সিআইএ-র আর্কাইভে টুলসি গ্যাবার্ডের অফিসের দল হঠাৎ উপস্থিত হলে সংস্থাটি বিস্মিত হয়
হোয়াইট হাউস গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিভেদের অভিযোগ নাকচ করেছে
যুক্তরাষ্ট্রে কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এখনও জোরালো
গত এপ্রিলে এক ভোরে কয়েকজন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন এলাকায় অবস্থিত সিআইএ-র গোপন আর্কাইভ কেন্দ্রটিতে পৌঁছান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল—রবার্ট এফ. কেনেডি, জন এফ. কেনেডি এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত এখনও শ্রেণিবদ্ধ থাকা নথি জব্দ করা।
তিনজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বরাতে জানা যায়, দলটি বিনা নোটিশে সেখানে পৌঁছায়, যা সিআইএ-কে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলে। এই মিশন পরিচালিত হচ্ছিল জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক (DNI) টুলসি গ্যাবার্ডের নির্দেশে। গ্যাবার্ড চান এসব নথি সিআইএ-র নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে জাতীয় আর্কাইভের কাছে হস্তান্তর করে দ্রুত ডিক্লাসিফিকেশনের (গোপনীয়তা প্রত্যাহার) প্রক্রিয়া শুরু করতে।
একজন সূত্র জানান, সেদিন সিআইএ বুঝতেই পারেনি যে তারা “এক উচ্চতর সরকারি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ” পেতে যাচ্ছে। সম্পর্কের শুরুতেই এই ঘটনা গ্যাবার্ডের অফিস ও সিআইএ-র মধ্যে সবচেয়ে মুখোমুখি পরিস্থিতির জন্ম দেয় বলেও তিনি জানান।
গোপন আর্কাইভে হঠাৎ হানা: কারা ছিলেন অভিযানে
দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কর্মকর্তা পল অ্যালেন ম্যাকডোনাল্ড II, যিনি গ্যাবার্ডের অফিসে অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন—তারা “ডিরেক্টরের মিশনে” এসেছেন।

সেদিন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তা অ্যামারিলিস ফক্স কেনেডি—সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের পুত্রবধূ—নিজের মিনিভ্যান চালিয়ে গুদামে উপস্থিত হন। প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্র না থাকা সত্ত্বেও তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে কাজ করেন এবং মূলত বিপুল পরিমাণ নথির ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমে নজর দেন।
সূত্র জানায়, রাত ২টা পর্যন্ত অভিযান চলে এবং পরে বিপুল পরিমাণ নথি জাতীয় আর্কাইভে হস্তান্তর করা হয়।
ট্রাম্পের নির্দেশ, গ্যাবার্ডের চাপ, সিআইএ-র অস্বস্তি
এই ঘটনা দেখায় সিআইএ ও গ্যাবার্ডের অফিসের মধ্যে চাপা টানাপোড়েন। ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত ডিক্লাসিফিকেশন চেয়েছিল ১৯৬৩ সালের জেএফকে হত্যাকাণ্ডসহ ১৯৬৮ সালে রবার্ট কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ডের নথি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চেয়ুং বলেন, ট্রাম্প উভয়ের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন—গ্যাবার্ড ও সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফের প্রতি। তিনি দাবি করেন, “পুরনো গণমাধ্যম বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।”
গ্যাবার্ডের অফিস জানায়, শুরু থেকেই তারা সিআইএ-র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে নির্বাহী আদেশ জারি করে গ্যাবার্ডসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কেনেডি হত্যাকাণ্ড-সংক্রান্ত নথি ডিক্লাসিফাই করতে নির্দেশ দেন।
তবে গ্যাবার্ড কি সরাসরি এই নির্দিষ্ট অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সময়ের চাপ ও সিআইএ-র সঙ্গে মুখোমুখি উত্তেজনা
ট্রাম্পের নির্দেশে ৪৫ দিনের মধ্যে আরএফকে ও কিং হত্যাকাণ্ডের নথি মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা জমা দিতে গ্যাবার্ডের ওপর চাপ ছিল। মার্চেই সেই সময়সীমা শেষ হয়। গ্যাবার্ডের দলে তখন হতাশা বাড়ছিল।
তাই তারা সিআইএ-র আর্কাইভে গিয়ে একটি নথি উপস্থাপন করে, যেখানে বলা হয়—সিআইএ অনুমতি না দিলেও এসব নথি নেওয়ার আইনি অধিকার তাদের আছে। কেউ বাধা দিলে জবাবদিহি করতে হবে বলেও সেখানে উল্লেখ ছিল।
এক সূত্র বলেন, সিআইএ যথেষ্ট সহযোগিতা করছিল না বলে গ্যাবার্ডের অফিস এই কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
তবে আরেক সূত্র দাবি করেন, সিআইএ অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ ছিল এবং পরিচালক র্যাডক্লিফ রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রকে আগেই জানিয়েছিলেন কোন নথি প্রকাশ করা হবে।
সূত্রগুলোর মধ্যে দুজন বলেন, প্রবেশদ্বারে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং কিছু চিৎকার শোনা যায়। তবে গ্যাবার্ডের অফিস দাবি করে—সবকিছু পেশাদারভাবেই হয়েছে।

গ্যাবার্ডের বক্তব্য: ‘আমরা সত্য খুঁজছি’
১০ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠকে গ্যাবার্ড বলেন, তিনি “হান্টার” পাঠিয়েছেন সিআইএ ও এফবিআই আর্কাইভ খুঁজে দেখার জন্য। ট্রাম্প ও কেনেডি জুনিয়র উভয়েই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। কেনেডি জুনিয়র বহুদিন ধরে বিশ্বাস করে আসছেন, সিআইএ তার বাবা ও চাচার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল—যা সিআইএ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দীর্ঘ ঐতিহ্য
সরকারি তদন্তে নিশ্চিত করা হয়েছে—১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জেএফকে-কে হত্যা করে একক অস্ত্রধারী লি হার্ভে অসওয়াল্ড। তবু যুক্তরাষ্ট্রে বহু নাগরিক এখনও এতে সন্দেহ পোষণ করেন। ট্রাম্পের সমর্থক ঘাঁটি—মাগা গোষ্ঠীতে—জেএফকে হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে কিউঅ্যানন ও এপস্টিন পর্যন্ত বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব জনপ্রিয়।
রবার্ট কেনেডি—যিনি পাঁচ বছর পর নিহত হন—তাকে হত্যা করেন সিরহান সিরহান। তিনি অপরাধ স্বীকার করেন এবং দোষী সাব্যস্ত হন।
নথি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া
এপ্রিলের সেই ঘটনাতে নিরাপত্তাকর্মীরা সিআইএ-র ডিক্লাসিফিকেশন টিমকে ডেকে পাঠায়। একজন সূত্র জানান, সিআইএ নথি প্রকাশে আপত্তি করেনি, তবে সবকিছু নিয়ম মেনে হওয়া প্রয়োজন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় আর্কাইভ নথি ডিজিটাইজ করে জনসমক্ষে আনে। এজন্য নথির চেইন অফ কাস্টডি বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সরকারি পরিবহনে নথি পাঠানো বাধ্যতামূলক।
এসব ব্যবস্থা নিতে ও গ্যাবার্ডের দলের চাহিদা অনুযায়ী নথি বাছাই করে মেরিল্যান্ডের কলেজ পার্কের জাতীয় আর্কাইভ ভবনে পাঠাতে রাত ২টা পর্যন্ত সময় লাগে।

ডিক্লাসিফাই হওয়া নথিতে নতুন কী পাওয়া গেল
মার্চ থেকে জাতীয় আর্কাইভ প্রায় ৮০ হাজার জেএফকে হত্যাকাণ্ডের নথি প্রকাশ করছে। এগুলোর মধ্যে সিআইএ-র নথিও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ফাইলগুলো সিআইএ-র অসওয়াল্ড সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে কিছু অতিরিক্ত তথ্য দিয়েছে, তবে সরকারি সিদ্ধান্ত—অসওয়াল্ড একাই ছিল হত্যাকারী—এ নিয়ে নতুন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এপ্রিল-মেতে প্রকাশিত ৭০ হাজার আরএফকে ফাইলে একই অবস্থা।
#: US_politics #KennedyFiles #CIA Gabbard #Declassification #Trump_Administration
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















