০২:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বে জনঘনত্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা: জাতিসংঘের নতুন মূল্যায়ন ডিসেম্বরে ঢাকা-করাচি রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি কদমতলীতে মাদককারবারিদের গুলিতে আহত যুবকের মৃত্যু শাহবাগে বিএমইউ ভবনে আগুন শীতকালেই পড়ুন এই পাঁচটি বই বিল গেটস  আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ে নারীর রহস্যজনক মৃত্যু কড়াইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডে জিএম কাদেরের গভীর সমবেদনা ও পুনর্বাসনের দাবি দি ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনঃ কেন ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করবে না, সামনে সম্পর্ক আরো উত্তপ্ত হবে করাইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: পানিসঙ্কটে নিঃস্ব শত শত মানুষ গ্যাবার্ডের ‘হান্টার’ দল কীভাবে সিআইএ-র গোপন গুদামে হানা দিয়ে কেনেডি হত্যাকাণ্ডের নথি উদ্ধার করল

দি ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনঃ কেন ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করবে না, সামনে সম্পর্ক আরো উত্তপ্ত হবে

বাংলাদেশ ভারতের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে ব্যাপক দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওই দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়। রায় ঘোষণার পাঁচ দিন পরই ঢাকা দিল্লিকে নোট ভারবেল পাঠিয়ে তাদের প্রত্যার্পণ চায়।

ঢাকার এই আনুষ্ঠানিক অনুরোধটি আগেই প্রত্যাশিত ছিল।

১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার সাজা ঘোষণার পরই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর ভাষায় ভারতের কাছে তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করা ভারতের “বাধ্যতামূলক দায়িত্ব।” আরও বলা হয়, “মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া অত্যন্ত অমিত্রতাপূর্ণ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবমাননা।”

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং এখান থেকেই বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন — যা ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অস্বস্তিকর।

গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের দাবি জানালেও ভারত এসব অনুরোধের জবাব দেয়নি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা প্রথমবার দিল্লিকে আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ অনুরোধ পাঠায়। ভারত কেবল নোটটি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেই থেমে যায়।

গত সপ্তাহে আইসিটি রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক অনুরোধেরও এখনও কোনো জবাব দেয়নি ভারত। রায়ের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি থেকেই তাদের সম্ভাব্য অবস্থানের ইঙ্গিত মেলে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা শুধু রায়টি “নোট করেছে।” আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের একটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে অটল। এ লক্ষ্যে ভারত সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করবে।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রত্যার্পণের অনুরোধটি বিবৃতিতে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়।

এই মুহূর্তে দিল্লি থেকে আরও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা কম। নয়াদিল্লিভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান মানোহর পার্রিকর ইনস্টিটিউটের গবেষক স্মৃতি এস. পট্টনায়ক বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার “সীমিত ম্যান্ডেট ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একটি ইন্টারিমক সরকার।” তার মতে, “ভারত একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না।”

অনেক বাংলাদেশির জন্য — বিশেষ করে যারা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা গত বছরের দমন-পীড়নে স্বজন হারিয়েছেন — আইসিটি রায়টি এক ধরনের প্রতিকার পাওয়ার মুহূর্ত। তবে শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতে আছেন, তাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা অনেকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

কিন্তু ভারতে শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন নেই বললেই চলে। বরং মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর থেকে বিরোধিতা আরও জোরালো হয়েছে। ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে তাকে হস্তান্তরের বিপক্ষে।

এর অন্যতম কারণ ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পরিবারের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সমর্থন দিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও তার বোনকে আশ্রয় দেয় ভারত, যেখানে তারা ছয় বছর অবস্থান করেন।

তবে আবেগীয় সম্পর্ক ছাড়াও শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়। বাংলাদেশে ইসলামপন্থী ও ভারতবিরোধী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান দিল্লিতে প্রশংসিত হয়। ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে তিনি অগ্রাধিকার দেওয়ায় দিল্লি তার প্রতি প্রবল সমর্থন দেখিয়েছে।

এ অবস্থায় ভারতের ঘনিষ্ঠ এক মিত্রকে মৃত্যুদণ্ডের মুখে পাঠানো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিল্লির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে — বিশ্লেষকদের এমন মত।

চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যার্পণে সহযোগিতা বাধ্যতামূলক হলেও ভারত চাইলে ‘রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধ’ উল্লেখ করে প্রত্যার্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যদিও চুক্তিতে বলা আছে, হত্যা বা মানবহত্যাকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে ধরা হবে না, তবুও শেখ হাসিনা এসব অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন তা প্রমাণ করা কঠিন হবে। ভারত আরও বলতে পারে, শেখ হাসিনার বিচার ন্যায্য হয়নি এবং আইসিটি অবৈধ বা অসাংবিধানিক।

যদি ভারত প্রত্যার্পণের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়ও, সামনে রয়েছে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া — যার মধ্যে ভারতের আদালতে সম্পূর্ণ প্রত্যার্পণ বিচার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সেখানে শেখ হাসিনা নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিতে পারবেন — যা তিনি বাংলাদেশে করতে পারেননি, দ্য হিন্দুর সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ বিশাল। তাই আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।

ভারতকে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়ে গবেষক অমিতাভ পালিওয়াল বিবিসিকে বলেন, সামনে এগোতে হলে দিল্লির প্রয়োজন “ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে — সামরিক বাহিনীসহ — নীরব ও ধৈর্যশীল কূটনীতি।”

পথটি সহজ নয়।

বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচার শুরু হতে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভোটে জেতার জন্য ভারতবিরোধী আবেগ উসকে দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

অতএব, নির্বাচনী ভাষণে ভারত যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে এবং তাকে প্রত্যার্পণে অনীহা দেখাচ্ছে — এসব নিয়ে বাংলাদেশের দলগুলো ভারতকে তীব্র সমালোচনা করতে পারে।

গত বছর শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক টানাপোড়েনে রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বে জনঘনত্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা: জাতিসংঘের নতুন মূল্যায়ন

দি ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনঃ কেন ভারত শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করবে না, সামনে সম্পর্ক আরো উত্তপ্ত হবে

০১:০৯:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ ভারতের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে ব্যাপক দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওই দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়। রায় ঘোষণার পাঁচ দিন পরই ঢাকা দিল্লিকে নোট ভারবেল পাঠিয়ে তাদের প্রত্যার্পণ চায়।

ঢাকার এই আনুষ্ঠানিক অনুরোধটি আগেই প্রত্যাশিত ছিল।

১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার সাজা ঘোষণার পরই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর ভাষায় ভারতের কাছে তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দুই দেশের প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করা ভারতের “বাধ্যতামূলক দায়িত্ব।” আরও বলা হয়, “মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া অত্যন্ত অমিত্রতাপূর্ণ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবমাননা।”

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন এবং এখান থেকেই বিবৃতি ও সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন — যা ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অস্বস্তিকর।

গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের দাবি জানালেও ভারত এসব অনুরোধের জবাব দেয়নি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা প্রথমবার দিল্লিকে আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ অনুরোধ পাঠায়। ভারত কেবল নোটটি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেই থেমে যায়।

গত সপ্তাহে আইসিটি রায় ঘোষণার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক অনুরোধেরও এখনও কোনো জবাব দেয়নি ভারত। রায়ের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংক্ষিপ্ত বিবৃতি থেকেই তাদের সম্ভাব্য অবস্থানের ইঙ্গিত মেলে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা শুধু রায়টি “নোট করেছে।” আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের একটি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারত শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থে অটল। এ লক্ষ্যে ভারত সব পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করবে।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রত্যার্পণের অনুরোধটি বিবৃতিতে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়।

এই মুহূর্তে দিল্লি থেকে আরও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া আসার সম্ভাবনা কম। নয়াদিল্লিভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান মানোহর পার্রিকর ইনস্টিটিউটের গবেষক স্মৃতি এস. পট্টনায়ক বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার “সীমিত ম্যান্ডেট ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একটি ইন্টারিমক সরকার।” তার মতে, “ভারত একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না।”

অনেক বাংলাদেশির জন্য — বিশেষ করে যারা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা গত বছরের দমন-পীড়নে স্বজন হারিয়েছেন — আইসিটি রায়টি এক ধরনের প্রতিকার পাওয়ার মুহূর্ত। তবে শেখ হাসিনা যেহেতু ভারতে আছেন, তাই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব। ফলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা অনেকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

কিন্তু ভারতে শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন নেই বললেই চলে। বরং মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর থেকে বিরোধিতা আরও জোরালো হয়েছে। ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে তাকে হস্তান্তরের বিপক্ষে।

এর অন্যতম কারণ ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পরিবারের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সমর্থন দিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা ও তার বোনকে আশ্রয় দেয় ভারত, যেখানে তারা ছয় বছর অবস্থান করেন।

তবে আবেগীয় সম্পর্ক ছাড়াও শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার হয়। বাংলাদেশে ইসলামপন্থী ও ভারতবিরোধী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান দিল্লিতে প্রশংসিত হয়। ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে তিনি অগ্রাধিকার দেওয়ায় দিল্লি তার প্রতি প্রবল সমর্থন দেখিয়েছে।

এ অবস্থায় ভারতের ঘনিষ্ঠ এক মিত্রকে মৃত্যুদণ্ডের মুখে পাঠানো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দিল্লির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে — বিশ্লেষকদের এমন মত।

চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যার্পণে সহযোগিতা বাধ্যতামূলক হলেও ভারত চাইলে ‘রাজনৈতিক চরিত্রের অপরাধ’ উল্লেখ করে প্রত্যার্পণ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যদিও চুক্তিতে বলা আছে, হত্যা বা মানবহত্যাকে রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে ধরা হবে না, তবুও শেখ হাসিনা এসব অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন তা প্রমাণ করা কঠিন হবে। ভারত আরও বলতে পারে, শেখ হাসিনার বিচার ন্যায্য হয়নি এবং আইসিটি অবৈধ বা অসাংবিধানিক।

যদি ভারত প্রত্যার্পণের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়ও, সামনে রয়েছে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া — যার মধ্যে ভারতের আদালতে সম্পূর্ণ প্রত্যার্পণ বিচার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সেখানে শেখ হাসিনা নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিতে পারবেন — যা তিনি বাংলাদেশে করতে পারেননি, দ্য হিন্দুর সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশে ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ বিশাল। তাই আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে।

ভারতকে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়ে গবেষক অমিতাভ পালিওয়াল বিবিসিকে বলেন, সামনে এগোতে হলে দিল্লির প্রয়োজন “ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে — সামরিক বাহিনীসহ — নীরব ও ধৈর্যশীল কূটনীতি।”

পথটি সহজ নয়।

বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচার শুরু হতে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভোটে জেতার জন্য ভারতবিরোধী আবেগ উসকে দেওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

অতএব, নির্বাচনী ভাষণে ভারত যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে এবং তাকে প্রত্যার্পণে অনীহা দেখাচ্ছে — এসব নিয়ে বাংলাদেশের দলগুলো ভারতকে তীব্র সমালোচনা করতে পারে।

গত বছর শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক টানাপোড়েনে রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।