যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক বিভাজন
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক মেরুকরণ বহু বছর ধরে বাড়ছে। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের মধ্যে বিভেদ এখন শুধু মতাদর্শে সীমাবদ্ধ নয়—এটি পরিবার, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবনের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়েছে। বহু আলোচনা ও প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি; বরং আরও খারাপ হয়েছে। সাম্প্রতিক আলোচনায় কৌতুক অভিনেতা জিমি কিমেলের স্ত্রী মলি মেকনার্নির বক্তব্য এই বিভাজনকে নতুন করে সামনে এনেছে। তিনি স্বীকার করেছেন, তার পরিবারে যেসব সদস্য রক্ষণশীল বা ট্রাম্প সমর্থক, তাদের থেকে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে দূরে সরে গেছেন।
ছুটির সময়, পরিবার এবং রাজনৈতিক দূরত্ব
থ্যাংকসগিভিং সামনে, এরপর বড়দিন। সাধারণত এ সময় পরিবার ও বন্ধুদের একত্র হওয়ার উপলক্ষ। কিন্তু মলি মেকনার্নি মনে করেন, তার কিছু আত্মীয় রাজনৈতিকভাবে ‘অজ্ঞ’ এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য গ্রহণ করছেন—এ কারণেই ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন। তিনি জানান, এতে যদিও তার মনে কিছুটা সহানুভূতি তৈরি হয়, তবুও সম্পর্ক বজায় রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। মেকনার্নি, যিনি কিমেলের লেট নাইট শোর প্রযোজক ও লেখক, স্বামীসহ সম্প্রতি “উই ক্যান ডু হার্ড থিংস” পডকাস্টে অংশ নেন। সেখানে তিনজন উপস্থাপকের সঙ্গে তারা কিমেলের শো সেপ্টেম্বরে স্থগিত হওয়ার “ট্রমা” নিয়ে কথা বলেন। যদিও পুরো ঘণ্টাব্যাপী আলাপে শো স্থগিত হওয়ার মূল কারণ—রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ককে নিয়ে কিমেলের ভুল ও কটূ মন্তব্য—উল্লেখ করা হয়নি।
রাজনৈতিক মতভেদকে নৈতিকতার প্রশ্নে পরিণত করা
পডকাস্টে মলি জানান, ট্রাম্প সমর্থকদের প্রতি তার অসন্তোষ এখন ব্যক্তিগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, তার স্বামী “লোকটির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন”, তাই পরিবারে কেউ ট্রাম্পকে ভোট দিলে সেটা তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার মতোই মনে হয়। এ কারণে তিনি ইতোমধ্যেই পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছেন। তার ভাষায়, বিষয়টি আর রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাট নয়—এটি এখন “পারিবারিক মূল্যবোধের” প্রশ্ন।
গবেষণাও বলে, মেকনার্নির মতো অনেকেই রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে নৈতিকতার চোখে দেখছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭২% রিপাবলিকান এবং ৬৩% ডেমোক্র্যাট মনে করেন বিপরীত দল “অনৈতিক”। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৪৭% ও ৩৫%। ২০২০ সালের পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট জরিপে দেখা যায়, ৮১% রিপাবলিকান বিশ্বাস করেন ডেমোক্র্যাটরা সমাজতন্ত্রী, আর ৭৮% ডেমোক্র্যাট মনে করেন রিপাবলিকানরা বর্ণবাদী। ২০২৫ সালের পিউ-এর আরেক জরিপেও দেখা যায়, দুই দলের সমর্থকরাই একে অপরের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে আরও কঠোর হয়েছেন।
বিনোদন দুনিয়ায় রাজনৈতিক বিভাজনের প্রভাব
এই রাজনৈতিক বিরোধের বাস্তব উদাহরণ শুধু পরিবারেই নয়, হলিউডেও দেখা যাচ্ছে। ডেইলি মেইলের ১১ নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিনেত্রী সিডনি সুইনি ও জেন্ডায়া, যারা আগে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন, এখন আর একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন না। জানা যায়, জেন্ডায়া আর ‘ইউফোরিয়া’ সিরিজের তৃতীয় মৌসুমের প্রচারে সুইনির সঙ্গে কোনো ইভেন্টে যেতে রাজি নন। সুইনির রিপাবলিকান ঝোঁক এবং আমেরিকান ঈগলের জিন্সের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্কে ক্ষমা না চাওয়াকেই এই দূরত্বের কারণ বলা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও মানসিক চাপ
মলি মেকনার্নি বলেন, তিনি যখনই কোনো খারাপ খবর দেখেন, তখন পরিবারের নির্দিষ্ট কিছু সদস্যের ওপর রাগ হয়। তার মনে হয়, তারা ট্রাম্পকে ক্ষমতায় এনে এসব পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। ফলে পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা তার জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, “আমি এখন সবকিছু ব্যক্তিগতভাবে নিই। প্রতিদিন যখন খারাপ খবর দেখি, তখনই মনে হয় আমার কিছু আত্মীয়ই ট্রাম্পকে ক্ষমতায় এনে এই সমস্যা তৈরি করেছেন। এটা খুব কষ্টকর।”
মানবিক সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা উচিত
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ক্লোয়ি কারমাইকেল সতর্ক করে বলেন, মানুষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি ভিন্নমতকে নির্যাতন বা বিপদ হিসেবে দেখতে শুরু করেন, তবে পরিবার ও দেশের ঐক্য ভেঙে পড়বে। তার ভাষায়, “মানুষ হিসেবে আমাদের ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন আমরা মতভেদকে নির্যাতন বা বিপদের মতো দেখি, তখন আমরা সেসব সেতুবন্ধন ধ্বংস করি—যা আমাদের পরিবার ও দেশকে এগিয়ে নেয়।”
সমাপনী ভাবনা
ছুটির এই সময়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সম্পর্ক ও মানবিকতা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। মতভেদ থাকা স্বাভাবিক, তবে প্রিয়জনদের মানুষের মতো দেখা—তার রাজনৈতিক পরিচয় নয়—এই মৌসুমে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিত। পরিবারকে দূরে ঠেলে দিলে কেউ জেতে না; বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় সম্পর্ক, আস্থা এবং ভালোবাসা।
#holidays #politics #familyfirst #usnews #relationships
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















