৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বেইজিংভিত্তিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিউ ওরিয়েন্টালের প্রতিষ্ঠাতা ইউ মিনহং তাঁর কর্মীদের কাছে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি তাঁর দক্ষিণ মেরু সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
তিনি লিখেছিলেন, “আমি অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছন্ন পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আছি—চোখের সামনে বিস্তীর্ণ শুভ্রতা, সবুজাভ হিমশৈল আর গভীর নীরবতা। সূর্যের আলোয় হিমবাহগুলো ঝলমল করে, যেন সময়ের শক্তি আর ধৈর্যের মানে নিজে থেকেই প্রকাশ করছে।”
ইউ তাঁর কঠিন পথচলার কথা স্মরণ করেন—পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে নিজস্ব ব্যবসা শুরুর দিনগুলো। এরপর তিনি আরও লেখেন, অ্যান্টার্কটিকার কঠোর আবহাওয়ায় টিকে থাকা পেঙ্গুইনদের দেখে তাঁর মনে হয়েছে, মানুষও নানা বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যায়।
শেষে তিনি কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান—“হাত মিলিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলুন, ভালোবাসা ও দায়িত্ব দিয়ে আরও উজ্জ্বল আগামী গড়ে তুলুন।”
কিন্তু তাঁর এই বার্তা কর্মীদের মধ্যে খুব একটা উষ্ণ প্রতিক্রিয়া পায়নি। সামাজিক মাধ্যমে তারা লেখেন, “আমাদের বস যখন অ্যান্টার্কটিকায় ‘সংগ্রাম’ করছেন, আমরা তখন অফিসের ডেস্কেই আটকে আছি।”
ইউ পরে দু’বার ক্ষমা চান। বলেন, তিনি দম্ভ দেখাতে চাননি; কেবল নিজের অনুভূতি ভাগ করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, সফরটি বিনোদনের হলেও কিছু ব্যবসায়িক কাজও ছিল। কিন্তু নেটিজেনরা তাঁর ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলতেই থাকে।
ইউর উদ্দেশ্য খারাপ ছিল বলে মনে হয় না। অ্যান্টার্কটিকা সফরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ব করেছেন—এমন ধারণারও ভিত্তি নেই। কিন্তু পৃথিবী বদলে গেছে। তরুণদের কাজ-জীবন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন—বিশেষ করে যখন অর্থনীতি মন্থর, চাকরি কম, অনিশ্চয়তা বেশি। তাই তাঁর বক্তব্য অনেকের কাছেই “ওকে বুমার” ধরনের মনে হয়েছে।
এ ঘটনাটি ২০২০ সালের একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম বিলিবিলি একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে পরিচিত মধ্যবয়সী অভিনেতা হে বিং তরুণদের প্রশংসা করে বলেন—শিক্ষা, ভ্রমণ ও তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগে তারা আরও উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবে বড় হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “তোমাদের প্রজন্মের কারণে বিশ্ব চীনকে আরও বেশি পছন্দ করছে।”
কিন্তু অনেক তরুণ এতে খুশি হয়নি। তারা বলেন, উন্নয়নের ‘বুম’ সময়কালে যে সুবিধা প্রাপ্তির কথা, তা তারা পাননি—বরং হে নিজেই সেই সময়ের সুবিধাভোগী ছিলেন।
ইউর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তিনি ১৯৮০ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন—যখন চীন সদ্য উন্মুক্ত হয়েছে। সেই সময় চীনা শিক্ষার্থীরা বিদেশ—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে—পড়তে যাওয়া শুরু করে। ইউ তখন TOEFL পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্লাস নিতেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বেসরকারি শিক্ষা প্রদান করার অভিযোগে শাস্তি দেয়। এরপর তিনি শিশু ও শিক্ষার্থীদের পড়ানো চালিয়ে যান। ১৯৯৩ সালে তিনি নিউ ওরিয়েন্টাল প্রতিষ্ঠা করেন, যা ২০০৬ সালে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।
নিঃসন্দেহে ইউ অনেক বাধা অতিক্রম করেছেন, কিন্তু পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন অনেক সুযোগ—যা আজকের তরুণদের কাছে কল্পনাতীত। সেই সময়ে এমন সাফল্যের গল্প মানুষ খুব আগ্রহ নিয়ে শুনত। সবাই বিশ্বাস করত—পরিশ্রম, প্রস্তুতি ও সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বড় সাফল্য আসবেই। কিন্তু এখন বাস্তবতা ভিন্ন।
উইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ, বিভিন্ন খাতে চাপ বেড়েছে। ফলে কর্মীরা নিজের অবস্থান আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারছে। তারা এমন এলিট সাফল্যের গল্প শুনে ক্লান্ত, যেগুলো বাস্তব কর্মজীবনের সঙ্গে মেলে না।”
এমন গল্পের আকর্ষণ সত্যিই কমে গেছে। সম্প্রতি আমি বিশের কোঠার এক দম্পতির সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে কথা বলি। তাদের জীবনের আকাঙ্ক্ষা কী জানতে চাইলে তারা বলে—কোনো স্বপ্ন নেই। একজন বলেন, তাঁর দিনের সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো অফিস শেষ হওয়ার পর—যখন তিনি ফ্যান ফিকশন লেখেন বা ছোটগল্প পড়েন। তিনি বলেন, “শৈশবে যে ভবিষ্যৎ কল্পনা করতাম, তার কাছাকাছিও নেই এখন।”
নতুন স্নাতকদের অবস্থা আরও কঠিন। চাকরি খোঁজার সময় তাদের নাকি ডিগ্রির সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রশ্ন, অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা—সবই সামলাতে হচ্ছে। পাশাপাশি চাকরির বিজ্ঞাপনও কমে গেছে, কারণ নিয়োগদাতা ও আবেদনকারী দু’পক্ষই এখন আরও বাছাই করা।
এ অবস্থায় “পরিশ্রম = সাফল্য” এই ধারণা ধরে রাখা কঠিন। কিংবা পরিশ্রম করলে সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে—এ বিশ্বাসও দুর্বল হয়ে গেছে। দুঃখজনকভাবে, যারা ইতিমধ্যে ‘সফল’ হয়েছেন, তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না—অগণিত তরুণ কী ধরনের বাস্তব সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, যাদের নাম কোনোদিন শিরোনামেও আসবে না।
ফিবি ঝ্যাং 


















