দুবাইয়ের জেমস স্কুল অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (এসআরআই) এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ৪৭,৬০০ বর্গমিটার জুড়ে নির্মিত এই ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানটি শুধু অবকাঠামোর কারণেই নয়, শিক্ষা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি তাদের অনন্য পরিবেশের জন্যও পরিচিত। এ কারণেই বহুজন একে ‘বিশ্বের সেরা স্কুল’ বলে থাকেন। স্কুলের সিনিয়র শ্রেণির বার্ষিক ফি প্রায় দুই লাখ দিরহাম হলেও খেলাধুলা, পারফর্মিং আর্টস, গবেষণা, উদ্ভাবন ও একাডেমিক উৎকর্ষতার জন্য বৃত্তিও রয়েছে।
পরিবার-বান্ধব পরিবেশ
পরিদর্শন শুরু হয় ‘ফ্যামিলি ফার্স্ট ক্যাফে’ থেকে, যেখানে অভিভাবকেরা অংশ নিচ্ছিলেন একটি নৃত্য সেশনে। এখান থেকেই বোঝা যায়, স্কুলটির প্রয়াস শুধু শিক্ষার্থী নয়—পরিবারকেও শেখার পরিবেশে যুক্ত করা। করিডরের ভেতরে ঢুকতেই দেখা মিলল দুই শিক্ষার্থীর, হাতে প্রোটোটাইপ গাড়ি নিয়ে তারা ছুটছে এআই ল্যাবে। তারা জানাল, তারা সম্পূর্ণ একটি ট্রাফিক সিস্টেম তৈরির কাজ করছে—যেখানে গাড়ির গতিপথ, স্বয়ংক্রিয় চলাচল, সিগন্যাল মানা এবং মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানানো—সবকিছু এআই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
অতুলনীয় এআই ও উদ্ভাবন ল্যাব
বাজ নিঝার, জেমসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (এডুকেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজিটাল ইনোভেশন), আমাদের নিয়ে যান তাদের অত্যাধুনিক এআই ও ইনোভেশন ল্যাবে। এখানে রয়েছে ৩৬০-ডিগ্রি ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং স্পেস, ৩ডি প্রিন্টার, এক্সআর প্রযুক্তি, ভিআর ডেস্কটপ, নিউরোট্র্যাকারের মতো কগনিটিভ ট্রেনিং সিস্টেম (যা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোসহ শীর্ষ অ্যাথলেটরা ব্যবহার করেন), কো-পাইলট পিসি, এআই অ্যাভাটার টুল এবং মানুষের মতো ও পোষাপ্রাণীর মতো রোবট।

এখানকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—শিক্ষার্থীদের শেখাতে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষজ্ঞরা সরাসরি জড়িত। বোস্টন ডায়নামিক্স, কাওয়াসাকি রোবটিক্স, মাইক্রোসফট, দুবাই ফিউচার ল্যাবস, ইউবি-টেক, ভিআর একাডেমি— এসব প্রতিষ্ঠানের পেশাদারেরা নিয়মিত ক্লাস নেন।
কোডিং, গেমিং ও মহাকাশ বিজ্ঞানের অভিজ্ঞতা
পরবর্তী ল্যাবে দেখা গেল প্রায় ২৪টি ল্যাপটপ ও ডেস্কটপে শিক্ষার্থীরা কোডিং এবং দলগতভাবে ভিডিও গেম খেলছে, পেশাদার গেম ডিজাইনারের তত্ত্বাবধানে। এখানে তারা মহাকাশ বিজ্ঞান, ড্রোন প্রযুক্তি, এমনকি নভোচারীদের কাছ থেকেও শিখতে পারে।
নীঝারের ভাষায়, তারা পুরোনো নিয়ম ভেঙে নতুনভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কল্পনা করছে।
ট্রেইলব্লেজার কারিকুলাম
স্কুলটির ‘ট্রেইলব্লেজার কারিকুলাম’ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যামেরা ব্যবহার শেখে। পারফর্মিং ও ক্রিয়েটিভ আর্টসের পরিচালক নিক হান্টিংটন জানান, তাদের লক্ষ্য হলো পডকাস্টিং চ্যানেল, নিজস্ব এসআরআই নিউজ চ্যানেল, এমনকি একটি ফিল্ম একাডেমি গড়ে তোলা।
প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও সিইও জেমস মোনাহান জানান, যুক্তরাজ্যের শীর্ষ প্রাইভেট স্কুল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক এবং সর্বাধুনিক সুবিধা—স্পোর্টস, পারফর্মিং আর্টস, ক্লাসরুম, ডিজাইন, রিসার্চ ও ইনোভেশন—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার ক্ষেত্রে আলাদা সুবিধা পায়।
খেলাধুলায় শক্তিশালী প্রস্তুতি
স্কুলটি হ্যামিলটন অ্যাকোয়াটিকস, ডেজার্ট ভাইপার্স ক্রিকেট, এআইএস অ্যাথলেটিকসসহ শীর্ষ ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। সাবেক অলিম্পিয়ানরাও এখানে সাঁতার ও জিমনাস্টিকস শেখান।

মোনাহান জানান, তাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ক্ষেত্রে সেরা ব্যক্তিদের এনে শিক্ষার্থী প্রোগ্রাম পরিচালনা করা।
স্কুলের খাবারও অত্যন্ত যত্নসহ প্রস্তুত করা হয়। রয়েছে হেড শেফ, নিজস্ব উদ্যানের হার্বস, আর ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ ক্লাব।
সমগ্র শিক্ষায় অগ্রগামী
তৃতীয় শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের CAT4 কগনিটিভ এবিলিটিস টেস্টিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। একই সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী, যেমন অটিজম বা এডিএইচডি–সম্পন্ন শিশুদের জন্যও বিশেষ সহায়তা রয়েছে।
উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, খেলাধুলা ও পারফর্মিং আর্টস—সব বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য সমন্বিতভাবে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে জেমস এসআরআই এমন একটি সমন্বিত, পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যার সঙ্গে বিশ্বের খুব কম স্কুলই তুলনা করতে পারে।
#জেমস স্কুল অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন #পরিবার-বান্ধব পরিবেশ #এআই ও উদ্ভাবন ল্যাব # শিক্ষাব্যবস্থা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















