০৩:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

অতিমূল্যায়িত টাকার ধাক্কা: রপ্তানি হুমকিতে, আমদানিতে লাভ

বাংলাদেশের মুদ্রা ‘টাকা’ বাস্তব মানদণ্ডে এখন অতিমূল্যায়িত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি পণ্য দামি হয়ে পড়ছে, বিপরীতে বিদেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে আরও সস্তা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থা রপ্তানি প্রতিযোগিতা, বৈদেশিক আয় এবং সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর গুরুতর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে।


টাকার অতিমূল্যায়ন: কী দেখাচ্ছে সর্বশেষ সূচক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন তথ্য অনুযায়ী, বাস্তব কার্যকর বিনিময় হার সূচক (রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট—আরইইআর) অক্টোবর মাসে দাঁড়িয়েছে ১০৬.৫৫, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১০৪.৫৩।

এই বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে টাকার মান তার ভারসাম্যমূল্যের তুলনায় বেশি শক্তিশালী।

  • আরইইআর যদি ১০০-এর নিচে থাকে—তবে রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়ে
  • আরইইআর যদি ১০০-এর ওপরে থাকে—তবে মুদ্রার অতিমূল্যায়ন ঘটে, রপ্তানি কম লাভজনক হয় এবং আমদানি সস্তা হয়ে যায়

বাংলাদেশের ১৫টি প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে হওয়া মোট বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই এই সূচকে ধরা হয়। তাই আরইইআর দেশের প্রকৃত মুদ্রামানের একটি নির্ভরযোগ্য নির্দেশক।


ডলারের সমতামূল্য ও অতিমূল্যায়নের হিসাব

সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর আরইইআর অনুযায়ী ডলারের সমতামূল্য হওয়া উচিত ছিল প্রায় ১৩০.০৪ টাকা।
কিন্তু বাজারে ডলার লেনদেন হয়েছে ১২২.০৫ টাকায়।
এর মানে—টাকা প্রায় ৭.৯৯ টাকা অতিমূল্যায়িত ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ডলার কেনা বন্ধ রেখেছে, যাতে বিনিময় হার আরও বাড়তে না পারে।


অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি: রপ্তানির জন্য সতর্কবার্তা

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, টাকার অতিমূল্যায়ন রপ্তানি আয়, শিল্পখাতের প্রতিযোগিতা এবং বহির্বাণিজ্যের ভারসাম্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

ড. এম. মাসরুর রিয়াজ

চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ
তিনি বলেন,
“এটি রপ্তানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কয়েক বছর আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলাম, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে।”

ড. আখতার হোসেন

প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক
তার মতে, উচ্চ আরইইআর বাংলাদেশের জন্য ভালো সংকেত নয়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা কমে যেতে পারে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আরইইআর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


অতিমূল্যায়নের মূল কারণ: কেন বাড়ছে চাপ

• প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি বেশি
• বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৬.২৯ শতাংশ (আগের বছর ছিল ৯.০২ শতাংশ)
• জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ২ বিলিয়ন ডলার কেনে
• দীর্ঘ সময় ধরে মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ অবস্থানে রয়েছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা চাই না হঠাৎ বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হোক। তাই সূচক স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হচ্ছে।”


#টাকা #বিনিময়হার #রপ্তানি #বাংলাদেশব্যাংক #অর্থনীতি #মুদ্রাস্ফীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

সম্ভাব্য আলোচনায় ট্রাম্পকে কী দিতে পারেন মাদুরো? প্রধান হাতিয়ার তেল

অতিমূল্যায়িত টাকার ধাক্কা: রপ্তানি হুমকিতে, আমদানিতে লাভ

০২:৩০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের মুদ্রা ‘টাকা’ বাস্তব মানদণ্ডে এখন অতিমূল্যায়িত হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি পণ্য দামি হয়ে পড়ছে, বিপরীতে বিদেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে আরও সস্তা। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থা রপ্তানি প্রতিযোগিতা, বৈদেশিক আয় এবং সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপর গুরুতর নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে।


টাকার অতিমূল্যায়ন: কী দেখাচ্ছে সর্বশেষ সূচক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন তথ্য অনুযায়ী, বাস্তব কার্যকর বিনিময় হার সূচক (রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট—আরইইআর) অক্টোবর মাসে দাঁড়িয়েছে ১০৬.৫৫, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১০৪.৫৩।

এই বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে টাকার মান তার ভারসাম্যমূল্যের তুলনায় বেশি শক্তিশালী।

  • আরইইআর যদি ১০০-এর নিচে থাকে—তবে রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়ে
  • আরইইআর যদি ১০০-এর ওপরে থাকে—তবে মুদ্রার অতিমূল্যায়ন ঘটে, রপ্তানি কম লাভজনক হয় এবং আমদানি সস্তা হয়ে যায়

বাংলাদেশের ১৫টি প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে হওয়া মোট বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশই এই সূচকে ধরা হয়। তাই আরইইআর দেশের প্রকৃত মুদ্রামানের একটি নির্ভরযোগ্য নির্দেশক।


ডলারের সমতামূল্য ও অতিমূল্যায়নের হিসাব

সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর আরইইআর অনুযায়ী ডলারের সমতামূল্য হওয়া উচিত ছিল প্রায় ১৩০.০৪ টাকা।
কিন্তু বাজারে ডলার লেনদেন হয়েছে ১২২.০৫ টাকায়।
এর মানে—টাকা প্রায় ৭.৯৯ টাকা অতিমূল্যায়িত ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ডলার কেনা বন্ধ রেখেছে, যাতে বিনিময় হার আরও বাড়তে না পারে।


অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি: রপ্তানির জন্য সতর্কবার্তা

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, টাকার অতিমূল্যায়ন রপ্তানি আয়, শিল্পখাতের প্রতিযোগিতা এবং বহির্বাণিজ্যের ভারসাম্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

ড. এম. মাসরুর রিয়াজ

চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ
তিনি বলেন,
“এটি রপ্তানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কয়েক বছর আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলাম, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে।”

ড. আখতার হোসেন

প্রধান অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংক
তার মতে, উচ্চ আরইইআর বাংলাদেশের জন্য ভালো সংকেত নয়। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা কমে যেতে পারে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে টিকে থাকতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আরইইআর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


অতিমূল্যায়নের মূল কারণ: কেন বাড়ছে চাপ

• প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি বেশি
• বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৬.২৯ শতাংশ (আগের বছর ছিল ৯.০২ শতাংশ)
• জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ২ বিলিয়ন ডলার কেনে
• দীর্ঘ সময় ধরে মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ অবস্থানে রয়েছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন,
“আমরা চাই না হঠাৎ বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হোক। তাই সূচক স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় কৌশল নেওয়া হচ্ছে।”


#টাকা #বিনিময়হার #রপ্তানি #বাংলাদেশব্যাংক #অর্থনীতি #মুদ্রাস্ফীতি