করাইল বস্তিতে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কয়েক শ পরিবার মুহূর্তের মধ্যে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে অনেকেই নিজেদের কোনো মালপত্রই রক্ষা করতে পারেননি।
অগ্নিকাণ্ডের শুরুতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ছুটে বেরিয়ে আসে।
রোজিনার হৃদয়বিদারক কান্না
রোজিনা, বস্তির এক বাসিন্দা, দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা ঘর থেকে প্রাণে বাঁচলেও রাস্তায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি বলেন, “একটা জিনিসও বাঁচাতে পারিনি। কত কষ্টে যা পেয়েছিলাম, সব ছাই হয়ে গেল। আল্লাহ আমাদের এমন দৃশ্য দেখালেন কেন!” এরপরই তিনি অসহায়ের মতো ভেঙে পড়েন।
কামালের শেষ চেষ্টা
অন্যদিকে কামালকে দেখা যায় মাথায় টেলিভিশন নিয়ে দৌড়াতে, হাতে একটি গ্যাস সিলিন্ডার।
তিনি বলেন, “এই দুটো জিনিসই কেবল বাঁচাতে পেরেছি। সবকিছু চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।”

রাফি ও রাহিমার সংগ্রাম
আগুনের মধ্যে স্কুলছাত্র রাফি এবং তার মা রাহিমাকে ঘর থেকে বড় একটি বস্তা ও দুইটি ব্যাগ নিয়ে ছুটে বের হতে দেখা যায়। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়িতে না থাকায় মা-ছেলেকেই সব সামলাতে হয়।
রাহিমা জানান, “আমাদের ঘরেও আগুন লেগেছে। ছয় বছরে এটি দ্বিতীয় আগুন। আগেরবার কিছু জিনিস বাঁচাতে পেরেছিলাম, এবার দামি ফার্নিচারও রক্ষা করতে পারিনি।”
পানিসঙ্কটে দমকলের লড়াই
অগ্নিনির্বাপক বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তীব্র পানিসঙ্কট এবং পানিবাহী গাড়ি ট্র্যাফিকে আটকে যাওয়ায় দ্রুত পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছিল না।
জরুরি সমাধান হিসেবে পাশের জলাশয়ের ধারে তিনটি জেনারেটর স্থাপন করে সেখান থেকে সরাসরি পানি টেনে হোস পাইপের মাধ্যমে আগুনের দিকে ছিটানো শুরু হয়।
এতে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শত শত মানুষ এখন ঘরহারা হয়ে আশ্রয় ও ত্রাণের অপেক্ষায়।
আগুনের উৎস এখনও শনাক্ত হয়নি
আগুনের সূত্রপাত বা পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার তালহা বিন জাশিম জানান, বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে বস্তির একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগুন এখন ধীরে ধীরে কমছে।
তিনি বলেন, “আমরা কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি। প্রায় ২০টি ইউনিট কাজ করছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে; এখন উৎস শনাক্ত করা পরবর্তী ধাপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো খবর দিতে পারব বলে আশা করছি। তবে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।”
#Bangladesh #Fire #Korail #Dhaka #Disaster #sarakhonreports
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















