাশিত ‘Tranquilizer’ মূলত লোপাটিনের স্যাম্পল-নির্ভর মূলধারায় প্রত্যাবর্তন। ‘Replica’-র মতোই এখানে রয়েছে বিভিন্ন কার্যকরী সাউন্ড ক্লিপ—বাটন প্রেস, বীপ, চাইম—কিন্তু সেগুলোকে তিনি সাজিয়েছেন এমনভাবে যাতে সেগুলো পরিণত হয়েছে বিমূর্ত অথচ সৌন্দর্যময় সঙ্গীতে।
৯০–এর দশকের স্যাম্পল সিডি ঘেঁটে পাওয়া হাজারো শব্দকে তিনি নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছেন।
সাধারণ শব্দের মধ্যে নতুন রূপ
অ্যালবামের অন্যতম শক্তি হলো—সাধারণ, প্রায় ভুলে যাওয়া শব্দকে তিনি নতুন আলোয় ফুটিয়ে তুলেছেন।
‘Bumpy’-তে মাইক্রো-টেক্সচার্ড শব্দগুলোর এমন বিস্তার হয়েছে যেন রঙ-পেন্সিলের বাক্স খুলে রঙের বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে—যান্ত্রিক অথচ স্পন্দিত। এর ক্ষুদ্র হার্প-মতো সাউন্ড অ্যালবামটিকে কৃত্রিম হলেও প্রাণবন্ত আবহ দেয়।
চলমান সাউন্ডস্কেপ: দৃশ্যের মতো শোনায় যেসব ট্র্যাক
‘Tranquilizer’ পুরোপুরি অ্যাম্বিয়েন্ট নয়—এখানে প্রতিটি কম্পোজিশনই গল্পের মতো এগোয়, বদলায়।
‘Modern Lust’-এ ধাতব প্রতিধ্বনি, শূন্য শহরের করিডোরের মতো সোনিক আবহ; পরে ডিজিটাল বৃষ্টির শব্দ—সব মিলিয়ে তৈরি হয় ভবিষ্যতের দৃশ্য।
কোথাও মিউটেড ট্রাম্পেটের মতো ‘মিউট্যান্ট জ্যাজ’, কোথাও অসম পিচ যা টেপের পিছলে যাওয়ার অনুভূতি আনে।
‘Cherry Blue’ ট্র্যাকে দীর্ঘ রিভার্বে মোড়া পিয়ানোর সুর একাকিত্বের ভার টেনে আনে।
‘Measuring Ruins’ Windham Hill–ধাঁচের শান্ত ইলেকট্রনিক ল্যান্ডস্কেপের প্রতিধ্বনি—যেখানে প্রশান্তি, রহস্য আর নরম বিস্ময় একসঙ্গে বাজে।
অ্যালবামের প্রতিটি রচনার মধ্যে সম্পর্ক আছে—সব মিলিয়ে এটি একটানা সিম্ফনির ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ের মতো।
প্রযুক্তি বদলায়, শব্দের স্মৃতি থাকে
ইলেকট্রনিক সঙ্গীত নাকি দ্রুত পুরোনো হয়—প্রযুক্তি বদলে যাওয়ায় অনেক সাউন্ড সময়ের সঙ্গে আটকে থাকে। কিন্তু লোপাটিন সেই ‘সময়ের চিহ্ন’কেই শিল্পে রূপ দেন।
‘Tranquilizer’-এ তিনি ভুলে যাওয়া, প্রায় কার্যকরী শব্দের ডেটাবেসকে টেনে এনেছেন আধুনিক পরীক্ষামূলক সঙ্গীতে—যেখানে প্রতিটি স্যাম্পল নতুন অর্থ পায়।
# সঙ্গীত,# ইলেকট্রনিক_সাউন্ডস্কে
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















