ভোটকে ‘জান্নাত’ বলে প্রচারণা: জামায়াতকে ফখরুলের সতর্কবার্তা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোট বা রাজনীতিকে ‘জান্নাতের টিকিট’ বলে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলা করা ইসলাম সমর্থন করে না। মানুষের বিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঢাকায় একটি আলোচনাসভায় তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, তাই বিষয়টি স্পষ্টভাবে সমাজের সামনে ব্যাখ্যা করা জরুরি।
জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
ফখরুল অভিযোগ করেন, গত ১০ বছরে ‘ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের’ বিরুদ্ধে জামায়াতের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।
তার ভাষায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই প্রথম জামায়াতকে রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে উভয় দল একসঙ্গে কাজও করেছে।
তিনি বলেন,
“কিন্তু গত এক দশকে এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কোনো সক্রিয় অবস্থান আমরা দেখিনি।”
এছাড়া তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের ছাত্রশাখা শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে, যা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিএনপির ত্যাগ ও সংগ্রামের বিবরণ
ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা গত বছরগুলোতে জুলুম, হত্যা, গুম ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এক রাজনৈতিক দল সর্বদা “পিআর না হলে নির্বাচন নয়” বলে উচ্চস্বরে বক্তব্য দিলেও এখন তাদের অবস্থান নরম হয়ে গেছে।
রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির প্রস্তাব ও জুলাই চার্টার
তিনি জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই চার্টারে স্বাক্ষরও করেছিল।
ফখরুলের অভিযোগ, পরবর্তীতে কমিশন যে সুপারিশ জমা দিয়েছে, তার মধ্যে এমন কিছু বিষয় ছিল যা দলগুলোর সম্মতিপত্রে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তার মতে, এটি কমিশনের সঠিক কাজ ছিল না।
গণঅভ্যুত্থান দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১,৫০০ মানুষ প্রাণ হারালেও এই আন্দোলন দেশের পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে।
ফখরুলের আহ্বান—
“সকল রাজনৈতিক দলকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সরকার ও সংসদ গঠন করতে পারলেই জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো সমাধান সম্ভব।”
ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব ও সামাজিক অনৈতিকতা বৃদ্ধি
দেশে অসংখ্য মুসলমান, মাদরাসা, মসজিদ ও আলেম থাকা সত্ত্বেও অন্যায়, দুর্নীতি, চুরি ও অর্থপাচার বাড়ছে—এ অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তার মতে, নৈতিক শিক্ষা জোরদার করতে পারলে হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও সামাজিক অপরাধ কমে আসবে।
তিনি বলেন, নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার উৎস শিক্ষক, পরিবার, মাদরাসা ও বিদ্যালয়—এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে।
ধর্ম, নৈতিকতা ও সমাজ
ফখরুল বলেন, সমাজে ধর্ম ও নৈতিকতা কীভাবে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে জাতীয়ভাবে গভীর আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল, আর গণতন্ত্র ছাড়া কোনো সম্প্রদায় বা শ্রেণির অধিকার সুরক্ষিত থাকতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণে অভিযুক্ত
গত ১৫–১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে ধর্ম পালনের স্বাধীনতাও ক্ষুণ্ণ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কিছু ধর্মীয় আলেমের কাছে শেখ হাসিনাকে ‘কওমির জননী’ উপাধি দেওয়া নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
রাষ্ট্রযন্ত্র ধ্বংসের অভিযোগ ও বিএনপির প্রতিশ্রুতি
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠান অকার্যকর করে ফেলেছে।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করা হবে এবং একে রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
#রাজনীতি #বিএনপি #জামায়াত #বাংলাদেশ #নির্বাচন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















