জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বিশ্বের নেতারা দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে একত্র হয়েছেন। শনিবার উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সভাপতিত্বকারী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা সম্মেলন শুরু করেন। তিন দিনের এই বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে গ্লোবাল সাউথের উন্নয়ন, জলবায়ু সংকট, সমতা ও খনিজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার।
সম্মেলনের প্রেক্ষাপট
রামাফোসা উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা জি–২০–এর মর্যাদা ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি জানান, গ্লোবাল সাউথ ও আফ্রিকার উন্নয়ন অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে আলোচ্যসূচিতে তুলে ধরা হবে।
২১ নভেম্বর শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যোগ দিতে একদিন আগেই জোহানেসবার্গে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজসহ বহু বৈশ্বিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।
মোদির ছয় দফা এজেন্ডা
মোদি জি–২০–এর মাধ্যমে ছয়টি নতুন উদ্যোগের প্রস্তাব দেন। সেগুলো হলো—
মাদক ও সন্ত্রাসের যোগসূত্র রোধে সমন্বিত উদ্যোগ
মাদক পাচার ও সন্ত্রাস অর্থায়নের বিরুদ্ধে জরুরি যৌথ পদক্ষেপ নিতে ‘জি–২০ ড্রাগ–টেরর নেক্সাস’ উদ্যোগ গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
জি–২০ গ্লোবাল হেলথকেয়ার রেসপন্স টিম
সদস্য দেশগুলোর প্রশিক্ষিত চিকিৎসা–কর্মীদের নিয়ে একটি বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য টিম গঠনের প্রস্তাব।
আফ্রিকার দক্ষতা উন্নয়ন
আফ্রিকার কর্মশক্তিকে আধুনিক দক্ষতায় রূপান্তর করতে ‘আফ্রিকা–স্কিলস মাল্টিপ্লায়ার ইনিশিয়েটিভ’ গঠনের প্রস্তাব।
গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল নলেজ রিপোজিটরি
বিশ্বের ঐতিহ্যভিত্তিক জ্ঞানভান্ডার সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সংগ্রহশালা তৈরির পরিকল্পনা।
ওপেন স্যাটেলাইট ডেটা পার্টনারশিপ
স্যাটেলাইট তথ্য ভাগাভাগির জন্য নতুন অংশীদারিত্ব গঠন।
ক্রিটিক্যাল মিনারেল সার্কুলারিটি উদ্যোগ
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রকল্প।
যুক্তরাষ্ট্রের বয়কট সত্ত্বেও জি–২০ ঘোষণা গৃহীত
সম্মেলনের প্রথম দিনই জলবায়ু সংকটসহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি যৌথ ঘোষণা গ্রহণ করা হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নেয়নি। ওয়াশিংটন জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসা জি–২০–এর নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়া মসৃণভাবে সম্পন্ন করতে বাধা দিচ্ছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করে ঘোষণা প্রকাশের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা জি–২০–এর উদ্দেশ্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মেলন বয়কটের নির্দেশ দেন—দাবি করেন, দক্ষিণ আফ্রিকা শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আগেই বৈঠক বাদ দিয়ে বলেছিলেন, জি–২০–এর আলোচনার বিষয়বস্তু ‘ডাইভারসিটি, ইকুইটি, ইনক্লুশন ও জলবায়ু’—এতে অর্থ ব্যয় করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপচয়।
ক্রিটিক্যাল মিনারেলস ফ্রেমওয়ার্কে গুরুত্ব
ঘোষণায় ‘জি–২০ ক্রিটিক্যাল মিনারেলস ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এর লক্ষ্য—
- টেকসই উন্নয়ন ও সমন্বিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজকে ব্যবহার করা
- উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (বিশেষত গ্লোবাল সাউথ) তাদের সম্পদ থেকে ন্যায্য ও সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা
নেতারা বলেন, দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তর, সবুজ জ্বালানি, নতুন শিল্পায়ন—এসব কারণে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু বিনিয়োগ ঘাটতি, প্রযুক্তির অভাব, পরিবেশগত সমস্যা ও মূল্য সংযোজন কম থাকায় উৎপাদনকারী দেশগুলো পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না।
জলবায়ু অর্থায়ন বাড়ানোর তাগিদ
COP30–এর জলবায়ু চুক্তির দিনেই জি–২০ ঘোষণায় বলা হয়, বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নকে দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে—“বিলিয়ন থেকে ট্রিলিয়ন” পর্যায়ে।
নেতারা আরও বলেন—
- বিশেষত আফ্রিকায় জ্বালানি প্রবেশাধিকারে বৈষম্য কমাতে হবে
- টেকসই জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে
- জলবায়ু–সম্পর্কিত দুর্যোগের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা জনগণের জন্য আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা উন্নত করা হবে
ইউক্রেন ইস্যু: মূল আলোচনায় না থাকলেও গুরুত্ব পেয়েছে
৩০ পৃষ্ঠার ঘোষণায় ইউক্রেনের উল্লেখ মাত্র একবার এসেছে, তবে পাশের বৈঠকগুলোতে পশ্চিমা নেতারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলেছেন।
ঘোষণায় ইউক্রেন, সুদান, কঙ্গো এবং ফিলিস্তিনি অধিকৃত ভূখণ্ডে “ন্যায়সঙ্গত, স্থায়ী ও সমন্বিত শান্তি” প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
ব্লুমবার্গ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি–পরিকল্পনার বিতর্কিত তথ্য ফাঁস হওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলো এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে—তারা ইউক্রেনকে সময় দিতে এবং একটি পাল্টা প্রস্তাব তৈরির চেষ্টা করছে।
তাদের ভাষায়—
“খসড়াটি কাজের ভিত্তি হতে পারে, তবে আরও সংশোধন প্রয়োজন। আমরা আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় চালিয়ে যাব।”
#G20 Summit | Narendra Modi | South Africa | Climate Finance | Critical Minerals | US Boycott
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















