টিম কুক এখনও ধীর হচ্ছেন না। প্রতিদিন ভোরের আগে উঠেই ইমেইল দেখেন, ব্যায়াম করেন এবং জীবনের বড় অংশটাই দিয়েছেন অ্যাপলকে। তিনি আগেই বলেছেন, তিনি আরও কিছুদিন কোম্পানিতে থাকতে চান।
তবুও, কুকের ৬৫তম জন্মদিনের পর—একটি বয়স যখন অনেক নির্বাহী অবসরের কথা ভাবেন—বিশ্লেষক, বিনিয়োগকারী ও প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন প্রশ্ন উঠেছে: বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মার্কিন কোম্পানিটির পরবর্তী প্রধান কে?
স্পষ্ট করে বললে, কুককে এখনই সরে যেতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। অ্যাপলের নির্বাহীদের জন্য নির্দিষ্ট অবসর বয়স নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সম্পর্কিত সাম্প্রতিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও, কুক ২০১১ সালে সিইও হওয়ার পর থেকে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অসাধারণ মূল্য তৈরি করেছেন—অ্যাপলের বাজারমূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে।
অ্যাপলের দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান আর্ট লেভিনসনের বয়স ৭৫—এই বয়সের পরেই সাধারণত বোর্ড সদস্যরা পদ ছাড়েন। কুক নিজেও বোর্ড সদস্য। তিনি চাইলে চেয়ারম্যান হতে পারেন এবং নতুন সিইওর জন্য জায়গা তৈরি করতে পারেন, কিংবা কিছুদিন দু’টি পদই একসঙ্গে রাখতে পারেন—যেমনটি অনেক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কোম্পানির প্রধান করে থাকেন।
সাম্প্রতিক আলোচনায় উঠে এসেছে কোম্পানির ভেতরের চারজন নির্বাহী, যাঁরা ভবিষ্যতে কুকের উত্তরসূরি হতে পারেন।
উত্তরসূরি তালিকার চার সম্ভাব্য প্রার্থী
জন টারনাস (বয়স ৫০): হার্ডওয়্যার বিভাগের প্রধান
অ্যাপলে ২৪ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাবনাময় নাম টারনাস। অ্যাপল মূলত হার্ডওয়্যারভিত্তিক কোম্পানি এবং তিনি সেই বিভাগের প্রধান হওয়ায় তাঁকে এগিয়ে ধরা হয়।

তিনি iPad দিয়ে শুরু করেন, পরে Mac ও AirPods প্রকল্পে নেতৃত্ব দেন। বর্তমানে অ্যাপলের সব প্রোডাক্ট—বিশেষত iPhone—তাঁর অধীনে।
অ্যাপলের বিভিন্ন বিভাগ—ডিজাইন, চিপ নির্মাণ, সফটওয়্যার—মিলে যে পণ্য তৈরি করে, টারনাস তার চূড়ান্ত সমন্বয় নিশ্চিত করেন। তাঁর অন্যতম বড় সাফল্য হলো Intel প্রসেসরের পরিবর্তে অ্যাপলের নিজস্ব চিপ ব্যবহার করে Mac–কে রূপান্তর করা।
এতে ম্যাক আরও দ্রুত, শক্তি–সাশ্রয়ী ও কম তাপ উৎপন্নকারী হয়ে ওঠে। ২০২০ সালের পরিবর্তনের পর ম্যাক বিক্রি বেড়ে যায়, যদিও মহামারি–পরবর্তী সময়ে কিছুটা কমেছে কিন্তু এখনও আগের তুলনায় উঁচুতেই রয়েছে।
ক্রেইগ ফেডেরিগি (বয়স ৫৬): সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান
অ্যাপলের অন্যতম পরিচিত মুখ ফেডেরিগি। বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্সে তিনি সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমের নতুন সংস্করণ উপস্থাপন করেন।
তিনি বিশ্বের এক বিলিয়নের বেশি অ্যাপল ডিভাইসে চলা সফটওয়্যার এর দায়িত্বে—যেমন টারনাস হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে।
সহকর্মীরা বলেন, তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন এবং টিমকে নিয়ে সম্মেলন কক্ষে বসে পরিষ্কারভাবে দিকনির্দেশনা দেন।
এক সহকর্মীর ব্যর্থতার পর অ্যাপলের AI প্রকল্পে আরও দায়িত্ব পান তিনি। তবুও, সিরি এখনো মৌলিক প্রশ্নের বাইরে যেতে পারে না, যেখানে প্রতিযোগী চ্যাটবট গুলো মানুষের মতো কথোপকথন করতে পারে।
এডি কিউ (বয়স ৬১): সার্ভিস বিভাগ
অ্যাপলের প্রাচীন নির্বাহীদের একজন কিউ। ১৯৮০–এর শেষ থেকে কোম্পানিতে আছেন। কুকের নেতৃত্বে অ্যাপলের সবচেয়ে লাভজনক খাত—সার্ভিস—তাঁর তত্ত্বাবধানে।
iPhone–কে অনেকেই Disney World–এর সঙ্গে তুলনা করেন—একবার ঢুকলে খরচ করতেই হয়। গেম, সাবস্ক্রিপশন, স্টোরেজ, সার্চ—সব ক্ষেত্রেই অ্যাপল আয় করে, বা অংশীদারদের থেকে বড় অঙ্কের কমিশন নেয়।
কিউ স্বভাবগতভাবে প্রাণবন্ত, বন্ধুসুলভ এবং বড় বড় চুক্তি করার ক্ষেত্রে পারদর্শী। মিউজিক লেবেল, প্রকাশনা, চলচ্চিত্র স্টুডিও থেকে শুরু করে সম্প্রতি Formula One পর্যন্ত নানা জায়গায় চুক্তি করেছেন।
তিনি iCloud ও Apple Maps পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। স্টিভ জবসের কাছের লোকদের একজন ছিলেন তিনি। বয়সে কুকের কাছাকাছি হওয়ায় তাঁকে দীর্ঘমেয়াদি সিইও হিসেবে দেখা হয় না।

গ্রেগ ‘জোজ’ জসউইয়াক (বয়স ৬১): মার্কেটিং বিভাগের প্রধান
আগামী বছর তাঁর অ্যাপলে ৪০ বছর পূর্ণ হবে। অ্যাপলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর একটি—মার্কেটিং—তাঁর তত্ত্বাবধানে।
অ্যাপলের ব্র্যান্ড নির্মাণ প্রক্রিয়া খুবই সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা করা হয়, যা তাদের ডিভাইসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই শক্তিশালী ব্র্যান্ডই অ্যাপলকে উচ্চ মূল্য নির্ধারণ করতে সাহায্য করে, আর এতে লাভজনকতা বাড়ে।
তিনি iPhone লঞ্চ ইভেন্টের অন্যতম মুখ এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় কোম্পানির বার্তা পৌঁছে দেন।
কোভিডের পর থেকে যেসব কী-নোট ইভেন্ট রেকর্ড করে দেখানো হয়, সেগুলোতেও তিনি প্রধান ভূমিকা রাখেন।
সম্প্রতি কোম্পানির AI ব্যর্থতার বিষয়েও তিনি ও ফেডেরিগি একসঙ্গে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেন যে অ্যাপলের কাজ এখনও তাদের উচ্চ মান অর্জন করতে পারেনি।
টিম কুক শিগগিরই সরে যাচ্ছেন এমন কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে অ্যাপলের পরবর্তী যুগে কে নেতৃত্ব দেবেন—তা নিয়ে আলোচনা তীব্র। কোম্পানির ভেতরের চারজন শীর্ষ নির্বাহী এখন সেই আলোচনার কেন্দ্রে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















