ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী রাচেল রিভস এই সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ শরৎকালীন বাজেট ঘোষণা করবেন। তাঁর নেতৃত্বে থাকা লেবার সরকার এখন বেশ অজনপ্রিয়। সমর্থন ২০ শতাংশের নিচে নেমেছে। কিন্তু রিভসের জন্য এই অজনপ্রিয়তার হতে পারে সুযোগ, কারণ আগামী নির্বাচন দূরে। এখন সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা আছে।
অজনপ্রিয় হলেও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়
কর বাড়ানো ও ব্যয় কমানোর মতো কঠিন পদক্ষেপ এখনই নেওয়া গেলে ভবিষ্যতে অর্থনীতি কিছুটা শক্ত হবে। এতে সরকার পরবর্তী নির্বাচনের আগে কিছু সাফল্য দেখাতে পারবে।
বন্ড বাজারে ইতিবাচক বার্তা যাবে। এতে সরকার যে বিপুল পরিমাণ ঋণের সুদ দেয়, তা ধীরে ধীরে কমতে পারে। এসব বড় সিদ্ধান্ত লেবার পার্টিকে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির গল্প তৈরি করতে সাহায্য করবে—যা তারা অনেকদিন ধরে করতে পারেনি।
রিভসের বড় বাধা
রিভসের সমস্যা দুটি।
প্রথমত, নির্বাচনের সময় লেবার বলেছিল তারা আয়কর, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বা ভ্যাট বাড়াবে না। অথচ মোট কর আয়ের তিন-চতুর্থাংশ আসে এখান থেকেই।
দ্বিতীয়ত, সরকারের হাতে অতিরিক্ত ব্যয় করার সুযোগ খুব কম—মাত্র ১০ বিলিয়ন পাউন্ড, যা একটি বিশাল অর্থনীতির তুলনায় খুবই অল্প।
এর ওপর উৎপাদনশীলতার পূর্বাভাস কমে গেছে। ফলে শুধু আগের অবস্থা বজায় রাখতেই প্রায় ২০ বিলিয়ন পাউন্ড লাগবে। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি চাইলে মোট ৪০ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো কর বৃদ্ধি ও ব্যয় কমানো প্রয়োজন।

টাকা আসবে কোথা থেকে?
কল্যাণ খাতে অনেক ব্যয় হয়—প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এখানে কাটছাঁট করলে মানুষ ক্ষুব্ধ হবে।
বিশেষ করে আলোচনা হচ্ছে “ট্রিপল লক” নিয়ে—এতে পেনশন বছরে কত বাড়বে, তা তিনটি মানদণ্ডের মধ্যে যেটি বেশি, তার ওপর নির্ভর করে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি আর টেকসই নয়।
আয়কর বাড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আয়কর মাত্র দুই শতাংশ বাড়ালে বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন পাউন্ড আয় হতে পারে।
এর বদলে সম্ভবত আয়করের সীমা স্থির রাখা হবে। এতে মানুষ উচ্চ করের স্তরে ঢুকে পড়বে, কিন্তু প্রকাশ্যে কর বাড়ানোর ঘোষণা দিতে হবে না। এটি কার্যকর পদ্ধতি নয়; তবে সরকার সহজ পথ হিসেবে এটি বেছে নিতে পারে।
ভ্যাট বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, তাই সেটাও সম্ভব নয়।
বাকি উপায় হলো ছোটখাটো কর—জুয়া, পেনশন, ব্যয়বহুল সম্পত্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ইত্যাদিতে। তবে এসব থেকে আয় অনিশ্চিত।
কর ব্যবস্থা সরল করা
আরেকটি উপায় হলো জটিল করব্যবস্থা সহজ করা। এতে ফল পেতে সময় লাগে কৌশলগত দিকটি স্পষ্ট হবে।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্পোরেট কর এত জটিল যে ব্যবসা বাড়ানোর আগ্রহ কমে যায়। ভ্যাটের ক্ষেত্রে আয়ের সীমা অতিক্রম করলেই অনেক বেশি কর দিতে হয়; ফলে মানুষ ব্যবসা বড় করতে চায় না।
আয়কর বড় সমস্যা আছে। ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড আয়ের মধ্যে করহার ৬০ শতাংশের ওপরে উঠতে পারে—এটি মানুষকে অতিরিক্ত কাজ না করতে উৎসাহিত করে।

রাজনৈতিক ঝুঁকি, কিন্তু প্রয়োজন
করব্যবস্থা বদলানো, পেনশন সুবিধা কমানো বা আগের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা—সবই খুব অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত।
তবু বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ও কঠিন সিদ্ধান্তই হয়তো সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ রাখবে। রিভস যদি সাহসী পদক্ষেপ না নেন, তবে অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















