সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) পাকিস্তানি নাগরিকদের নতুন ভিসা ইস্যু করছে না—এ তথ্য সেনেটের এক কমিটিকে জানিয়েছে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে দেশটি পাকিস্তানি পাসপোর্টের ওপর আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। সেনেট কমিটির সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করে জানানো হয়, ভিসা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং সীমাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় বহু পাকিস্তানি চাকরি, ব্যবসা এবং পারিবারিক কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ছেন।
ভিসা পরিস্থিতি: কী জানাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
সেনেট কমিটির বৈঠকে অতিরিক্ত স্বরাষ্ট্র সচিব স্পষ্ট করে বলেন যে ইউএই এবং সৌদি আরব পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিষিদ্ধ করেনি, কিন্তু নতুন ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে কঠোরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। তিনি জানান, দু-দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর্যায়ে না গেলেও বাস্তবে নতুন ভিসা প্রদান প্রায় বন্ধ রেখেছে, যার ফলে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা অনুমোদনের হার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
![]()
কেন তৈরি হলো এই জটিলতা
অতিরিক্ত সচিবের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নিরাপত্তা যাচাই, আগের ভ্রমণ রেকর্ড, আবেদনকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে পাকিস্তানি আবেদনকারীদের ভিসা প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। ইউএই ভিসা সিস্টেমে বাড়তি যাচাই–বাছাইয়ের ফলে অনেকের আবেদন আটকে যাচ্ছে বা দীর্ঘ সময় ঝুলে রয়েছে। এর ফলে চাকরির চুক্তি, ব্যবসায়িক সফর, পারিবারিক ভ্রমণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি ভিসার আবেদনকারীরাও মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউএই কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের জন্য একাধিক ভিসা–সংক্রান্ত ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ছাড়ের চুক্তি কার্যকর হওয়া, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার আশ্বাস প্রদান, এবং পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণা। তবে এসব পদক্ষেপের পরও সাধারণ পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা ইস্যুর সীমাবদ্ধতা অব্যাহত রয়েছে বলে সেনেট কমিটিকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়। ফলে সরকারি পর্যায়ে ইতিবাচক যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও মাঠপর্যায়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

সিনেট কমিটির আলোচনা
সিনেট কমিটি এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানতে চায় কেন পাকিস্তানি নাগরিকরা হঠাৎ করে এমন ভিসা–সংক্রান্ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সরকার কীভাবে কূটনৈতিকভাবে এই জটিলতা দূর করার চেষ্টা করছে। কমিটির সদস্যরা বলেন, যদি বিচার-পরবর্তী মন্তব্য বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় যেন ইউএই কর্তৃপক্ষের সাথে অবিলম্বে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করে ভিসা সীমাবদ্ধতার প্রকৃত কারণ, সুনির্দিষ্ট নীতিগত পরিবর্তন এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা সংগ্রহ করা হয়।
ইউএই আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিষিদ্ধ না করলেও ভিসা ইস্যুর জটিলতা, কঠোরতা এবং অনিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে হাজারো পাকিস্তানি নাগরিক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অভিবাসী শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা–সংক্রান্ত এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেনেট কমিটি জোর দিয়ে বলেছে যে সরকারি পর্যায়ে দ্রুত ও সক্রিয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান বের করা এখন সময়ের দাবি।
#পাকিস্তান #ইউএই_ভিসা #সৌদি_আরব #স্বরাষ্ট্র_মন্ত্রণালয় #সেনেট_কমিটি #অভিবাসন #কূটনৈতিক_সম্পর্ক #দক্ষিণ_এশিয়া #প্রবাসী_শ্রমিক
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















