থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিনের শরণার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ
থাইল্যান্ডের চান্তাবুরি প্রদেশের একটি লঙ্গান বাগানে ৬ নভেম্বর কাজ করছেন মিয়ানমার থেকে আসা এক শরণার্থী। তীব্র রোদের মধ্যে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে গাছ থেকে গাছে উঠে ফল তুলছেন টুন মিন লাত। প্রায় দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডে বাস করলেও এবারই প্রথম তিনি বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পেলেন।
৪২ বছরের এই শরণার্থী বলেন, “এখন মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি।”
২০২৫ সালের আগস্টের শেষ দিকে থাই সরকার ঘোষণা করে—থাই-মিয়ানমার সীমান্তে থাকা হাজারো মিয়ানমার শরণার্থীকে প্রথমবারের মতো বৈধভাবে কাজের অধিকার দেওয়া হবে। জাতিসংঘ এই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে অভিহিত করে। এই উদ্যোগের ফলে ৮০,০০০-এর বেশি শরণার্থী কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শ্রমঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ
থাইল্যান্ডে জুলাই মাসে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তসংঘর্ষ শুরু হলে বিপুল সংখ্যক কম্বোডিয়ান শ্রমিক দেশে ফিরে যায়। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে কারখানা, নির্মাণক্ষেত্র ও কৃষিখাতে শ্রমঘাটতি দেখা দেয়।
থাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষ শুরুর আগে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার কম্বোডিয়ান—যা মোট শ্রমশক্তির প্রায় ১২%—থাইল্যান্ডে কাজ করতেন।
এই পরিস্থিতিতে শরণার্থীদের শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
পরিবার ছিন্ন হলেও আশাবাদী টুন মিন লাত
টুন মিন লাত ও তার স্ত্রী প্রথম ব্যাচের শ্রমিকদের সঙ্গে চান্তাবুরি প্রদেশের এই লঙ্গান বাগানে কাজ শুরু করেন—তাদের শিবির থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে। তাদের বড় মেয়ে অন্য একটি প্রদেশের কারখানায় কাজ নিচ্ছেন। দুই ছোট সন্তান—১৪ ও ১০ বছর বয়সী—এখনো শরণার্থী শিবিরে প্রতিবেশীদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

২০০৬ সালে দক্ষিণ মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও একটি শক্তিশালী জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই শুরু হলে জোরপূর্বক শ্রম ও জোরপূর্বক নিয়োগের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ দেশ ছাড়েন টুন মিন লাত।
থাইল্যান্ডের কানচানাবুরি প্রদেশের শরণার্থী শিবিরে তারা পরিবার গড়ে তুললেও বৈধ কাজের সুযোগ না থাকায় আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে।
দশকের পর দশক ধরে সীমান্তশিবিরে শরণার্থীদের জীবন
থাইল্যান্ডে মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য মোট নয়টি সীমান্তশিবির রয়েছে। ১৯৮০-এর দশক থেকেই একের পর এক সহিংসতার ঢেউয়ে বহু মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে উত্খাত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ, যা নতুন করে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়।
২০২৫ সালে মানবিক সহায়তা কমে যায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশের তহবিল হ্রাস পেলে শরণার্থীদের সংকট আরও তীব্র হয়। এমন সময়ে বৈধভাবে কাজের অনুমতি পাওয়া শরণার্থীদের জন্য বড় পরিবর্তন।
দ্য বর্ডার কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক লেয়ন দে রিডমাটেন বলেন, “প্রথমবারের মতো তারা স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও স্বাধীনভাবে থাইল্যান্ডে ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।”
নতুন চাকরি, নতুন আশা
বাগানে যখন টুন মিন লাত ফল তুলছিলেন, তখন তার স্ত্রী লে লে ও আরও কয়েকজন নারী কাছেই ফল প্যাকেট প্রস্তুত করছিলেন। প্রথম কাজে টুন মিন লাতসহ পাঁচজনের দল মোট ১,০০০ থাই বাত আয় করেন।
টুন মিন লাত বলেন, “ক্লান্ত থাকলেও আমরা খুশি। পরিবারের সবাই দূরে থাকলেও মনে হচ্ছে আশা ফিরে পেয়েছি।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















