উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল সিনা কারাগারে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক আইএস বন্দিদের রাখা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই কারাগারসহ অন্যান্য বন্দিশিবিরে পালানোর চেষ্টা বেড়েছে, যা সিরিয়ার নতুন সরকার এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আল সিনা কারাগারের ভেতরের পরিস্থিতি
হাসাদাহ অঞ্চলের কুখ্যাত আল সিনা কারাগারের একটি উইংয়ে মুখোশধারী প্রহরীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট সেলে বন্দিরা দিন কাটায়। এক ব্রিটিশ আইএস বন্দি সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করেছিল—“মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি এখনো বাইডেন?”
তবে সাংবাদিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়, বন্দির কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিতে। প্রহরীদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে পারে না।
এমনকি বন্দিরা জানেই না যে সিরিয়ার ক্ষমতায় এখন আর বাসার আল-আসাদ নেই—বরং দেশ পরিচালনা করছে প্রাক্তন জঙ্গিদের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার। কারাগার কর্তৃপক্ষের মতে, বন্দিদের তথ্যপ্রবাহ বন্ধ থাকলে নিরাপত্তা বেশি থাকে।
আইএস বন্দিদের সবচেয়ে বড় জনসংখ্যা
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত কুর্দি বাহিনী আইএসকে পরাজিত করার পর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় দুই ডজনের বেশি কারাগার ও শিবির গড়ে ওঠে। এগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইএস বন্দিদের জনসংখ্যা রয়েছে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক বন্দিদের রাখা হয় আল সিনায়।

বাড়ছে পালানোর চেষ্টা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি
মার্কিন সামরিক কমান্ডার ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—এসব বন্দিশিবির এখনো সিরিয়ার জন্য বড় নিরাপত্তা সংকট। আইএস গোপনে প্রচার চালাচ্ছে, অস্থিরতা সৃষ্টি করতে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে আল সিনায় তথ্যের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার বৃহত্তম শিবির আল হোলে এ বছর পালানোর চেষ্টা বেড়েছে। কুর্দি বাহিনী ও মার্কিন সেনারা তল্লাশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
সোফান সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক কলিন ক্লার্ক বলেন, “যদি আইএস কোনো কারাগার ভেঙে বন্দিদের ছাড়াতে সক্ষম হয়, তা হবে বিপর্যয়কর।”
আসাদ সরকারের পতনের পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে
গত বছর বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) আরও চাপের মুখে। নতুন সরকার ও তুরস্ক-সমর্থিত শক্তিগুলো কারাগারগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাপ দিচ্ছে।
তিন বছর আগে আল সিনায় আইএস হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সব পক্ষ সতর্ক। সেই হামলায় এক সপ্তাহের যুদ্ধ হয়, ৫০০-এর বেশি মানুষ মারা যায় এবং শতাধিক বন্দি পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
বন্দিশিবিরে শিশুদের আধিক্য
সিরিয়ার এই নেটওয়ার্কে প্রায় ৮,৪০০ আইএস যোদ্ধা ও ৩০,০০০ নারী–শিশু–সমর্থক রয়েছে। এর প্রায় অর্ধেকই বিদেশি। প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু, তাদের অর্ধেকের বয়স ১২ বছরের নিচে।

মার্কিন গোয়েন্দা সতর্কতা
মার্চে কংগ্রেসে উপস্থাপিত মার্কিন গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছে—আসাদ সরকারের পতনের সুযোগ নিয়ে আইএস বন্দিদের ছাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে, যা তাদের পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।
সেন্ট্রাল কমান্ড প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার জাতিসংঘে বলেছেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব শিবির চরমপন্থার উর্বর জমি হয়ে উঠছে।”
বিদেশিদের ফেরত নিতে অনীহা
কুর্দি ও মার্কিন কর্মকর্তারা বহুবার দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে। বন্দিদের ফেরত নিলে কারাগারগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করা সম্ভব হবে।
কিন্তু বেশিরভাগ দেশই আতঙ্কে আছে—যে চরমপন্থীরা দেশে ফিরে গেলে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে।
অ্যাডমিরাল কুপার সতর্ক করে বলেন, “সমাধান ছাড়া প্রতিদিন আমাদের ঝুঁকি আরও বাড়ছে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















