মিয়ানমারের সামরিক সরকার গত পাঁচ দিনে প্রায় ১,৬০০ বিদেশিকে আটক করেছে। থাই সীমান্তের কাছে অবস্থিত বহুল আলোচিত অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্রগুলোতে এই অভিযান চালানো হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে প্রতারণার বিস্তৃত কারখানাগুলো দ্রুত গড়ে উঠেছে, যেখানে রোমান্স ও ব্যবসায়িক প্রতারণার মাধ্যমে বছরে কয়েক দশক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়।
চীনের চাপ ও জান্তার অবস্থান
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দীর্ঘদিন ধরে এসব অবৈধ কার্যক্রম উপেক্ষা করার অভিযোগের মুখে ছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের চাপের মুখে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তারা অভিযান শক্তিশালী করে। অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অতিরিক্ত অভিযানগুলো অনেক পর্যবেক্ষকের মতে মূলত চীনের চাপ সামলানোর জন্য পরিচালিত হয়, যাতে জান্তা-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর লাভ যেন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সাম্প্রতিক অভিযানের বিবরণ
রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে শ্বে কক্কো নামের জুয়া ও অনলাইন প্রতারণা কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে মোট ১,৫৯০ জন বিদেশিকে আটক করা হয়েছে, যারা অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিল। কর্তৃপক্ষ এ অভিযানে ২,৮৯৩টি কম্পিউটার, ২১,৭৫০টি মোবাইল ফোন, ১০১টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট রিসিভার, ২১টি রাউটার এবং অনলাইন প্রতারণা ও জুয়ার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ শিল্প উপাদান জব্দ করেছে।
স্টারলিংক ডিভাইস নিষ্ক্রিয়করণ
অক্টোবরে এএফপি-র এক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে প্রতারণা কম্পাউন্ডগুলোতে ব্যাপকভাবে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করা হচ্ছে। এই তথ্য প্রকাশের পর ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক জানিয়েছে তারা সন্দেহভাজন প্রতারণা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ব্যবহৃত ২,৫০০ এর বেশি ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে।

২২ নভেম্বর আটক পরিস্থিতি
গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার জানায়, শুধু ২২ নভেম্বর শ্বে কক্কো থেকে অনলাইন প্রতারণা ও জুয়ার অভিযোগে ২২৩ জনকে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ জন চীনা নাগরিক। এসব প্রতারণা কেন্দ্র মানুষের পাচারের সঙ্গে যুক্ত এবং এখানে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীর পাশাপাশি পাচার হয়ে আসা বহু বিদেশি কাজ করতে বাধ্য হয়।
সীমান্ত অঞ্চলে প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তার
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যার সুযোগে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণহীন অঞ্চলে প্রতারণা কেন্দ্রগুলো দ্রুত বিস্তার লাভ করে। হাজারো কর্মী এবং পাচার হওয়া মানুষকে ব্যবহার করে এসব কেন্দ্র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করছে।
চীনের ক্রমাগত ক্ষোভ
যদিও চীন সামরিক জান্তার অন্যতম প্রধান সমর্থক, তবুও তাদের নাগরিকদের লক্ষ্য করে পরিচালিত এসব প্রতারণা কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় বেইজিং এখন ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মন্তব্য।
#মিয়ানমার #প্রতারণা #চীন #অভিযান #বিদেশিআটক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















