০৭:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ বিতরণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি: নজরুল ইসলাম মাল্টিপল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্টেশন (এমএমএস) গ্রহণে প্রাথমিক গর্ভপাতের ঝুঁকি ৩০% কমে ডিএনএ-গবেষণায় আফ্রিকার অরণ্য হাতির সংখ্যা বাড়ল অ্যাঙ্গোলার গ্রামবাসীরা এখন কচ্ছপ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন থাইল্যান্ডে বন্যা রাবারের উৎপাদন বিপর্যয়ে IMEI রেজিস্ট্রেশন না করলে নেটওয়ার্ক বন্ধ: NEIR পোর্টালে ফোন বৈধ করার সম্পূর্ণ গাইড পাকিস্তানঃ ভেঙে পড়া শাসনব্যবস্থা, ভেঙে পড়ার ফলাফল হংকংয়ের তাই পোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু, ২৭৯ জন নিখোঁজ রাজনৈতিক বার্তার ভেতর বন্ধুত্বের গল্প

লালদিয়া ও প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের দাবি

: চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচক হলেও চুক্তির স্বচ্ছতা জরুরি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ দেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে লালদিয়া ও প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল নিয়ে সরকার যে চুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর সব তথ্য, শর্ত ও প্রক্রিয়া দ্রুতই জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

টিআইবি’র উদ্বেগ
বুধবার এক বিবৃতিতে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া টার্মিনাল এবং সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ-র সঙ্গে প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল চুক্তি—দুটোকেই আরও স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকারের উদ্যোগ স্বাগত জানানো হলেও দীর্ঘমেয়াদি এসব চুক্তিতে কীভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, তা জানানো জরুরি।

জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন
ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন—
• বন্দরের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে কি না।
• সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনের ওপর ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব মূল্যায়ন হয়েছে কি না।
• জনস্বার্থ কতটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
• এসব চুক্তি স্থানীয় দক্ষতা ও সক্ষমতা কতটা উন্নত করবে।
• দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভিত্তি হিসেবে একটি স্পষ্ট অর্থনৈতিক কৌশলগত রোডম্যাপ আদৌ ছিল কি না।

তিনি আরও বলেন, সরকার যেহেতু চুক্তি সই করেছে, তাই জাতীয় স্বার্থসম্পর্কিত এসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে দ্রুত জানানো দরকার।

অস্বাভাবিক দ্রুততার উদ্বেগ
এপিএম টার্মিনালসের চুক্তির ক্ষেত্রে আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রস্তাব জমার পর চুক্তি সম্পন্ন হতে ৬২ দিন লাগতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে—
• প্রস্তাব জমা,
• প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন,
• চুক্তি স্বাক্ষরসহ
মোট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ (প্রযুক্তিগত ও আর্থিক মূল্যায়ন, আলোচনা, পোর্ট বোর্ড সভা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং লেটার অব অ্যাওয়ার্ড)—এসব অত্যন্ত সংবেদনশীল রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া মাত্র দুই সপ্তাহে সম্পন্ন হয়েছে।

টিআইবি বলছে, এ ধরনের অস্বাভাবিক দ্রুততা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন সৃষ্টি করে। তাই সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা জরুরি।

পদ্ধতিগত অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন
ড. ইফতেখারুজ্জামান জানতে চান, প্যাঙ্গাঁও টার্মিনালের চুক্তি যদি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে, তবে লালদিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী পদ্ধতি কেন অনুসরণ করা হলো—এটিও সরকারের ব্যাখ্যা করা দরকার।

স্থানীয় অংশীজনের মতামত বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ইতিবাচক দিক যেমন থাকে, তেমনি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য দায়-দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা—এসব বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। স্থানীয় অংশীজনদের মতামত কতটা গুরুত্ব পেয়েছে, সেটিও স্পষ্ট নয়।

রাষ্ট্রের লাভ-ক্ষতি প্রকাশ না করার সমালোচনা
ড. জামান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মুনাফা যেমন থাকবে, তেমনি রাষ্ট্র কী পাবে—তার স্পষ্ট হিসাব জনগণকে জানানো দরকার।

তিনি বলেন:
• কোন খরচ-সুফল বিশ্লেষণ (কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস) হয়েছে কি না,
• দেশের জনগণের জন্য আর্থিক লাভ-ক্ষতির বিষয়টি চুক্তিতে কীভাবে উল্লেখ রয়েছে,
এসব কিছুই এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

স্বচ্ছতার স্বার্থে এসব তথ্য দ্রুত প্রকাশ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।


জনপ্রিয় সংবাদ

কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ বিতরণ

লালদিয়া ও প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের দাবি

০৪:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

: চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ ইতিবাচক হলেও চুক্তির স্বচ্ছতা জরুরি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ দেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে লালদিয়া ও প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল নিয়ে সরকার যে চুক্তিগুলো করেছে, সেগুলোর সব তথ্য, শর্ত ও প্রক্রিয়া দ্রুতই জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

টিআইবি’র উদ্বেগ
বুধবার এক বিবৃতিতে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া টার্মিনাল এবং সুইজারল্যান্ডের মেডলগ এসএ-র সঙ্গে প্যাঙ্গাঁও টার্মিনাল চুক্তি—দুটোকেই আরও স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সরকারের উদ্যোগ স্বাগত জানানো হলেও দীর্ঘমেয়াদি এসব চুক্তিতে কীভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, তা জানানো জরুরি।

জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন
ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন—
• বন্দরের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে কি না।
• সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনের ওপর ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব মূল্যায়ন হয়েছে কি না।
• জনস্বার্থ কতটা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
• এসব চুক্তি স্থানীয় দক্ষতা ও সক্ষমতা কতটা উন্নত করবে।
• দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির ভিত্তি হিসেবে একটি স্পষ্ট অর্থনৈতিক কৌশলগত রোডম্যাপ আদৌ ছিল কি না।

তিনি আরও বলেন, সরকার যেহেতু চুক্তি সই করেছে, তাই জাতীয় স্বার্থসম্পর্কিত এসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে দ্রুত জানানো দরকার।

অস্বাভাবিক দ্রুততার উদ্বেগ
এপিএম টার্মিনালসের চুক্তির ক্ষেত্রে আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রস্তাব জমার পর চুক্তি সম্পন্ন হতে ৬২ দিন লাগতে পারে।
কিন্তু বাস্তবে—
• প্রস্তাব জমা,
• প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন,
• চুক্তি স্বাক্ষরসহ
মোট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ (প্রযুক্তিগত ও আর্থিক মূল্যায়ন, আলোচনা, পোর্ট বোর্ড সভা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং লেটার অব অ্যাওয়ার্ড)—এসব অত্যন্ত সংবেদনশীল রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া মাত্র দুই সপ্তাহে সম্পন্ন হয়েছে।

টিআইবি বলছে, এ ধরনের অস্বাভাবিক দ্রুততা পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে যৌক্তিক প্রশ্ন সৃষ্টি করে। তাই সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা জরুরি।

পদ্ধতিগত অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন
ড. ইফতেখারুজ্জামান জানতে চান, প্যাঙ্গাঁও টার্মিনালের চুক্তি যদি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে, তবে লালদিয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী পদ্ধতি কেন অনুসরণ করা হলো—এটিও সরকারের ব্যাখ্যা করা দরকার।

স্থানীয় অংশীজনের মতামত বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ইতিবাচক দিক যেমন থাকে, তেমনি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য দায়-দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা—এসব বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। স্থানীয় অংশীজনদের মতামত কতটা গুরুত্ব পেয়েছে, সেটিও স্পষ্ট নয়।

রাষ্ট্রের লাভ-ক্ষতি প্রকাশ না করার সমালোচনা
ড. জামান বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মুনাফা যেমন থাকবে, তেমনি রাষ্ট্র কী পাবে—তার স্পষ্ট হিসাব জনগণকে জানানো দরকার।

তিনি বলেন:
• কোন খরচ-সুফল বিশ্লেষণ (কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস) হয়েছে কি না,
• দেশের জনগণের জন্য আর্থিক লাভ-ক্ষতির বিষয়টি চুক্তিতে কীভাবে উল্লেখ রয়েছে,
এসব কিছুই এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

স্বচ্ছতার স্বার্থে এসব তথ্য দ্রুত প্রকাশ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।