ইউক্রেনের ওপর মার্কিন চাপ আর ২৮ দফা প্রস্তাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যে ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে দিচ্ছে, তা নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনাটিতে ইউক্রেনকে দখলকৃত কিছু ভূখণ্ড ত্যাগ, সেনাবাহিনী অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে না যাওয়ার মতো বড় ছাড় দিতে বলা হয়েছে। মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং রুশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভের আলোচনায় প্রস্তাবটি তৈরি হলেও ইউক্রেন বা ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আগে থেকে কোনো অর্থবহ পরামর্শ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাতির উদ্দেশে বার্তায় বলেছেন, দেশ এখন “ইতিহাসের অন্যতম কঠিন মুহূর্তে”, যেখানে মর্যাদা রক্ষা আর প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হারানোর ঝুঁকির মাঝে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়াতে হতে পারে।
মাঠের বাস্তবতা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আর মিত্রদের চিন্তা
এই পরিকল্পনা সামনে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান ক্রমশ কঠিন হচ্ছে এবং রুশ বাহিনী ধারাবাহিকভাবে ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল ও ভূপৃষ্ঠ আক্রমণ বাড়াচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর হামলায় দেশজুড়ে ঘন ঘন লোডশেডিং ও সেবা বিঘ্ন এখন নিত্যদিনের বাস্তবতা। ফ্রন্টলাইনে দীর্ঘ প্রতিরক্ষা রেখা ধরে ইউক্রেনীয় সেনারা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে লড়াই করছে; উভয় পক্ষের হতাহত সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য হিসাব না থাকলেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন, যুদ্ধের শুরু থেকে মৃত, আহত ও নিখোঁজ মিলিয়ে সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছেছে। একই সময়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের জড়িত একটি বড় দুর্নীতির কেলেঙ্কারির মুখোমুখি, যা সরকারের ওপর জনগণের আস্থায় আঘাত করেছে। ফলে এমন কোনো শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করা, যেটি অনেকের চোখে রাশিয়ার আগ্রাসনকে পুরস্কৃত করার সমান, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও বিস্ফোরক ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। ইউরোপীয় নেতারা বারবার বলছেন, ইউক্রেনকে পাশে রেখেই যেকোনো সমাধান খোঁজা উচিত এবং “ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়”—এই নীতিতে তারা অটল। কিন্তু একই সঙ্গে তারা হিসাব–নিকাশ করছেন, যদি ওয়াশিংটন সামরিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা কমিয়ে দেয়, তবে ইউরোপকেই কতটা বাড়তি বোঝা বইতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















